আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে পচনশীল খাদ্যপণ্যের অপচয় রোধ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষক। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভাবিত স্মার্ট ড্রায়ার ব্যবহার করে গুণগতমান রক্ষা করে নিরাপদভাবে কৃষিজ খাদ্যপণ্য প্রক্রিয়াজাত করা সম্ভব।
দ্রুত পচনশীল খাদ্যপণ্য সংরক্ষণ করতে না পারায় কম দামে বিক্রি করেন কিংবা ফেলে দিতে বাধ্য হন কৃষক। এতে তাদের বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি হয়ে থাকে। তবে স্মার্ট ড্রায়ার নামের কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফল, শাকসবজি, ভেষজ উদ্ভিদ শুকিয়ে সংরক্ষণ করে খাদ্যপণ্যের অপচয় রোধে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানা। তিনি নওগাঁর সাপাহারের গোডাউনপাড়ায় আজিজার রহমানের ছেলে। মূলত কাঁচা ও পাকা আম শুকিয়ে সংরক্ষণের জন্য আইওটি (ইন্টারনেট অব থিংস) প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক এই কৃষি প্রযুক্তি স্থাপন করলেও তিনি বর্তমানে সেই প্রযুক্তির মাধ্যমে টম্যাটো, মরিচ, বিটরুট, পরিপক্ব কলা, বরই, অর্জুনের বৃক্ষের ছাল, আদা, অ্যালোভেরা, লেবু, নিমের পাতা, সজনে পাতা, তেলাকুচা পাতা ও পেয়ারা পাতা শুকিয়ে সংরক্ষণ করছেন। এমনকি ফেলনা কলার খোসা পর্যন্ত শুকিয়ে পাউডার করে সার হিসেবে বিক্রি করছেন। স্মার্ট ড্রায়ার নামের এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে গুণগতমান রক্ষা করে নিরাপদভাবে কৃষিজ খাদ্যপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার অপার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন কৃষিবিদরা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন সোহেল রানা। এছাড়া কৃষিতে বিশেষ অবদান রাখায় ২০২১ সালে কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে জাতীয় যুব পুরস্কার অর্জন করেছেন। চাকরি ছেড়ে কৃষিতে ঝুঁকে পড়া এই তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা বর্তমানে ২০০ বিঘা জমিজুড়ে দুটি মিশ্র ফলবাগান ও তিনটি আমের বাগান রয়েছে। এছাড়া বিশেষ পলিথিন ও পাইপ-অ্যাঙ্গেল দিয়ে তৈরি করা পলিনেট হাউসে সারা বছর বিভিন্ন সবজি ও ফুল চাষ করছেন। সাপাহারের গোডাউনপাড়ায় তার মালিকানাধীন বরেন্দ্র অ্যাগ্রো পার্কে ১০৭ বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন মিশ্র ফলবাগান। সেই বাগানটির একটি অংশে একটি ছোট ঘর তৈরি করা হয়েছে। ঘরটির চারপাশের দেয়াল ও ছাদে সাদা রঙের ফাইবার গ্লাস ব্যবহার করা হয়েছে। ঘরের ভিতরে সারি করে রাখা র্যাক ও মেঝেতে বরই, টম্যাটো, কলা, অর্জুন বৃক্ষের ছাল, নিমপাতা, পেয়ারা পাতা, কলার খোসা ও আদা শুকানো হচ্ছে। সোহেল রানা বলেন, খাদ্যপণ্য শুকানোর কাজে ব্যবহৃত আইওটিভিত্তিক বিশেষ ধরনের একটি বদ্ধ ঘরকে বলা হয় স্মার্ট ড্রায়ার ঘর। স্মার্ট টেকনোলজি ব্যবহার করে ঘরটিকে অটোমেশন (স্বয়ংক্রিয়) করা হয়েছে। ফলে ড্রায়ার ঘরটি নিজের ড্রায়িং এনভায়ারমেন্ট নিজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। উদ্ভাবিত ড্রায়ারটির ছাদে সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে। যান্ত্রিক ঘরটিতে দুটি এক্সজোস্ট ফ্যান ব্যবহার করা হয়েছে যা খাদ্যপণ্য থেকে বের হওয়া পানি দ্রুত সময়ের মধ্যে বাইরে বের করে দেবে এবং হিউমিডিটি নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। খাদ্যের গুণগতমান রক্ষায় ঘরের তাপমাত্রা কমানোর জন্য রয়েছে দুটি কুলিং ফ্যান। আইওটি বেইসড এই ড্রায়ারে মোবাইলের মাধ্যমে তাপমাত্রা কিংবা আর্দ্রতা কন্ট্রোল করা হয়। তিনি আরও বলেন, স্মার্ট ড্রায়ারে টম্যাটো, লেবু, কলা, অর্জুনের ছাল, নিমপাতা, সজনে পাতাসহ বিভিন্ন ভেষজ উদ্ভিদ ও খাদ্যপণ্য শুকাতে ৩০ থেকে ৫০ ঘণ্টা সময় লাগে। ড্রায়ার দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা খাদ্যপণ্য শুকানো যায়। এখানে খাদ্যের মান ঠিক থাকে আবার সময়ও কম লাগে। সোহেল রানা ইতোমধ্যে ভেষজ উদ্ভিদ ড্রাই করে সেগুলোকে ব্লেন্ড করে পাউডার হিসেবে বাজারজাত করছেন। বরই, লেবু, ফুলকপি স্লাইচ করে শুকিয়ে বিক্রি করছেন। প্রক্রিয়াজাত করা খাদ্যপণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে ড্রায়ারে ভেষজ গুণসম্পন্ন আদা, অর্জুন গাছের ছাল, সজনে পাতা, নিমপাতা, পরিপক্ব কাঁচা কলা, পেয়ারা পাতা, তেলাকুচা পাতা ও অ্যালোভেরা শুকিয়ে সংরক্ষণ করছেন। পরে শুকনো ভেষজ উপাদানগুলোকে ব্লেন্ড করে পাউডার হিসেবে বাজারজাত করা হচ্ছে।