ঋতু পরিবর্তনের সময় অনেকেই সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হন। কেউ বা সামান্য বৃষ্টির পানিতে ভিজলে বা গায়ে ঘাম শুকালেই দৌঁড়াতে হয় ওষুধের দোকানে। টিস্যু পেপার তো হয় সর্বক্ষণের সঙ্গী। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না যে, সস্তা মৌসুমি ফল আর সবজি দৈনন্দিন খাবার তালিকায় রেখে অতি সহজেই এই সর্দি-কাশিকে আমরা দূরে রাখতে পারি। মুক্তি পেতে পারি অনেক জটিল রোগ থেকেও।
আজ এমনই একটি ফল নিয়ে আলোচনা করব যা নিয়মিত খেলে সর্দি-কাশি এমনিতেই ১০০ গজ দূরত্ব বজায় রাখবে। ফলটির নাম কামরাঙ্গা। চিরসবুজ ছোট মাঝারি আকৃতির গাছের টকমিষ্টি ফল। বৈজ্ঞানিক নাম অ্যাভেরিহা ক্যারামবোলা। ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ এবং পাকলে হলুদাভ সবুজ। কামরাঙ্গা টক স্বাদযুক্ত বা টকমিষ্টি হতে পারে। সর্দি-কাশি থেকে মুক্তি পেতে এখন প্রতিদিনই কমবেশি কামরাঙ্গা খেতে পারেন। এটি ভিটামিন এ ও সি এর ভাল উৎস। আগস্ট থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত এ ফল বাজারে মোটামুটি সস্তায়ই পাওয়া যায়। এরপর মৌসুম চলে গেলে বিভিন্ন মেগা সপে একটু বেশি দাম দিলে মিলবে হিমায়িত (ফ্রিজে রাখা) কামরাঙ্গা্। পুষ্টি চাহিদা মেটাতে কামরাঙ্গা একটি আদর্শ ফল।
পুষ্টিগুণ: প্রতি একশ গ্রাম কামরাঙ্গায় শক্তি মেলে ৩১ কিলোক্যালরি। শর্করা ৬.৭৩ গ্রাম, চিনি ৩.৯৮ গ্রাম, খাদ্য ফাইবার ২.৮ গ্রাম, স্নেহ ০.৩৩ গ্রাম, প্রোটিন ১.০৪ গ্রাম, প্যানটোথেনিক অ্যাসিড (বি৫) ০.৩৯ মিলিগ্রাম, ফোলেট (বি৯) ১২ μg, ভিটামিন সি ৩৪.৪ মিলিগ্রাম ছাড়াও কামরাঙ্গায় পাওয়া যাবে ভিটামিন এ, ফসফরাস, পটাশিয়াম ও দস্তা।
ঔষধিগুণ: কামরাঙ্গার ঔষধিগুণও বিস্ময়কর। সুস্বাস্থ্যের জন্য খাদ্য তালিকায় কামরাঙ্গা রাখতে পারেন প্রতিদিন।
অন্ত্রের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: কামরাঙ্গা রুচি ও হজমশক্তি বাড়ায়। পেটের ব্যথায় কামরাঙ্গা খুব উপকারি। কামরাঙ্গায় আছে এলজিক এসিড। এটি অন্ত্রের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
রক্ত পরিষ্কারক: কামরাঙ্গা রক্ত পরিশোধন করে।
সর্দিকাশিতে উপকারি: কামরাঙ্গা পুড়িয়ে ভর্তা করে খেলে ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে। দীর্ঘদিনের জমাট সর্দি বের করে দিয়ে কাশি উপশম করে। শুকনো কামরাঙ্গা জ্বরের জন্য খুব উপকারি।
কৃমিনাশক: কামরাঙ্গা পাতা ও ডগার গুঁড়া খেলে জলবসন্ত ও বক্রকৃমি নিরাময় হয়। কৃমির সমস্যা সমাধানে কামরাঙ্গা ফলও উপকারি। কামরাঙ্গার রসের সাথে নিমপাতা মিশিয়ে খেলে কৃমি দূর হয়।
অর্শ রোগে উপকারি: ২ গ্রাম পরিমাণ শুকনো কামরাঙ্গার গুঁড়া পানির সঙ্গে রোজ একবার করে খেলে অর্শ রোগে উপকার পাওয়া যায়। আর বাতের ব্যথায়ও কামরাঙ্গা বেশ উপকারি।
সতর্কতা: কামরাঙ্গা উপকারি ফল হলেও কিডনি রোগীদের জন্য এটি আবার বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। কামরাঙ্গায় রয়েছে অক্সিলিক এসিড ও নিউরো টক্সিন নামক দুইটি উপাদান। কিডনি রোগীরা এই উপাদান দু'টি পরিশোধন করে মুত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দিতে পারে না। এতে ভয়াবহ বিপদ সামনে হাজির হতে পারে। অকাল মৃত্যুর মতো বিষয়ও সামনে হাজির হতে পারে।
সূত্র: বিভিন্ন হেলথ জার্নাল
বিডি-প্রতিদিন/২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৪/রাসেল/আহমেদ