২০১০ সালের প্রথম দিকে আমার আফসোসের সীমা-পরিসীমা ছিল না। আমি কেবলই ভাবতাম আওয়ামী লীগ সরকার বোধহয় গায়ে পড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করছে। আমার অবুঝ মনের সরল হিসাব ছিল এ রকম- কী দরকার বিশ্বের একমাত্র সুপার পাওয়ারের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করার। আমি মাঝেমধ্যে মার্কিন মদদপুষ্ট এ-দেশীয় কবি-সাহিত্যিক, অধ্যাপক, সাংবাদিক, অর্থনীতিবিদ কিংবা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আড্ডায় বসতাম এবং তাদের কথাবার্তা শুনে সরকারের ভবিষ্যৎ নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়তাম। আমার মনমানসিকতা কিংবা জানাশোনার ব্যাপ্তি বর্তমান কালের মতো ছিল না। আমি কোনো কিছুর গভীরে ঢুকতে পারতাম না এবং চর্মচোখে যা দেখতাম তা-ই হাঁদারামের মতো বিশ্বাস করে টেলিভিশন টকশোগুলোয় বিজ্ঞের মতো কথাবার্তা বলতাম। আমার আলাদা এবং স্বতন্ত্র বাচনভঙ্গির কারণে লোকজন কথাগুলোর মধ্যে এক ধরনের যুক্তি খুঁজে পেত বিধায় আমি কোনো দিন বিরূপ পরিস্থিতির শিকার হইনি।
বাংলাদেশের রাজনীতি বিশেষত আওয়ামী লীগকে নিয়ে মার্কিন সরকারের পরিকল্পনা আমি বুঝতে পারি একটি সেমিনারের মাধ্যমে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দিচ্ছিলেন তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজীনা। বাংলাদেশের কূটনৈতিক অঙ্গনের পরিচিত প্রায় সব মন্ত্রী, সাবেক মন্ত্রী এবং রাষ্ট্রদূত সেদিন উপস্থিত ছিলেন। অল্প বয়স্কদের মধ্যে একমাত্র আমিই সেদিন বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য আমন্ত্রিত ছিলাম। আমার এক পাশে বসা ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং তৎকালীন প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ জমির এবং অন্য পাশে ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক পররাষ্ট্র উপদেষ্টা শফি সামি। আমি যা বলতে চাই সে বিষয়ে তাদের সঙ্গে একটু হালকা আলোচনা করে নিলাম। তারা উভয়েই সম্মতি দিলেন।
আমার বক্তব্যে আমি রাষ্ট্রদূত মজীনাকে বললাম, ইউর এক্সিলেন্সি। আপনি বললেন যে, বর্তমানে বাংলাদেশের সঙ্গে আপনার দেশের সম্পর্ক ইতিহাসের সর্বোচ্চ সৌহার্দ্যপূর্ণ অবস্থায় আছে। দুই দেশের সম্পর্ক নাকি সর্বকালের মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে। আমার জানা মতে বর্তমান সরকারের সঙ্গে আপনাদের সম্পর্ক একদম ভালো নয়। বহুদিন চেষ্টা করেও আপনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ঢুকতে পারেননি। আপনাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোন আমাদের প্রধানমন্ত্রী ধরেন না। কূটনৈতিক চ্যানেলে আপনাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কয়েকবার ফোন করে যেসব অনুরোধ করেছেন তার একটিও প্রধানমন্ত্রী রাখেননি, আপনাদের সরকারের মন্ত্রীরা এ দেশে এলে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ পান না। সরকারের সিনিয়র মন্ত্রীরা আপনাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে কটু কথা বলে- আপনাদের মন্ত্রীকে দুই আনার মন্ত্রী বলেন! তার পরও আপনি বলছেন সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক যাচ্ছে। তাহলে আমার প্রশ্ন, সেই ভালো সম্পর্ক কি সরকারের সঙ্গে নাকি অন্য কারও সঙ্গে?
