বাংলাদেশ প্রতিদিনে লিখছি অনেক দিন। কিন্তু এ পর্ব যে জাতির জন্মদিনে পড়বে তা কখনো ভাবিনি। কী আশ্চর্য, জাতির জনকের জন্মদিন ১৭ মার্চ আমার পর্ব পড়েছে। আজ ৪৯ দিন মতিঝিলের ফুটপাথে বসে আছি, কিন্তু দুই নেত্রীর হৃদয়ে দেশ ও জাতির জন্য সামান্য দয়া-মায়ার সঞ্চার করতে পারিনি। তবে লেখার পর্ব যে এমন একটা শুভদিনে পড়েছে সেজন্য দয়াময় প্রভুর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ টুঙ্গিপাড়ায় শেখ লুৎফর রহমান ও সাহেরা বেগমের ঘরে জাতির পিতার জন্ম- এটা সবার জানা। তিনি আমাদেরই মতো সাধারণ মানুষ ছিলেন। কিন্তু দেশ ও জাতির প্রতি ভালোবাসা ও নিষ্ঠা ছিল হিংসা করার মতো। \'৬১, \'৬২ সালের দিকে টুঙ্গিপাড়ার শেখ মুজিবকে প্রথম দেখেছিলাম আমাদের বাড়িতে। বুনিয়াদি গণতন্ত্রের এক উপনির্বাচনে খোদাবঙ্ মোক্তার বাসাইল থেকে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন। অন্যদিকে করটিয়ার কোনো এক জমিদার। সেই নির্বাচনি প্রচারে অনেকের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুও গিয়েছিলেন। সেই প্রথম আমাদের বাড়িতে তার আগমন। টিউবওয়েল থেকে পানি আনতে গিয়ে গ্লাস ভেঙে রক্তাক্ত হয়েছিলাম। সেই প্রথম আমার সঙ্গে তার রক্তাক্ত পরিচয়। তারপর দিন গেছে আমরা ঘনিষ্ঠ হয়েছি, আস্তে আস্তে বড় হয়েছি। ঢাকায় এলে আমার ছোট বোন রহিমা শুশুমা ধানমন্ডির বাড়িতে থেকেছে। এরপর \'৬৬, \'৬৯, \'৭১-এর মধ্য দিয়ে আমরা একেবারে একাকার হয়ে গিয়েছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে নেতা বলেছিলেন, \'যার যা আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে\'। নেতার আহ্বান কজন সফল করতে পেরেছিলেন জানি না। কিন্তু আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। এখনকার মতো যুদ্ধের সময়েও আমার শত্রু-মিত্রের অভাব ছিল না। মিত্র ছিল সাধারণ, শত্রুর তালিকা অসাধারণে ভরা। যুদ্ধের সময় যারা গাঢাকা দিয়েছিল। যুদ্ধ শেষে শিয়ালের মতো রা রা করে তারা জনপদে বেরিয়ে আসে। ডিসেম্বরের ২২, ২৩ তারিখ কালিয়াকৈরে এক দুর্ঘটনা ঘটে। সেখানকার কমান্ডার হাকিম একসময় আমার সঙ্গেই ছিল। একেবারে শেষের দিকে সে কিছুটা আলাদা হয়ে পড়ে। কালিয়াকৈর থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত বেশ দক্ষতার সঙ্গে পাকিস্তানিদের মোকাবিলা করে। তাই স্বাধীনভাবে তার নড়াচড়ায় কোনো বাধা দিইনি। কারণ সেটাও একটা যুদ্ধকৌশল। দক্ষিণের দিকে শত্রুর আক্রমণের সম্ভাবনা তাতে অনেকটাই কমে যায়। যে কারণে হাকিমকে অস্ত্র-গোলাবারুদ, অর্থ, কখনো কখনো সৈন্য দিয়ে সাহায্য করেছি। সেই হাকিমই স্বাধীনতার কয়েক দিনের মাথায় ঠেঙ্গারবান্দের নেতা শামসুল হকের কোনো লোককে লুটপাটের জন্য শাস্তি দিয়েছিল। সব