বিশ্বের সবচেয়ে বড় অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সির মধ্যে অন্যতম চীনের ট্রিপ ডটকম। প্রতিষ্ঠানটি তাদের ৩২ হাজার কর্মীকে সন্তান জন্মদানে উৎসাহ দিতে ১৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার বোনাস দিচ্ছে। অন্তত তিন বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটিতে চাকরি করা কর্মীরা প্রতিবছর প্রতিটি নবজাতকের জন্য ১ হাজার ৩৭৬ মার্কিন ডলার করে বোনাস পাবেন। সন্তানের প্রথম জন্মদিন থেকে পাঁচ বছর বয়সে না পৌঁছানো পর্যন্ত এই বোনাস পাবেন কর্মীরা। আজ শনিবার থেকে এই নীতি কার্যকর হবে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, চীন বর্তমানে জনসংখ্যা–সংকটের মুখোমুখি হয়ে আছে। গত বছর চীনের জনসংখ্যা গত ৬০ বছরের বেশি সময়ের মধ্যে প্রথমবারের মতো কমে গিয়েছিল। এই সময় দেশটিতে প্রতি এক হাজার জনে মাত্র ৬ দশমিক ৭৭ জন সন্তান জন্ম দিতেন, যা ১৯৪৯ সালে কমিউনিস্ট চীন প্রতিষ্ঠার পর থেকে সর্বনিম্ন জন্মহার। দেশটি এখন ভারত থেকে এক ধাপ পিছিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল দেশ।
২০১৫ সালে বেইজিং তার কয়েক দশক ধরে চলা ‘এক সন্তান’ নীতি বাতিল করে প্রাথমিকভাবে বিবাহিত দম্পতিদের দুই সন্তান নেওয়ার অনুমতি দেয়। কিন্তু ২০১৬ সালে কিছুটা ঊর্ধ্বগতি হওয়ার পর দেশটির জাতীয় জন্মহার হ্রাস অব্যাহত আছে। বিষয়টি নীতিনির্ধারকদের জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই বিবৃতিতে ট্রিপ ডটকমের নির্বাহী চেয়ারম্যান জেমস লিয়াং বলেন, আমি সব সময় পরামর্শ দিয়েছি, সরকার শিশুসহ পরিবারগুলোকে অর্থ প্রদান করুক...পরিবারের শিশুপালনের খরচ কমাতে এবং তরুণদের একাধিক সন্তান নেওয়ার ইচ্ছা পূরণ করতে সহায়তা করুক। তিনি আরও বলেন, এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো অনুকূল প্রজনন পরিবেশ তৈরি করতে নিজস্ব সামর্থ্য অনুযায়ী ভূমিকা পালন করতে পারে।
চায়না সিকিউরিটিজ জার্নালসহ দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেইজিংয়ের কৃষিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বেইজিং ডাবেইনং টেকনোলজি গত বছর বলেছিল, কোনো কর্মীর তৃতীয় সন্তানের জন্ম হলে তারা ওই কর্মীদের ১২ হাজার ৩৯১ মার্কিন ডলার নগদ বোনাস দেবে। আর প্রথম বা দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দিলে যথাক্রমে ৪ হাজার ১৩০ ও ৮ হাজার ২৬০ ডলার বোনাস দেওয়া হবে।
আরবান স্যানিটেশন পরিষেবা সংস্থা কিয়াওইন সিটি ম্যানেজমেন্ট গত মাসে ঘোষণা দিয়েছে, তৃতীয় সন্তানের জন্ম দেওয়া কর্মীদের সংস্থাটি ১৩ হাজার ৭৫৯ মার্কিন ডলার বোনাস দেবে। সংস্থাটি বলছে, এই উদ্যোগের লক্ষ্য ছিল তরুণ কর্মীদের পরিবারের ওপর আর্থিক বোঝা কমানো এবং সন্তান জন্মদানে উৎসাহিত করতে সরকারের আহ্বানে সাড়া দেওয়া।
চীনে জন্মহার কমে যাওয়া এখন একমাত্র উদ্বেগের বিষয় নয়। কারণ, দেশটিতে বিয়ের হারও কমে গেছে। এখন অনেক কমসংখ্যক মানুষ বিয়ে করছে, যা এই সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
জুনের শুরুর দিকে চীনের সিভিল অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত তথ্য বলছে, ২০২২ সালে প্রায় ৬ দশমিক ৮৩ মিলিয়ন দম্পতি বিয়ে করেছেন, যা ২০২১ সালে নিবন্ধিত ৭ দশমিক ৬৩ মিলিয়ন বিয়ের চেয়ে প্রায় ১০ দশমিক ৫ শতাংশ কম। ১৯৮৬ সালে এই মন্ত্রণালয় তথ্য প্রকাশ করা শুরুর পর থেকে এটি সর্বনিম্ন রেকর্ড।
দেশটির আইনপ্রণেতারা ২০২১ সালে সন্তান জন্মের সীমা শিথিল করে তিন সন্তান জন্মের অনুমতি দিয়েছেন। এ ছাড়া বড় পরিবারগুলোকে উৎসাহিত করার উদ্যোগ দিয়েছেন। এর মধ্যে আছে মাতৃত্বকালীন ছুটি শক্তিশালী করতে গত বছর একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন, পরিবারগুলোর ট্যাক্স কমানো ও অন্যান্য সুবিধা প্রদান।
তবে পরিবর্তনশীল লৈঙ্গিক নিয়ম, জীবনযাত্রা, শিক্ষার উচ্চ ব্যয় ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে এসব উদ্যোগ এখনো কোনো সুফল বয়ে আনেনি। সূত্র: সিএনএন
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল