প্রাণীজগতে টিকে থাকতে তথা শিকারীর হাত থেকে বাঁচতে ভিন্ন রূপ ধারণ করতে সক্ষম অদ্ভুত এক মাকড়সার সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বিস্ময়কর ক্ষমতা সম্পন্ন এই মাকড়সা স্রেফ চোখের সামনেও হারিয়ে থাকে। এরাই একমাত্র মাকড়সার প্রজাতি যাদের দেহ শুকনো পাতার মতো দেখতে। এটা নিমিষেই একটা ঝুলন্ত মরা শুকনো পাতা হয়ে গাছে ঝুলতে পারে।
সম্প্রতি নতুন এক গবেষণায় এই মাকড়সার কথা তুলে আনা হয়েছে। তবে এর বিস্তারিত বর্ণনা এখনো দেওয়া হয়নি। প্রজাতির নামকরণও হয়নি।
নতুন এই মাকড়সাটি অর্ব স্পাইডার পরিবারের পল্টিস জেনাস। এই পরিবারে রয়েছে ৩ হাজার প্রজাতির আট পায়ের কীট। ছদ্মবেশ ধারণ অন্যান্য কীট-পতঙ্গের মধ্যে দেখা যায়। তবে সাধারণত মাকড়সার মধ্যে দেখা যায় না। অনেক কীট-পতঙ্গের দেহ গাছ-পালার মতো দেখতে হয়। যেমন- ফাজমাটোডিয়া গোত্রে রয়েছে শত শত প্রজাতির প্রাণী যাদের 'স্টিক ইনসেক্টস' বলে ডাকা হয়। এদের উদ্ভিদের ডাল-পালা বা পাতার মতো দেখা যায়। আবার উজ্জ্বল রংয়ের অর্কিড মেন্টিসের রয়েছে পাঁপড়ির মতো পা। এর ব্যবহারে তারা নিজেদের ফুলের মতো সাজ দেয়।
এই মাকড়সাটিকে প্রথম দেখা গেলো যার চেহারা পাতার মতো। বলা যায়, দুর্ঘটনাক্রমে এর আবিষ্কার ঘটে গেছে। প্রধান গবেষক এবং স্লোভেনিয়ান একাডেমি অব সায়েন্সেস অ্যান্ড আর্টসের সায়েন্টিফিক রিসার্চ সেন্টারের গবেষক ম্যাটিজার কান্টনার এসব কথা জানান।
২০১১ সালে এই অস্বাভাবিক মাকড়সার ছবি তোলেন বিজ্ঞানীরা। তারা চীনের ইউনানে বিভিন্ন ধরনের মাকড়সার ছবি তোলার চেষ্টা করছিলেন। হঠাৎ করে এর দেখা পান তারা। এর চারদিকে মরা পাতা ছিল। মাকড়সাটি এরই মাঝেই ছিল। তার আশপাশে কোনো জালও ছিল না। এর পেছনটা সবুজ পাতার মতো দেখাচ্ছিল। আর নিচের দিকটা ছিল বাদামি রংয়ের। তবে এর পেটের অংশটা লোমশ দেখা যাচ্ছিল। স্ত্রী প্রজাতির মাকড়সাটি গাছের ডালে আটকে ছিল তার সিল্কের মাধ্যমে। আশপাশের পাতাগুলোতে হালকাভাবে তার সিল্ক লেগেছিল। দেখে মনে হচ্ছিল, সে তার চারপাশে এগুলো নিজেই সাজিয়েছে।
এরপর আরও ২ সপ্তাহ খোঁজার পর কান্টনার এবং তার সহকর্মীরা আরেকটি এমন মাকড়সার সন্ধান পান। এটা কম বয়সী পুরুষ প্রজাতির।
কান্টনার বলেন, প্রকৃতিতে এদের বিরল উপস্থিতি সত্যিই চিন্তার বিষয়। এর মতোই একটি মাকড়সা ভিয়েতনামে পাওয়া যায়। কিন্তু বিজ্ঞানীদের মতে, ভিয়েতনাম স্পাইডার পল্টিস জেনাস গোত্রের একটি চিহ্নিত প্রজাতি।
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই মাকড়সার লুকিয়ে পড়া ও বেঁচে থাকার এই অদ্ভুত ক্ষমতার কারণেই হয়তো তারা এখনো টিকে আছে এবং প্রকৃতিতে তাদের চোখেই পড়ে না।
বিডি প্রতিদিন/ ২১ নভেম্বর ২০১৬/ এনায়েত করিম-৩