সময়ই কম-বেশি নেতা বা নেতার লোকদের অন্যায় ধরা হতো না। সে এক বিরাট আলোড়ন। মুজিবনগর থেকে বিপ্লবী সরকার ঢাকায় এসেই একগাদা ভারতীয় সৈন্য কালিয়াকৈরে পাঠিয়ে দেয়। তারা এখানে ওখানে মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজতে থাকে। যে মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করেছে, পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে আর পাকিস্তানিরা গ্রাম জ্বালিয়েছে সেই একইভাবে ভারতীয় শিখ সেনারা যখন গ্রামে গ্রামে যাওয়া শুরু করে তখন মারাত্মক বিভীষিকার সৃষ্টি হয়। এক দিন পর আমি খবর পাই। টাঙ্গাইলের সিক্স বিহার রেজিমেন্ট, ময়মনসিংহে সানসিংয়ের নেতৃত্বে ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার। যোগাযোগের তেমন উন্নত ব্যবস্থা ছিল না। তার পরও অনেক চেষ্টা করে ব্রিগেডিয়ার সানসিংয়ের সঙ্গে কথা হয়। খবরটি শুনে তিনি খুবই দুঃখিত হন। এক বাঙালি মেজর জেনারেল বি এন সরকার ছিলেন বাংলাদেশ-ভারত সরকারের সমন্বয়কারী। অসাধারণ গুণবান মানুষ ছিলেন তিনি। সমস্ত সৈন্য ফিরিয়ে এনে ব্যারাকে পাঠিয়ে দেন। পরদিন সকালে জেনারেল নাগরা, বি এন সরকার ও ব্রিগেডিয়ার সানসিং আসেন টাঙ্গাইলে। অনেক কথার পর তারা আমাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। তাজউদ্দীন ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় ছিল, ঘনিষ্ঠতা ছিল না। বিশাল আর্মি হেলিকপ্টারে টাঙ্গাইল থেকে তেজগাঁও এয়ারপোর্ট ১৪-১৫ মিনিটের রাস্তা। তারপর পাকিস্তানি নেভেল কমান্ডারের বিশাল গাড়িতে সচিবালয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুখোমুখি হই। প্রধানমন্ত্রীর ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় জেনারেলরা বেরিয়ে যান। তাজউদ্দীন সাহেব খুবই রুষ্ট ছিলেন। তাই অভিযোগের সুরে বলছিলেন, আপনার লোকেরা শামসুল হকের লোকদের অপমান-অপদস্থ করেছে, অন্যায়ভাবে নির্যাতন করেছে। আমি যখন বললাম, কমান্ডার হাকিম এখন আর আমার লোক নয়, সে আপনার বা আপনাদের লোক। তবে সে খুবই ভালো লোক। যেসব অভিযোগ করা হয়েছে তার কিছুই সত্য নয়। আর বিশেষ করে ভারতীয় আর্মি দিয়ে মুক্তিবাহিনীকে গ্রেফতার বা অন্যকিছু করা ভালো ফল হবে না। এরপর অনেকক্ষণ কথাবার্তা হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন দারুণ অভিজ্ঞ মানুষ। জনাব শামসুল হকের দুষ্ট লোকদের লুটতরাজ এবং কারসাজি বুঝতে খুব একটা বাকি থাকেনি। তিনি সঙ্গে সঙ্গে জেনারেলদের ডেকে বলে দেন এই অঞ্চলে কাদেরের পরামর্শ ছাড়া যেন কোনো কিছু করা না হয়। ভারতীয় জেনারেলরা যা চাচ্ছিলেন তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুখে শুনে খুব খুশি হয়েছিলেন। এয়ারপোর্টের দিকে যেতে যেতে বার বার জিজ্ঞেস করছিলেন, কী ব্যাপার, তুমি জাদু জানো নাকি? ভাবলাম তোমাকে নিয়ে কোনো বিব্রতকর অবস্থা হবে, ইচ্ছার বাইরেই রেখে যেতে হবে। এখন প্রধানমন্ত্রীই তোমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