আমি আরও প্রশ্ন করলাম, সম্মানিত রাষ্ট্রদূত। বর্তমান সরকারি দলটি দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল এবং সর্বপ্রাচীনও বটে। দেশের কম করে হলেও ৩৫ ভাগ মানুষ দলটির সমর্থক। আপনারা এই ৩৫ ভাগ মানুষকে বাদ দিয়ে কি বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক করতে চাচ্ছেন? ১৯৭১ সালে আপনাদের ভূমিকা, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে বটমলেস বাস্কেট বা তলাবিহীন ঝুড়ি বলে পুরো জাতিকে অপমান, ১৯৭৪ সালে চুক্তি মোতাবেক পিএল ফোরের গমভর্তি জাহাজ সময়মতো বাংলাদেশে না পাঠিয়ে গভীর সমুদ্রে আটকে রেখে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির প্রেক্ষাপটগুলো কি আপনারা ভুলে গেছেন নাকি আমরা ভুলে গেছি! দেশের প্রায় সব মানুষ বিশ্বাস করে যে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আপনার সরকার যেমন জড়িত ছিল তেমনি এ দেশের প্রতিটি সামরিক অভ্যুত্থানে আপনাদের হাত ছিল। কই এ ব্যাপারে আপনারা তো কখনো কিছু বলেন না। আপনারা কি এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ৯০ ভাগ মুসলমানের মনমানসিকতার খোঁজখবর রাখেন? মধ্যপ্রাচ্যসহ সারা দুনিয়ার মুসলমানদের প্রতি আপনাদের জুলুম-অত্যাচার এবং অবিচারের কাহিনী জানার পর এ দেশের মুসলমানরা আপনাদের সঙ্গে কীভাবে সম্পর্ক স্থাপন করবে! কাজেই আপনি দয়া করে বলুন, এ দেশের কার সঙ্গে এবং কাদের সঙ্গে আপনাদের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে এবং কেন? ইউর এক্সেলেন্সি! আপনারা কি একবারও এ দেশের মানুষের মনোবেদনা এবং কষ্টের কারণগুলো অনুভব করেছেন? এমনকি আপনারা কখনো কি আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নততর করার জন্য? আপনারা আপনাদের আশীর্বাদপুষ্ট লোকজন নিয়ে চলাফেরা করেন- নিয়মিত ভোজসভা বা প্রাতরাশ সভার আয়োজন করেন এবং একটা মুরব্বিসুলভ মনোভাব এবং শারীরিক অঙ্গভঙ্গি করে দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ছুটে বেড়ান এবং দেশের সব প্রেস মিডিয়াকে ডেকে দুই হাত উঁচু করে বলেন বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। কেউ রুখতে পারবে না এবং বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে সবচেয়ে উত্তম সম্পর্ক।
আমার কথা শুনে রাষ্ট্রদূত একদম মন খারাপ করে ফেললেন। অনুষ্ঠানের বাকিটা সময় তিনি মুখ ভার করে রইলেন। এর কয়েক দিন পর অন্য একটা ঘরোয়া অনুষ্ঠানে ডেপুটি অ্যাম্বাসাডর জন আমাকে বললেন যে তারা নাকি আমাকে তাদের বন্ধু মনে করেন এবং আমার কাছ থেকে প্রকাশ্যে এতসব কথা শুনে রাষ্ট্রদূত মজীনা নাকি খুব কষ্ট পেয়েছেন। জন যখন এসব কথা বলছিলেন তখন আমি সস্ত্রীক দাঁড়িয়ে ইস্পাহানি গ্রুপের কর্ণধার বেহরুজ ইস্পাহানি এবং রহিমআফরোজ গ্রুপের চেয়ারম্যান ফিরোজ রহিমের সঙ্গে গল্প করছিলাম। তারা জন-এর কাছে বিস্তারিত জানতে চাইলেন এবং জন বিষয়টি সুকৌশলে এড়িয়ে গেলেন। আমিও ওই প্রসঙ্গে কথা বাড়ালাম না।
বাংলাদেশ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র এবং তদের মিত্রদের মনোভাব নিয়ে আমি এর আগে গভীরভাবে চিন্তা করিনি। বরং একপেশেভাবে সরকারকে মনে মনে দায়ী করে আসছিলাম কেন তারা গায়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করতে যাচ্ছে। আমার আবেগ এবং নিবুর্দ্ধিতা আমাকে এতটাই উতলা করে ফেলল যে আমি একদিন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকে পর্যন্ত বলে ফেললাম, আপা! ড. ইউনূসের ব্যাপারটি কি মিটমাট করে ফেলা যায় না! প্রধানমন্ত্রীর উত্তর শুনে আমার কানে পানি ঢুকল। আমি বুঝলাম সরকার জেনে বুঝেই সব কিছু করছে। কিন্তু কেন করছে তা আমার মাথায় ঢুকল