ব্যবসায়ী আবদুল আজিজ। পরিবারের সব সদস্যদের নিয়ে আসলেন টেরিবাজারের একটি শপিংমলে। দুপুরে ঢুকে বের হলেন বিকাল চারটায়। এক ছাদের নিচে বসেই পরিবারের সকলের চাহিদা মতে ঈদের সব পণ্য ক্রয় করলেন। সন্তুষ্টির গলায় বললেন, রমজানের সময় এক পণ্যের জন্য এক দোকানে যাওয়াটা অনেক কঠিন। তাই এক শপিংমলে বসেই পরিবারের সবার জন্য ঈদবাজার সেরে ফেললাম।
চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী টেরিবাজার এখন নতুন রূপ পরিগ্রহ করেছে। বড় পরিসর নিয়ে গড়ে উঠেছে অন্তত ৩০টি দোকান। যেসব দোকানে পাওয়া যাচ্ছে পরিবারের সব বয়সী সদস্যের পণ্য। ক্রেতারাও ভোগান্তি কমাতে এক দোকানে বসেই ক্রয় করে ফেলছেন সব বাজার। পাইকারি ও থান কাপড়ের ঐতিহ্যকে ছাপিয়ে এখন নতুন পরিচয় ধারণ করেছে।
এক দশক আগেও টেরিবাজারের রূপ এমন ছিল না। কিন্তু গত প্রায় অর্ধযুগ ধরে এখানে আস্তে আস্তে গড়ে উঠে বড় পরিসরের শপিংমল। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এসব শপিংমল ক্রেতার চাহিদাও পূরণ করছে। আধুনিকভাবে গড়ে উঠা আধুনিক শপিং মলের মধ্যে আছে- মাসুম ক্লথ স্টোর, সানা ফ্যাশন মল, রাজপরী শপিং মল, জাবেদ ক্লথ স্টোর, মনে রেখ, শাড়ি কালেকশন, পরশমনি, বৈঠক বাজার, মৌচাক, মোহাম্মদীয়া শপিং, বধূয়া, জারা, রাজস্থান, বড় বাজার, আল ফয়সাল, রূপন্ত, নবারুন, আলমগীর ব্রাদার্স, জিম টেক্সটাইল, রাফি, এম্পোরিয়াম, মদিনা শপিং, বাসাবী, আলপনা প্লাস, স্টার প্লাস, কালার প্লাস, তাজমহল, নিউ আজমীর, মেগামার্ট, রাজস্থান, কিংস ফ্যাশন।
টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান বলেন, টেরিবাজারে মোট ৮২টি মার্কেটে প্রায় তিন হাজার দোকান আছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দোকানগুলোতে ক্রয়বিক্রয় চলছে। মূলত শবেবরাতের পর থেকেই ক্রেতার ভিড় শুরু হয়। এবারো গ্রাহকরা শান্তিশৃক্সখলাাবে ঈদের কেনাকাটা করছেন। ক্রেতাদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছেন পুরুষ ও মহিলা পুলিশ। সঙ্গে আছে আমাদের নিজস্ব ৩০ জন নিরাপত্তকর্মী। তাছাড়া যানজট নিরসনেও নিজস্ব কর্মীরা কাজ করছেন।
কিংস ফ্যাশনের মালিক মো. কাইসার বলেন, এই পাইকারি বাজারের ওপর সাধারণ ক্রেতারা আস্থাশীল। এখানে এক দোকান থেকে ঈদের সব বাজার করার সুযোগ আছে। এতে ক্রেতাদের দুর্ভোগ কমে।
টেরিবাজারে ঘুরে দেখা যায়, এক দোকানেই পাওয়া যাচ্ছে শাড়ি, থ্রি পিস, সালোয়ার-কামিজ, পাঞ্জাবি, শিশু পোশাক, জুতা, প্রসাধনী। আছে ডিজিটাল প্রিন্ট, লিলেন, জামদানি, কাতান, কটন, নেট, জর্জেট, শিফন প্রভৃতি থান কাপড়। এসব কাপড়ের দাম মানভেদে প্রতি গজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত। আছে, দেশি বুটিকসের থ্রিপিস, দিল্লি বুটিকস, সানাসাফিনাস, বোম্বাই বুটিকস, তাওয়াক্কেল বুটিকস, মুটিস, ক্রিসেন্টসহ ভারতীয় ও পাকিস্তানি বাহারি ডিজাইনের সেলাইবিহীন থ্রিপিস। এসব থ্রিপিসের দাম মানভেদে ১২০০ টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। এবার বাজারে চাহিদা বেড়েছে বর্ণিল ডিজাইনের ক্যাটালগ পাঞ্জাবির। হাতা প্রিন্ট ও এক রঙের বডিযুক্ত ডিজাইনের পাঞ্জাবির ১২০০ থেকে ৩৫০০ টাকা পর্যন্ত। মানভেদে তাঁতের শাড়ি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকায়। দেশি সুতির শাড়ি ৩০০-৮০০ টাকা, ঢাকাই জামদানি ১৫০০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। বিভিন্ন ডিজাইনের জর্জেট শাড়ি দুই হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা। লেহেঙ্গা পাঁচ হাজার টাকা থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
বিডি-প্রতিদিন/ ১৬ জুন, ২০১৬/ আফরোজ