সে ঘটনা মিটে গিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর দেশে ফেরা নিয়ে চলছিল নানা জটিলতা। একটা স্বাধীন দেশের জনককে কীভাবে একটা দেশ আটকে রাখে? তবু পাকিস্তানিরা তাকে আটকে রেখেছিল। ৯৫ হাজার পাকিস্তানি সেনা ছিল আমাদের হাতে বন্দী। তাই পাকিস্তানিরাও বেশি সুবিধায় ছিল না। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি না দিয়ে তাদের কোনো পথ ছিল না। আর পরাজিত নতজানুদের বাহাদুরি সাজে না। বঙ্গবন্ধু ফিরে এলে জাতি আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধুহীন স্বাধীনতা আমাদের কাছে পূর্ণাঙ্গ ছিল না। সুস্বাস্থ্যে সশরীরে তিনি ফিরে আমাদের সেই স্বাদ পাওয়ার সুযোগ দেন। ১০ জানুয়ারি \'৭২ দুপুরে তিনি তেজগাঁও বিমানবন্দরে নেমেছিলেন। ৮ জানুয়ারি করাচি থেকে পিআইয়ের বিমানে লন্ডন, সেখান থেকে ব্রিটিশ রাজকীয় বিমানে দিলি্ল হয়ে ঢাকায় এসেছিলেন। আমার সেদিন বিমানবন্দরে যাওয়া হয়নি। পরদিন সকাল ৭টায় ধানমন্ডির ১৯ নম্বর বাড়িতে বঙ্গবন্ধুর কাছে এসেছিলাম। সে এক অমর স্মৃতি। দুই দিন পর তিনি যখন প্রধানমন্ত্রী, আবু সাঈদ চৌধুরী রাষ্ট্রপতি তখনো এসেছিলাম। ১৪ কিংবা ১৫ জানুয়ারি বিকালের দিকে তিনি আবার ডেকেছিলেন। সেই প্রথম অস্ত্র নিয়ে কথা হয়। তিনি বলেছিলেন, \'কাদের, শুনলাম তোর নাকি সবচেয়ে বড় দল, বেশি অস্ত্র। সারা দুনিয়ায় তোকে নিয়ে কথা হচ্ছে। এত ছড়ানো-ছিটানো অস্ত্র। তুই আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ত্র দিলে আমি অন্যদের কাছে বড় গলায় বলতে পারব। কী করবি? অস্ত্র জমা দিয়ে দে\'। আমি এক মুহূর্ত ভাবিনি। বলেছিলাম, \'কখন দরকার, তখনই দিয়ে যাব। চলুন টাঙ্গাইল। অস্ত্র নিয়ে আসবেন\'। বঙ্গবন্ধু সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়েছিলেন। তিনি নাকি লন্ডনে একমাত্র আমাকে নিয়েই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছিলেন। অসংখ্য সাংবাদিক জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘Who is Kader Siddique?’ তিনি তার স্বভাবসুলভ দৃঢ়তায় বলেছিলেন, ‘Oh! He is my son.’ প্রথমে মুক্তিবাহিনী প্রধান জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী ও হোম মিনিস্টারকে টাঙ্গাইল পাঠানোর কথা হয়। বলেছিলাম, \'কী যে বলেন? পাকিস্তান আর্মির হাত থেকে ছিনিয়ে আনা অস্ত্র ওইসব লোকের হাতে দেব? তারা কি আমাদের নেতা?