দীর্ঘ বিরতির পর আবার শুরু হচ্ছে বে-টার্মিনালের কাজ। আশা করা হচ্ছে এ সপ্তাহে একনেক সভায় এ প্রকল্পটির ডিপিপি অনুমোদন দেওয়া হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সহজ হবে সমুদ্রপথের আমদানি-রপ্তানি। কনটেইনার জট কমবে চট্টগ্রাম বন্দরের।
৬ কিলোমিটার দীর্ঘ বে-টার্মিনালের তিনটি অংশের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব জেটি দেড় হাজার মিটার, সিঙ্গাপুর পোর্ট অথরিটি এবং ডিপি ওয়ার্ল্ডের জন্য প্রস্তাবিত জেটির দৈর্ঘ্য হবে ১ হাজার ২২৫ মিটার করে। এ প্রকল্পে সিঙ্গাপুর ও দুবাইয়ের বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়াবে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের একটি সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে। বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়ার সক্ষমতা বাড়াতে বে-টার্মিনালের নির্মাণ দ্রুত শেষ করতে চাই। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের সুযোগ-সুবিধাও বাড়ানো হবে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান এ প্রসঙ্গে বলেন, আশা করা হচ্ছে দ্রুত প্রকল্পটির ডিপিপি অনুমোদন দেওয়া হবে। এরপরই শুরু হবে মূল কর্মযজ্ঞ। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, দেশের অর্থনীতির চিত্র পাল্টে দেবে বে-টার্মিনাল। চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা-হালিশহর এলাকায় সাগর উপকূল ঘেঁষে নির্মিত হচ্ছে এ টার্মিনাল। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম বন্দরে থাকবে না কনটেইনার জট। কেননা, চট্টগ্রাম বন্দরের তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি সুবিধা সৃষ্টি হবে আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে। বাড়বে কর্মসংস্থান। চাঞ্চল্যতা পাবে সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে। এ প্রকল্পের অংশ হিসেবে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে মিরসরাই ন্যাশনাল ইকোনমিক জোন পর্যন্ত যুক্ত হচ্ছে বিস্তৃত সড়ক। এতে পাল্টে যাবে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতের চেহারাও। এ প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে অন্তত ছয় বছর আগে। চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে সংযোগ সড়কসহ অন্যান্য পার্শ্ব অবকাঠামোও (আংশিক) নির্মাণ করা হয়েছে। ২০২২ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও অর্থাভাবে তা সম্ভব হয়নি। অবশেষে প্রাথমিকভাবে দুটি বিদেশি কোম্পানি ও বিশ্বব্যাংক প্রকল্পটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। প্রায় ১০ বছর আগে এ প্রকল্পের প্রাথমিকভাবে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ২১ হাজার কোটি টাকা। মূল্যস্ফীতি, ডলারের দর বৃদ্ধি, সময় ক্ষেপণের কারণে এখন সেটা আরও বেশি হবে। জানা গেছে, বে-টার্মিনাল ঘেঁষেই ট্রাক টার্মিনাল ও ডেলিভারি ইয়ার্ড নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্প এলাকায় এরই মধ্যে বাউন্ডারি ওয়াল এবং সাইট অফিস নির্মাণ করা হয়েছে। নগরীর পতেঙ্গা-হালিশহর এলাকায় সাগর উপকূল ঘেঁষে নির্মিত হচ্ছে বে-টার্মিনাল। এটি চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান অবকাঠামোর চেয়ে প্রায় পাঁচ গুণ বড়। দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরের বর্তমান অবকাঠামোটি ৪৫০ একর ভূমিতে স্থাপিত। চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে সাড়ে ৯ মিটার গভীরতা ও ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যরে বড় জাহাজ প্রবেশ করতে পারে না। ফলে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাপকহারে ব্যাহত হয়। কিন্তু নতুন এ টার্মিনাল নির্মাণ শেষ হলে এতে ভিড়তে পারবে ১২ মিটার গভীরতা ও ২৮০ মিটার পর্যন্ত দৈর্ঘ্যরে জাহাজ। ফলে বন্দরে প্রতি বছর যে পরিমাণ আমদানি-রপ্তানি পণ্য হ্যান্ডলিং হচ্ছে, বে-টার্মিনালে হ্যান্ডলিং হবে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। যার ফলে দেশের আমদানি-রপ্তানির বাণিজ্যের চিত্র পাল্টে দেবে এই বে-টার্মিনাল, মনে করছে সরকার। বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর ৩০-৩২ লাখ কনটেইনার আর ১২-১৫ কোটি টন খোলা পণ্য হ্যান্ডলিং করার সক্ষমতা আছে চট্টগ্রাম বন্দরের। কিন্তু বর্তমান বাজারে প্রায় ৪০ লাখ কনটেইনার এবং প্রায় ২০ কোটি টন খোলা পণ্যের হ্যান্ডলিং চাহিদা আছে ব্যবসায়ীদের। এ চাহিদা প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে। তবে বে-টার্মিনাল নির্মিত হলে প্রতি বছর প্রায় দেড় কোটি কনটেইনার ও প্রায় ৫০ কোটি টন খোলা পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা থাকবে। জানা গেছে, একনেকে ডিপিপি অনুমোদনের পর বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। এরপরই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ পুরোদমে শুরু হবে। অবকাঠামোগত সম্ভাবনার বিশাল এ প্রকল্পটি এতদিন নকশা, অর্থায়ন, ভূমি অধিগ্রহণ ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার জটিলতায় আটকে ছিল।
উল্লেখ্য, প্রকল্পটি প্রথম হাতে নেওয়া হয় ২০১৩ সালে। ২০১৪ সালের জমি বরাদ্দের আবেদন চূড়ান্ত হতে সিডিএর ছাড়পত্র পেতে সময় লাগে প্রায় দেড় বছর। এরপর ২০১৭ সালে মাত্র ৬৭ একর জমি পাওয়া যায়। যদিও পরবর্তী সময়ে আরও ৫০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এখনো ৩০০ একর জমির অপেক্ষায় রয়েছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।