না। আমি আওয়ামী লীগের বৈদেশিক নীতি দেখাশোনা করেন এমন একজন সিনিয়র কূটনীতিবিদের সঙ্গে আলাপ করার পর অনেক কিছুই স্পষ্টভাবে বুঝতে পারলাম। আমার প্রশ্নের জবাবে প্রবীণ কূটনীতিবিদ বললেন যে বাংলাদেশ ঘিরে ইঙ্গ-মার্কিন কূটনীতির মূল লক্ষ্য দুটি। প্রথমত : তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী বা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে শর্তহীনভাবে এ দেশের ভূমি এবং জলসীমানা ব্যবহার করার পাঁয়তারা ঠিক যেমনটি তারা করছে সিঙ্গাপুর, ফিলিপাইন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায়। দ্বিতীয়ত : তেল, গ্যাস এবং অন্যান্য খনিজ সম্পদ উত্তোলন বা আহরণ, বিপণন এবং বিতরণে একচেটিয়া প্রভাব বলয় সৃষ্টি করা। প্রথমটির জন্য তারা ভিতরে-বাইরে বহুমুখী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে দ্বিতীয় ক্ষেত্রে তারা প্রায় শতভাগ সফল। তারা বাপেঙ্কে কাজ করতে দিচ্ছে না। গ্যাস ও তেল ক্ষেত্রে কাজ করত এমন সফল কোম্পানিকে ছলেবলে কৌশলে বিদায় করে দিয়ে মার্কিন কোম্পানি শেভরন প্রায় ১০ বছর ধরে এ দেশে একচেটিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোয় শেভরনের বিরুদ্ধে টুঁ শব্দ উচ্চারণ করবে এমন কোনো লোক বাংলাদেশে নেই।
মার্কিন কূটনীতির এশিয়া চ্যাপ্টারে বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান অতীব গুরুত্বসহকারে দেখানো হয়েছে। তাদের চিরশত্রু চীন, সাময়িক কৌশলগত মিত্র ভারত, দীর্ঘদিনের বৈরী সম্পর্ক চলে আসা মিয়ানমারকে নিয়ন্ত্রণের জন্য তাদের দরকার বাংলাদেশের ভূখণ্ড। এর বাইরে মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, ভুটান ও নেপালের ওপর নজরদারি করার জন্য এ অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানই সর্বোৎকৃষ্ট। এতসব সম্ভাবনা এবং সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য ইঙ্গ-মার্কিন চক্র খুব ঠাণ্ডা মাথায় ধীরেসুস্থে এগোচ্ছে। ফলে সরকার যা-ই বলুক না কেন মার্কিনিরা ওসব নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে তাদের লবির লোকজনের সাহায্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের দিকে।
আওয়ামী লীগ প্রথম থেকেই বিষয়টি নিয়ে সজাগ এবং সচেতন। মুক্তিযুদ্ধকালীন মার্কিনিদের ভূমিকা, প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের অহংকারী মনোভাব এবং কর্তৃত্ব দেখানোর পাশাপাশি তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার প্রবৃত্তি। সমসাময়িক দুনিয়ায় তাদের সাম্প্রতিক ভূমিকা বিশেষ করে তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের হঠাৎ করে ভুলে যাওয়ার মজ্জাগত অভ্যাস এবং দুর্বলের প্রতি অত্যাচারের অতীত নমুনা সরকার গভীরভাবে মূল্যায়ন করেছে। ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, আফগানিস্তান এবং মালয়েশিয়া নিয়ে তাদের সামরিক ও অর্থনেতিক নিষ্ঠুরতার ইতিহাস সরকার প্রতিনিয়ত পর্যালোচনা করেছে। আরব বসন্তের উদ্ভব, মিসরের হোসনি মোবারক, গাদ্দাফি এবং বেন আলীদের পতনের পাশাপাশি সৌদি আরব ও ইসরায়েলের সঙ্গে তাদের দ্বিমুখী নীতিকে এড়িয়ে যাওয়ার মতো নির্বুদ্ধিতা সরকার দেখাতে চায় না। ইয়েমেন, সিরিয়া, ইরাক নিয়ে তাদের খেলাধুলা, আল-কায়েদা, আইএস এবং হিজবুল্লাহদের সঙ্গে বহুরূপী আচরণের কারণে সরকারকে যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্বের প্রস্তাবটি বেশ ভালোভবেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হচ্ছে।
