শীতকালে সর্দি-কাশির ঝামেলাটা একটু বেশিই থাকে। আর এ সময়টা শিশুদের জন্য একটু বাড়তি ঝুঁকিও নিয়ে আসে। বড়দের শরীর যতটা সহ্যক্ষমতা সম্পন্ন, শিশুদের তা নেই। তাই দরকার হয়ে পড়ে বাড়তি যত্ন। বেড়ে যায় সর্দি-কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়ার আশঙ্কা।
এসময় রাস্তায় ধুলাবালির আধিক্য, পরিবেশগত কারণ, গাড়ির ধোঁয়া, বাসার কারো ধূমপানের অভ্যাস থাকলে তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে আপনার আদরের সোনামনি। তাই শীতকালে শিশুর যত্নে কিছু বিষয় জানা থাকা খুবই জরুরি।
ঠাণ্ডা লাগলে যা করবেন
শিশুর বয়স ছয় মাসের কম হলে তাকে বারবার বুকের দুধ খাওয়ান। বয়স ছয় মাসের বেশি হলে অল্প করে পানি, তরল ও নরম খাবার বারবার খাওয়ান। একটু লেবুর সরবত, আদার রস, তুলসীপাতার রস কিংবা মধু খাওয়াতে পারেন। শিশুকে ঘরে তৈরি খাবার দিন, খুব বেশি সমস্যা না হলে বাইরের কোনো কাশির ওষুধ না দেওয়াই ভালো। সঙ্গে জ্বর ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খাওয়াতে হবে। কুসুম গরম পানি দিয়ে শরীর মুছে দিন। সর্দির কারণে নাক বন্ধ হয়ে গেলে বা নাক দিয়ে শব্দ হলেও খুব চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। এক্ষেত্রে নরম কাপড় দিয়ে বার বার নাকটা পরিষ্কার করে দিন।
নিউমোনিয়ায় যা করবেন
শীতকালে শিশুর নিউমোনিয়া হওয়ার ঝুঁকিটা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। ঠাণ্ডা লাগার সাধারণ লক্ষণগুলোর সঙ্গে শিশু দ্রুত, ঘন ঘন শ্বাস নেয় এবং বুকের পাঁজর ভেতরের দিকে ঢুকে যায়। তাই ঠাণ্ডা লাগলে শিশুর বুকের দিকে খেয়াল রাখুন। এছাড়া শিশু নিস্তেজ হয়ে পড়ে। খাওয়া বন্ধ করে দেয়। জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি থাকে, অতিরিক্ত কাশির কারণে ঘুমাতে পারে না। শিশু যা খায়, তার সবই বমি করে দেয়। এমন হলে হাসপাতালে নিয়ে যান অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
টনসিলের সমস্যায় যা করবেন
জিহ্বায় ক্ষত বা ফাটা, গন্ধযুক্ত শ্বাস-প্রশ্বাস, স্বরভঙ্গ, গলায় ঘাসহ টনসিল বড় হওয়া, ঢোক গিলতে কষ্ট হওয়া, মাথা ব্যথা, মুখের স্বাদ নষ্ট হয়ে যাওয়া, খক খক করে গলা পরিষ্কার করা, গলা ও কানে ব্যথা হওয়া, গলা ফুলে যাওয়া- এ সবই টনসিলের সমস্যার লক্ষণ। এসময় গলায় গরম কাপড় বেধে দিতে হবে। গরম পানির মধ্যে লবন দিয়ে গড়গড়া করাতে হবে। সঙ্গে গরম পানি খেতে দিন। বেশি সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
তবে অসুস্থ হওয়ার আগে প্রতিরোধ করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। আগে থেকে সাবধান হলে শিশুকে এসব সমস্যা থেকে অনেকটাই দূরে রাখা সম্ভব। অসুস্থ হওয়ার আগের সচেতনতা:
– ঠাণ্ডায় বেশি সময় বাচ্চাকে রাখা যাবে না। খুব সকালে বা রাতে ঠাণ্ডা খাবার দেওয়া যাবে না।
– ঘরে গরম কাপড় পরিয়ে রাখুন।
– গলাব্যথায় লবণ-পানি দিয়ে গড়গড়া করান।
– কাশি বেশি হলে এক চামচ মধুর সঙ্গে সামান্য লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়ান।
– শীত আসার আগে থেকেই গরম পানি খাওয়ানোর অভ্যাস করুন।
– সুস্থ বাচ্চাকেও প্রতিদিন ১ চামচ মধু খাওয়ান যাতে ঠাণ্ডা না লাগে।
– ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা থাকা জরুরি। তবে ভোরে বা সন্ধ্যার পর ঠাণ্ডা বাতাস ঢুকতে না দেওয়াই শ্রেয়।
– যাদের ঘরে নবজাতক আছে তাদের এ সময় সাবধানতা অবলম্বণ করা দরকার, নবজাতকের ত্বক, শরীরের বিভিন্ন অংশ ও স্পর্শকাতর প্রত্যঙ্গ সহজে বেশি গরম বা বেশি ঠাণ্ডা সইতে পারে না। তাই শীতের হিমেল বাতাস, অতিরিক্ত ধুলাবালি যাতে আক্রমণ করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া শিশুকে বাইরে নেওয়া উচিত না।
বিডি-প্রতিদিন/১৬ জানুয়ারি ২০১৫/আহমেদ