'প্রতিদিন ভোর হতেই কাজের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন দুই বোন। ফেরেন গভীর রাতে। মা ততক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছেন। তাই আর বৃদ্ধা মাকে অহেতুক ডেকে বিরক্ত না করে খেয়ে-দেয়ে বিছানার দিকে পা বাড়ান মেয়ে দু'টি। ব্যস্ত জীবনে একই রুটিনে পার হতে থাকে দিনের পর দিন। মাকে আর ডাকা হয় না। অবশেষে দীর্ঘ আট মাস পর মেয়েরা আবিষ্কার করলেন তাদের মা আর বেঁচে নেই। মায়ের প্রাণপাখি কখন যে খাঁচা ছেড়ে বেরিয়ে গেছে তা আর দেখার সময় হয়নি দুই মেয়ের। মা মরে ছিলেন নিজের ঘরে, কম্বলের তলায়। যখন জানতে পারলেন ততদিনে মায়ের মৃতদেহ কঙ্কাল হয়ে গেছে।'
অবিশ্বাস্য হলেও বুধবার এমনই এক খবর প্রকাশ করেছে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশ কুয়েতের স্থানীয় দৈনিক আল ওয়াতন।
ঘটনাটি প্রকাশিত হওয়ার পর দেশ জুড়ে আলোড়ন তৈরি হয়েছে। আল ওয়াতনের অনলাইন বহু পাঠক নানা মন্তব্য করেছেন। তাদের অধিকাংশই দায়িত্বজ্ঞানহীনতা এবং মায়ের প্রতি অবহেলার জন্য মেয়েদের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তবে কেউ কেউ খবরের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছেন, ‘একটি মুরগী মরলেও তো মানুষ তার গন্ধ পায়। আর তোমরা নিজেদের মায়ের লাশের গন্ধ পেলে না, এটা কীভাবে সম্ভব?’
সেলিম নামের এক পাঠকের মন্তব্য-‘ধরে নিলাম ওই মেয়ে দুটি মানসিকভাবে সুস্থ নয়। আমি নিশ্চিত যে, বৃদ্ধার অবশ্যই কোনো না কোনো আত্মীয় ছিল। গত আট মাসে তাদের কেউ কি সেখানে যায়নি বৃদ্ধির খোঁজ নিতে?’
সত্য-মিথ্যা যাই হোক, আল ওয়াতন কিন্তু কর্তৃপক্ষের মন্তব্য দিয়েই খবরটি প্রকাশ করেছে। খবরে বলা হয়, মা ও দুই মেয়ে একই ফ্লাটের ভিন্ন কামরায় থাকতেন। তদন্তকারী কর্মকর্তাদের মেয়েরা জানান, তারা প্রতিদিন সকালে খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে যেতেন। ফিরতেন রাতে। ফিরে দেখতেন মা কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে আছেন। তারা মনে করতেন, তারা বেরিয়ে যাওয়ার পর তাদের মা ঘুম থেকে উঠে খাওয়া দাওয়া এবং প্রয়োজনীয় কাজকর্ম করেন। তারা বাড়ি ফেরার আগেই আবার তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। এভাবেই কাটছিল তাদের দিন। এরই মধ্যে কবে যে মায়ের প্রাণপাখি বেরিয়ে গেছে তা জানার সুযোগটিও হয়নি তাদের। দীর্ঘ আট মাস পর দুই মেয়ে আবিষ্কার করেন, মা মরে কঙ্কাল হয়ে আছেন। এরপর তারা পুলিশকে খবর দেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানা গেছে বৃদ্ধা আট মাস আগেই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গেছেন।
তবে এ ঘটনায় পুলিশ কাউকে অভিযুক্ত করেনি। কেননা ওই বৃদ্ধার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বলে তারা নিশ্চিত হয়েছেন।