কৌশলগত কারণে সরকারকে ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মিত্রতা বজায় রাখতে হচ্ছে। অন্যদিকে এশিয়া ও ইউরোপের যেসব দেশের সঙ্গে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রতা হয়েছে তা কিন্তু ইদানীং ভেঙে পড়েছে। বার্লিনের দেয়াল নেই এবং জার্মানি সব সময়ই ব্যতিক্রম কিছু করার চেষ্টা করছে। যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্স এখন আর আগের মতো যুক্তরাষ্ট্রের কথায় তালি বাজায় না। সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারকে এখন বিচারের মুখোমুখি হতে হচ্ছে মার্কিনিদের কথামতো দ্বিতীয় উপসাগরীয় যুদ্ধে সাদ্দাম সরকারের পতন ঘটানোর জন্য ব্রিটিশ সৈন্য পাঠানোর দায়ে। জাপান পার্লামেন্টে আইন পাস হয়েছে নতুন করে সেনাবাহিনী গঠন এবং বিদেশে সেনা প্রেরণের সুযোগ রেখে। সৌদি আরব, পাকিস্তান, ইসরায়েল প্রভৃতি দেশ নানা কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি নাখোশ। এ অবস্থায় বাংলাদেশ যদি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মাখামাখি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে তবে সারা দুনিয়ায় তাদের আর শত্রু খুঁজতে হবে না। যুক্তরাষ্ট্রকে সফলতার সঙ্গে মোকাবিলার কারণে প্রধানমন্ত্রীকে অনেকেই মনেপ্রাণে শ্রদ্ধা করেন। বিশ্বরাজনীতির যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী শক্তিগুলো ইতিমধ্যেই সরকারের প্রতি তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। অনেকে যুক্ত হচ্ছে কৌশলগত মিত্রতার বন্ধনে, এমনকি বাংলাদেশের আওয়ামীবিরোধী জনমত এই একটি কারণে হলেও মনেপ্রাণে শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানায়। সরকার ভারতের পর রাশিয়ার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বিস্তৃত করেছে। দেশের জ্বালানি সেক্টরে রাশিয়াকে সুযোগ করে দিয়েছে। বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করছে রাশিয়া। এর বাইরে রাশিয়া থেকে কেনা হয়েছে ১০০ কোটি ডলার সমমূল্যের সামরিক যন্ত্রাদি। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অতীতের রেকর্ড ব্রেক করেছে। তারা পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ করছে এবং সেতুর দুই পাশে রেললাইনের সংযোগ স্থাপনে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে। চীন ও ভারতের নেতৃত্বে বিশ্বব্যাংকের বিকল্প হিসেবে যে নতুন আন্তর্জাতিক ব্যাংক হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সেই ব্যাংকটির অন্যতম মালিক হিসেবে আত্দপ্রকাশ করতে যাচ্ছে।
২০১৫ সালে এসে আমার মনে হচ্ছে, সরকার ইচ্ছা করেই যুক্তরাষ্ট্রকে এড়িয়ে গিয়েছিল এবং আগামীতেও যাবে। এর একমাত্র কারণ হলো, যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু হিসেবে বাংলাদেশ যত না উপকৃত হতো তার চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতো বেশি। ভারত ইতিমধ্যেই আল-কায়েদার টার্গেটের মধ্যে পড়ে গেছে। অথচ বিশ্বের জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো কেবল মার্কিনবিরোধী মনোভাবের কারণে বাংলাদেশকে তাদের টার্গেটের বাইরে রেখেছে। এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী দেশগুলো যেভাবে গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে তা মার্কিন বলয়ে থাকলে কোনো দিন সম্ভব হতো না। পাকিস্তানে মোহাম্মদ আলী, লিয়াকত আলী, আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া, টিক্কা খান, জিয়াউল হক, পারভেজ মোশাররফ- সবাই তো মার্কিনিদের বন্ধু ছিলেন। এসব লোকের মৃত্যু, পতন বা অধঃপতন কি মার্কিন মদদে হয়নি? এতসব উদাহরণ মাথায় নিয়েই হয়তো সরকার সর্বনাশী বন্ধুত্বের আহ্বানকে বার বার এড়িয়ে যাচ্ছে।
লেখক : কলামিস্ট