\' ঠিক হলো ২৪ জানুয়ারি \'৭২ রাজধানীর বাইরে প্রথম টাঙ্গাইলে যাবেন অস্ত্র নিতে। দেশ সৃষ্টি হয়েই সারেনি, তখন ষড়যন্ত্র বাড়বাড়ন্ত। আমরা যদি তাকে জিম্মি করে ক্ষমতা নিয়ে নিই তাই কতজন বঙ্গবন্ধুকে টাঙ্গাইল যেতে বারণ করেছিলেন, বাধা দিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত তার সঙ্গে কেউ গেলেন না। তিনি একাই টাঙ্গাইল গিয়েছিলেন। তার পরের অনেক কথা, অনেক উত্থান-পতন। আজ তার জন্মদিনে সব বুক চিরে বেরিয়ে আসতে চায়। কিন্তু কিছুই করার নেই। আজ আমি রাজাকার, বঙ্গবন্ধু রাজাকার। সংবিধানে ৭ মার্চের ভাষণ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তার পরও কি এক কোম্পানির বিজ্ঞাপনে সে ভাষণ ব্যবহার করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগে এখন লোক নেই, তাই যত্রতত্র বঙ্গবন্ধুর ভাষণ বাজিয়ে তার মর্যাদাহানি করছে। দেখি সবই কিন্তু কোনো প্রতিকার করতে পারি না। সত্যিই কী যে খারাপ লাগে। পিতার জন্মদিনে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন তাকে বেহেশতবাসী এবং আমাদের ক্ষমা করেন- আমিন।
জনাব ডা. জাফর উল্যাহ চৌধুরী একজন অসাধারণ মানুষ। বিপদে মানুষ নিরাপত্তা খোঁজে। জাফর উল্যাহ চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধের সময় বিলাতের নিরাপদ অবস্থান ছেড়ে যুদ্ধের ময়দানে ছুটে এসেছিলেন। তিনি যদি ওই সময় বিলাত থেকে ছুটে এসে আহত যোদ্ধাদের চিকিৎসার উদ্যোগ না নিতেন তাহলে যারা মারা গেছেন তারা তো গেছেনই, আরও কয়েক হাজার যোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ সে সময়ই মারা যেত, যে কারণে তাকে আমি বড় বেশি সম্মানের চোখে দেখি। ফুটপাথে অবস্থানে আছি আজ ৪৯ দিন। ১৫ মার্চ হঠাৎই তিনি এসেছিলেন। আমি তখন ঞযবৎবঢ়ড়ৎঃ২৪.পড়স-এর সাংবাদিক সাগরকে নিয়ে দুপুরের খাবার খাচ্ছিলাম। অভ্যাসমতো জাফর ভাইকেও বলছিলাম, একটু খান। তিনি বললেন, না খাব না। বললাম, সামান্য খান। একটু খেলে আমার ভালো লাগবে? সরল সোজা মানুষ সামান্য একটু ভাত নিয়ে খেতে শুরু করেছিলেন। পরে দেখলাম ভাত নিচ্ছেন, টাকি মাছ ভর্তা নিচ্ছেন, শাক নিচ্ছেন, ডাঁটা দিয়ে বাজিলা মাছ ছিল- সবই একটু একটু করে নিচ্ছেন আর খাচ্ছেন। বহুদিন পর নিজে থেকে কিছু কিছু নিয়ে তার খাওয়া দেখে বুক জুড়িয়ে গিয়েছিল। বলেছিলাম, \'গ্রামগঞ্জের মা-বোনেরা পরম যত্নে কারও জন্য কোনো কিছু রাঁধলে সে যদি কোনো কিছু চেয়ে নেয় রাঁধুনির আনন্দে বুক ভরে যায়। আমারও আপনার খাওয়া দেখে তেমন বুক ভরে গেছে\'। মনে হয় তিনিও বেশ খুশি হয়েছিলেন।
