'আহা আজি এ বসন্তে.......' গানের সুরমূর্ছনায় প্রাণের সব বাধনগুলো যেন আলগা হয়ে গেছে। গাছে গাছে নতুন পল্লব, রঙিন শিমুলের হাতছানি। দূর থেকে ভেসে আসা কুহু.....কুহু.....কোকিলের গান। সব মিলে বসন্তের প্রথম সূর্যটা যেন আজ স্নিগ্ধ সোনা রোদে সব জঞ্জাল ধুয়ে দিয়ে নতুন প্রাণের বার্তা নিয়ে হাজির হয়েছে।
শুক্রবার ছুটির দিনের সকাল। হালকা শীত শীত আমেজে হয়তো এখনও ঘুম কাটিয়ে বিছানা ছাড়েননি অনেক নগরবাসী। কিন্তু তাতে কী-ই বা আসে যায়! প্রাণের টানে বসন্তপ্রিয় মানুষেরা ঠিকই ছুটে এসেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলায়। সেখানে এখন ভেসে বেড়াচ্ছে সঙ্গীতের সুমধুর সুর। শিশু, কিশোর, তরুণ-তরুণীর রঙিন সাজে নেচে গেয়ে বসন্তকে বরণ করে নেওয়ার আয়োজন। বকুলবৃক্ষের পাতার ফাঁক গলে মঞ্চে ঝরে পড়ছে সকালের স্নিগ্ধ কাঁচা রোদ। চারপাশে বাসন্তী রঙয়ের শাড়ি, ফতুয়া, পাঞ্জাবি আর মাথায় কাঁচা ফুলে খোপা ঢাকা ললনাদের কলহাস্য। এ যেন অন্য এক পরিবেশ। স্বপ্নের কোন রাজ্য। এমন সুন্দর ও নয়নজুড়ানো দৃশ্যের নেপথ্যে যে ঋতুরাজ বসন্ত। তাকে ঘিরেই যে এত আয়োজন। এত প্রাণ। এত ধ্বনি। স্বাগতম ঋতুরাজ। স্বাগতম ফাল্গুন। স্বাগতম হে বসন্ত।
শুক্রবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাতটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলায় বসন্তরাগ গাওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় বসন্ত উৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা। বসন্ত উৎসব আয়োজনের দায়িত্বে রয়েছে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষৎ। অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব চলবে সকাল সাড়ে নয়টা পর্যন্ত। এরপর সাড়ে নয়টায় চারুকলা থেকে বের করা হবে "বসন্ত শোভাযাত্রা"। একইস্থানে বিকেলে শুরু হবে বসন্তবরণ উৎসবের দ্বিতীয় পর্ব।
এছাড়া উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের উন্মুক্ত মঞ্চে, পুরান ঢাকার বাহাদুরশাহ পার্ক ও লক্ষ্মীবাজার এবং ধানমণ্ডির রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চে রয়েছে বাসন্তি আয়োজন।
জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদের দিনব্যাপী কর্মসূচিতে আরো আছে প্রীতিবন্ধন বিনিময়, বসন্তকথন পর্ব ও আবির উৎসব।
ইতিহাসের পাতা ওল্টালে, ১৯৫০ থেকে ১৯৬০ সাল থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে পহেলা ফাল্গুন পালন শুরু হয়। সেসময় পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ পশ্চিম পাকিস্তানের সংস্কৃতি থেকে নিজেদের আলাদা করতে রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনার পাশাপাশি বাঙালি নিয়মে পহেলা ফাল্গুন পালন শুরু করে। ১৯৬০ সালে পশ্চিম পাকিস্তান সরকার রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। তাতে দমে যায়নি বাঙালি। দেশ স্বাধীনের আগেও এদেশে পালন হয়ে এসেছে পহেলা ফাল্গুন। আজ পর্যন্ত বাঙালির অন্যতম একটি উৎসব পহেলা ফাল্গুন।
বিডি-প্রতিদিন/১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫/ এস আহমেদ