সব গর্ভধারণ নয় মাস (৪০সপ্তাহ) স্থায়ী হয় না। সব ক্ষেত্রে শিশুর জন্মও হয় না৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে গর্ভ নিজে নিজেই নষ্ট হয়ে যায় যাকে বলা হয় গর্ভপাত বা স্বতঃস্ফূর্ত গর্ভপাত৷ সাধারণত স্বতঃস্ফূর্ত গর্ভপাত, কৃত্রিম উপায়ে গর্ভপাত, ওষুধ প্রয়োগে গর্ভপাত, শল্য/যন্ত্র প্রয়োগে গর্ভপাত ইত্যাদি কারণে নষ্ট হয় একটি ভ্রুন, ঝরে যায় একটি জীবন। গর্ভপাত শব্দটি বর্তমান সময়ে আমাদের কাছে অনেক পরিচিত হয়ে উঠলেও অনেক সচেতন মানুষই এ সম্পর্কে জানেন খুবই কম।
আসুন জেনে নেওয়া যাক গর্ভপাত সম্পর্কে অজানা কিছু বিষয়:
১। সারা বিশ্বে গর্ভপাতের হার আপনার ধারনার চেয়েও বেশি। সারা বিশ্বে ১৫% মা গর্ভপাতের শিকার। আপনি যদি মনে করে থাকেন গর্ভপাত একটি দুর্ঘটনা তবে অবশ্যই ভুল করবেন, গর্ভপাত অনেক সময় প্রাকৃতিক কারণেও হয়ে থাকে।
২। গর্ভধারণের শুরুর দিকেই গর্ভপাত ঘটার সম্ভাবনা বেশি। এ কারণে একজন মায়ের গর্ভধারণের শুরুর দিকে সব সময় সাবধান থাকা উচিৎ। সাধারণত ডাক্তাররা হবু বাবা-মা কে ২০ সপ্তাহের আগে প্রেগন্যান্সির খবর সবাইকে না বলার জন্য উপদেশ দিয়ে থাকেন। এমনকি গ্রামেও এটি চিরাচরিত প্রথা হিসেবে প্রচলিত। যেহেতু গর্ভধারণের ১২ সপ্তাহের মধ্যেই গর্ভপাত হবার আশংকা বেশি থাকে তাই সামাজিক জটিলতা এড়াতে বিষয়টি একটু দেরীতে বলাই উত্তম।
৩। গর্ভপাত হয়ে যেতে পারে আপনার অজান্তেই। গর্ভধারণের প্রথম ১০ দিনের মাথায়ই আপনার অজান্তেই মিসক্যারেজ হয়ে যেতে পারে। রক্তপাত এর একটা খুব সাধারণ লক্ষণ। নারীরা প্রায়শঃ একে পিরিয়ড ভেবে ভুল করে থাকেন। তাই যদি কখনো অতিরিক্ত রক্তপাত হয়, তবে ঝুঁকি না নিয়ে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। তাতে গর্ভপাত ঠেকাতে না পারলেও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা ও সংক্রমণ এড়াতে পারবেন।
৪। গর্ভপাতে মায়ের কোন দোষ নেই। আমাদের সমাজে একটি ধারণা রয়েছে মায়ের অসাবধানতায় অকাল গর্ভপাত ঘটে কিন্তু এটি একটি ভুল ধারণা। আসলে এটি হয় মূলত ভ্রুণের অস্বাভাবিকতার কারণে। এটা আগে থেকে নির্ণয় করা কঠিন আর এতে মায়ের কোন দোষ নেই।
৫। বয়স্ক মহিলাদের ক্ষেত্রে গর্ভপাতের ঝুঁকি বেশি। আপনি যদি একটু বয়স্ক হয়ে থাকেন তবে আপনাকে একটু বেশি সাবধান হতেই হবে। মনে রাখতে হবে ডিম্বানুর বয়সের কারণে জিনগত অস্বাভাবিকতার হার বেড়ে যায় যা গর্ভপাত ঘটার অন্যতম কারণ।
৬। গর্ভপাতের সঙ্গে যৌনতার কোন সম্পর্ক নেই। আপনার যৌন জীবন, ব্যায়াম বা নিয়মিত হালকা কাজের সাথে অকাল গর্ভপাতের তেমন কোন সম্পর্কে নেই। তবে একটু সাবধান থাকা ভালো। কারণ, গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসে আনপ্রোটেকডেট সেক্স করলে গর্ভপাতের হার বাড়ে।
৭। গর্ভপাত একাধিকবার হতে পারে। মনে রাখতে হবে একজন নারীর জীবনে কেবল একবারই গর্ভপাত হবে তা কিন্তু নয়! একবার গর্ভপাত হলে আরো গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই গর্ভপাত একবার হলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
৮। ফার্টিলিটির চিকিৎসা গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। যাদের সন্তান হচ্ছে না মনে করে অতি আগ্রহী হয়ে বিশেষ চিকিৎসা গ্রহণ করে থাকেন তাদের ক্ষেত্রে গর্ভপাতের সম্ভাবনা অনেক বেশি। সন্তান ধারণের জন্যে বেশি বয়সে ফার্টিলিটির চিকিৎসা ও ঔষধ সেবনের কারণেও গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
৯। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ধূমপান গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই নিজে ধূমপান তো করবেনই না এবং কোন ধূমপায়ীর আশেপাশে থাকা থেকে বিরত থাকুন।
১০। অতিরিক্ত ওজনের কারণে অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যাপর পাশাপাশি হতে পারে গর্ভপাত। ডায়াবেটিস যেমন অতিরিক্ত ওজনের কারণে হতে পারে। তেমনি অতিরিক্ত ও্জন গর্ভপাতেরও অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
গর্ভপাতের অভিজ্ঞতা যেকোন নারীর ক্ষেত্রেই একটি দুঃখজনক বিষয়। তাই সাবধান থাকুন, সুস্থ থাকুন, সুস্থ রাখুন আপনার অনাগত অতিথিকে।