নগদ টাকার সঙ্গে লক্ষাধিক টাকার মূল্যবান সামগ্রী চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় ঘরের মালিকদের জন্য ১০০ টাকা রেখে গেল চোর! চৌর্যবৃত্তির এমন নজিরে হতবাক গৃহকর্ত্রী, পাড়ার লোক। ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের হাওড়ায়।
বিছানার উপরে গহনার খালি বাক্সের দিকে তাকিয়ে হাওড়ার দালালপুকুরের মহেন্দ্র ভট্টাচার্য রোডের বাসিন্দা নন্দা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ''আমার সব শেষ হয়ে গেছে। বাজার করার টাকাও নেই। হয়তো বাজার করার জন্য ১০০ টাকা রেখে গেছে চোর!''
হাওড়ার ওই গৃহকর্ত্রী পেশায় আইনজীবী। বড় ছেলেও আইনজীবী। স্বামী অশোক সাঁতরার আছে কারখানা। সহায়-সম্বল মোটামুটি কম নয়। গত ২২ ডিসেম্বর ছোট ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে গুজরাট ভ্রমণে গিয়েছিলেন নন্দা। অসুস্থতার কারণে স্বামী সঙ্গে যাননি। এই ক'দিন বালটিকুরির আদি বাড়িতে ছিলেন অশোক। রবিবার সকালে গুজরাট থেকে বাড়ি ফেরেন নন্দা। বাড়ির সদর দরজা বাইরে থেকে তালা বন্ধ ছিল। তাই প্রথমে কিছু আঁচ করতে পারেননি তিনি। তবে তালা খুলতেই চক্ষু চড়কগাছ! সারা ঘর লন্ডভন্ড। শোবার ঘরের বক্স খাট, আলমারি ভাঙা। ঘরের মেঝে এবং বিছানার উপরে গহনার বাক্স, শাড়ি, জামা-কাপড় ছন্নছাড়া অবস্থায় পড়ে আছে। এরই মধ্যে টেবিলের উপর রাখা দু'টি ৫০ টাকার নোট। গৃহকর্ত্রীর দাবি, ওই ৫০ টাকার নোট দু'টি বাড়িতে ছিলই না!
প্রতিবেশীদের কেউ কেউ বলছেন চোরের মনে বোধহয় একটু দয়া হয়েছিল, তাই বাজার করার জন্য এটা রেখে গেছে। কেউ বলছেন, নিছকই 'রসিকতা'। একধাপ এগিয়ে কারও আবার মন্তব্য, ''ঘর সাফ করে দেওয়ার পরে এভাবে টাকা রেখে যাওয়াটা প্রতীকীও হতে পারে!''
নন্দার বক্তব্য, চুরির ধরণ দেখে মনে হচ্ছে বাড়ি ঢোকার রাস্তা, তিনি কোথায় কী রাখেন— সবই ছিল চোরের নখদর্পণে। সদর দরজা বন্ধ থাকলেও পিছনের দিকের দরজা ভাঙা ছিল। দোতলার দরজাও ভাঙা হয়েছে। একতলার শোওয়ার ঘরের বক্স খাট ভেঙে লুট করা হয়েছে মূল্যবান সামগ্রী। আলমারির দেরাজ খুলে দেখা যায়, লক্ষ লক্ষ টাকার গহনার কিছুই নেই। নগদ টাকার পাশাপাশি চারটি এটিএম কার্ডের হদিস মিলছে না।
চুরির খবর পেয়ে এদিন ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, পরিচিত লোকেরাই এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। নন্দা পুলিশকে জানিয়েছেন, বেশি টাকা পারিশ্রমিক চাওয়ায় কয়েকমাস আগে বাড়ির পরিচারিকাকে ছাড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি।
ওই পরিচারিকা পুলিশের সন্দেহের তালিকায় রয়েছে।
মহেন্দ্র ভট্টাচার্য রোড এলাকাটি ঘনবসতিপূর্ণ। সেখানে এই ধরনের ঘটনায় আতঙ্কিত এলাকাবাসী। একইসঙ্গে এলাকার নিরাপত্তা নিয়েও সরব হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। এদিন হাওড়ার পুলিশ কমিশনার দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহ বলেন, ''চুরির ঘটনায় অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হবে। আঙুলের ছাপ পরীক্ষা করা হবে।''
বিডি-প্রতিদিন/০৪ জানুয়ারি ২০১৬/ এস আহমেদ