ভারতে ষোড়শতম লোকসভার পঞ্চম দফায় ভোট হচ্ছে আগামীকাল বুধবার। যদিও পশ্চিমবঙ্গে প্রথমদফার ভোট হতে চলেছে ওইদিন। ৪২ আসন বিশিষ্ট পশ্চিমবঙ্গে প্রথম দফায় চারটি আসনে ভোট হচ্ছে। এগুলি হল কুচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি এবং দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্র। চার আসনে মোট ভোটারের সংখ্যা ৬০,১৪,২৫৮ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৩১,১৪,১৯৪ এবং মহিলা ভোটার আছেন ২৯,০০,৯২৪।
দার্জিলিং কেন্দ্রে সর্বোচ্চ ১৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। উল্লেখযোগ্য প্রার্থীরা হলেন তৃণমূলের বাইচুং ভুটিয়া, বিজেপি'র সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া, কংগ্রেসের সুজয় ঘটক, সুখবিলাস বর্মা, বাম প্রার্থী মনোহর তিরকে। ১৭ এপ্রিল এই চারটি লোকসভা আসনের পাশাপাশি জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ি ও কুমারগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রেও উপনির্বাচনও হবে। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের লক্ষ্যে ১২০ কোম্পানি আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে, থাকছে রাজ্য পুলিশও।
পাঁচ বছর আগে কুচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি এবং দার্জিলিং- এই চার কেন্দ্রেই গিয়েছিল বিরোধীদের ঝুলিতে। তিনটি কেন্দ্র দখল করেছিল বামফ্রন্ট। আর দার্জিলিং কেন্দ্রে জিতেছিলেন বিজেপি প্রার্থী। কিন্তু রাজ্যে পালা বদলের সঙ্গেই এই কেন্দ্রগুলিতেও শাসকদলের আধিপত্য এসেছে। অঙ্কের বিচারেও প্রথম তিনটি কেন্দ্রেই এগিয়ে তৃণমূল। স্বভাবতই এই কেন্দ্রগুলিতে জয়ের আশা দেখছে শাসকদল। একমাত্র দার্জিলিং আসনটি এবার গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে তৃণমূলের কাছে। এই কেন্দ্রে এবার চতুমুর্খী লড়াই। তৃণমূল কংগ্রেসের বাইচুং ভুটিয়া, বিজেপির এস.এস.আলুওয়ালিয়া, সিপিআইএমএর সমন পাঠক, কংগ্রেসের সুজয় ঘটক। যদিও নজর থাকবে তৃণমূল ও বিজেপির প্রার্থীদের দিকে। পাহাড়ের তিনটি ও সমতলের চারটি বিধানসভা নিযে দার্জিলিং লোকসভা গড়ে উঠেছে।
শেষবার ২০০৯ সালে এই কেন্দ্র থেকে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সমর্থনে বিজেপি প্রার্থী যশবন্ত সিং জয় পেয়েছিলেন। পাহাড়ের বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতে গড়ে ৯০ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন তিনি। ২০১১ সালের বিধানসভার নির্বাচনেও পাহাড়ের তিনটি বিধানসভাই মোর্চার দাপট দেখা যায়। ২০১২ সালের গোর্খা টেরিস্টোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ)-এর নির্বাচনে সবকয়টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিল মোর্চা। স্বভাবতই অন্যান্য দলের চেয়ে কয়েক কদম এগিয়ে আছে গোর্খা সমর্থিত বিজেপি প্রার্থী। কিন্তু এবার সেই পাহাড়েই অনিশ্চয়তার মেঘ দেখছে মোর্চা। এর একটি কারণ যদি হয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের উন্নয়ন, দ্বিতীয়টি নির্দল প্রার্থী মহেন্দ্র পি.লামা। এই কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী দাঁড় করোনো নিয়ে প্রকাশ্যেই মতবিরোধ দেখা যায় গোর্খা এবং তৃণমূলের মধ্যে। বিশিষ্ট ফুটবলার বাইচুং ভুটিয়াকে প্রার্থী করে পাহাড়বাসীর হৃদয় জয় করতে চেয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু তাদের প্রার্থীকে সমর্থন না করে তৃণমূলকে চাপ দিতে পাল্টা বিজেপি প্রার্থীকে সমর্থন করে বিজেপি। মোর্চার এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রীও। স্বভাবতই এই আসনটি এখন দুই দলের কাছেই প্রেস্টিজ ইস্যু। যেকোন মূল্যে এই কেন্দ্র থেকে নিজেদের প্রার্থীকে জিতিয়ে আনতে চেষ্টা করছেন মুখ্যমন্ত্রী। কয়েকদফায় তিনি এসেছেন পাশাপাশি মিঠুন চক্রবর্তীও প্রচার করে গেছেন।
অন্যদিকে, মোর্চার গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে নস্যাৎ করে নির্দলীয় প্রার্থী লামা পাহাড়ের প্রায় সমস্ত মোর্চা বিরোধী দলগুলিকে নিয়ে এবার পৃথক রাজ্যের দাবিতে ভোটে লড়ছেন। সেখানেও কিছুটা চাপে রয়েছেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতা বিমল গুরুং। যদিও সব আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে গুরুং বলছেন তাদের সমর্থনে বিজেপি প্রার্থীই জয়লাভ করবে।
এর আগে আজ সন্ধ্যায় শেষ হল ভোট প্রচারের সময়সীমা। শেষ দিনের প্রচারে নজর কাড়তে ভোটের ময়দানে হাজির ছিল ডান-বাম সবদলের প্রার্থীরাই। ভোটবর্প নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে ইতোমধ্যেই জেলাগুলিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের ১৯ টি জেলার ৪২ আসনে মোট ভোটারের সংখ্যা ৬ কোটি ২৪ লক্ষ। শেষবার ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ৪২ টি আসনের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস পায় ১৮ টি, সিপিআইএম ১৫ টি, কংগ্রেস ৬ টি এবং ১ টি মাত্র আসনে জয়লাভ করে এসইউসিআই। এরাজ্যে বাকী পর্বগুলি হবে ২৪ এপ্রিল(৬), ৩০ এপ্রিল(৯), ৭ মে(৬) এবং ১২ মে (১৭ টি আসন)।
পশ্চিমবঙ্গের ৪টি আসনের পাশাপাশি মাও অধু্যষিত ছত্রিশগড়ের ৩টি, বিহারের ৭টি, কাশ্মীরের ১টি, ঝাড়খন্ডের ৫টি, কর্নাটকের ২৮টি, মধ্যপ্রদেশের ১০টি, মহারাষ্ট্রের ১৯ টি, মনিপুরের ১টি, ওড়িশার ১১টি, উত্তরপ্রদেশের ১১টি আসনে এদফায় ভোট হচ্ছে। প্রতিটি কেন্দ্রেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।