প্রায় প্রতিদিন দুপুরের খাবার পর এক-দেড় ঘণ্টা শুয়ে-বসে কাটাই। সেদিনও তেমন করছিলাম। ভারতীয় কয়েক বন্ধুর ফোন পেলাম। তাদের সবার মুখে এক কথা, আপনি নাকি ভারতবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন? কথা শুনে মনে হলো, বর্তমান আওয়ামী লীগে যেমন সত্যিকারের আওয়ামী লীগার নেই। ঠিক তেমনি আমি যদি ভারতবিরোধী বক্তৃতা দিই তাহলে এখানে ভারতের বন্ধু কে? বহু বছর ভারতে ছিলাম, কত নেতার সঙ্গে মেলামেশা করেছি। মনে হয়েছে ভারতীয় নেতারাও বাংলাদেশকে তাদের গোলাম দেখতে চান। কবে জানি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলাম, রক্ত দিয়ে পাকিস্তানের কাছ থেকে ভারতের গোলাম হওয়ার জন্য দেশ স্বাধীন করিনি। আমরা ভারতের বন্ধুত্ব চাই, গোলামি চাই না। হয়তো কেউ আগের টুকু বলেছেন, পরের টুকু বলেননি। যেমন, \'এইখানে পেশাব করিবেন না, করিলে ১০ টাকা জরিমানা\'। ওটাই যদি এমন হয়, \'এইখানে পেশাব করিবেন, না করিলে ১০ টাকা জরিমানা\'- সেরকম আর কী?
সেদিন ইংল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রিকেটের জয় এক ঐতিহাসিক ঘটনা। কেউ কেউ বলেছে, ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীতে ইংরেজরা আমাদের পরাজিত করেছিল, এই প্রথম আমরা ইংরেজদের পরাজিত করলাম। দ্রুত বহমান আধুনিক জমানায় কতজন কত কিছুর সঙ্গে তুলনা দেয়। কিছু হলেই মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে উপমা দেয়। তা দিয়ে কেউ যদি শান্তি পায় পাক। তবে এটা সত্য, ইংল্যান্ডের সঙ্গে বিজয়ে সারা দেশ মেতে উঠেছিল। বিএনপি, আওয়ামী লীগ একসঙ্গে না হলেও বিজয় মিছিল করেছে। দুই মাস পর ১২ ঘণ্টার জন্য হরতাল স্থগিত ছিল। একটা খেলার জন্য যদি এত অশান্তি আনন্দে রূপ নিতে পারে তাহলে এসএসসির ১৫ লাখ পরীক্ষার্থীর শিক্ষা জীবনের জন্য কি পরীক্ষার দিনগুলোয় হরতাল-অবরোধ স্থগিত রাখা যেত না? বেগম খালেদা জিয়ার মাত্র দুটি ছেলে। তার একজন সেদিন মারা গেছে। বেগম খালেদা জিয়া কি বলতে পারতেন না, অনেক হয়েছে আমার সন্তানের জন্য ৪০ দিন আল্লাহর দরবারে আমি কাঁদতে চাই। ৪০ দিনের কি অবসর দেওয়া যেত না? আসলে আমাদের কাছে জীবন বড় নয়, আমাদের কাছে ক্ষমতাই বড়। আওয়ামী লীগ বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে চায়, বিএনপিও চায় আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে। কিন্তু কোনোটাই যে নিশ্চিহ্ন হবে না। সবার মিলেমিশে মানুষের কল্যাণে দেশের স্বার্থে একত্রে কাজ করতে হবে এটা তাদের বুঝাবে কে? বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আমাদের অস্তিত্বকে ঘিরে। জিয়াউর রহমানও যে বীরউত্তম সেও তাকে ঘিরেই। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন আমার কাছে বাংলাদেশের জন্মদিন, স্বাধীনতার জন্মদিন। এই মহান নেতার জন্মদিনে তার রক্ত ঘামে জন্ম নেওয়া সোনার বাংলাকে যেন আল্লাহ বালা-মুসিবতের হাত থেকে উদ্ধার করেন। এই শুভদিনে তার আত্মার শান্তি ও বেহেশত কামনা করছি- আমিন।
লেখক : রাজনীতিক।