রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার নবুওছিমদ্দিনপাড়া এলাকার গৃহবধূ জাসমা আক্তার। নিজের ইচ্ছা ও মনোবল কাজে লাগিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট ও জৈবসার উৎপাদন শুরু করেন। পেয়েছেন সাফল্য। নারীদের স্বাবলম্বী করতে তার প্রতিষ্ঠান থেকে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে...
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার নবুওছিমদ্দিনপাড়া এলাকার গৃহবধূ জাসমা আক্তার (৩৫)। স্বামীর সংসারে গিয়ে এসএসসি পাস করেন তিনি। পড়ালেখা করতে চেয়েছিলেন কিন্তু বিভিন্ন বাধার কারণে সম্ভব হয়নি। প্রবল ইচ্ছাশক্তিতে নিজের উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি। নিজের ইচ্ছা ও মনোবল কাজে লাগিয়ে ২০২১ সালে স্বামী মাহবুবুল আজম থেকে নেন ৩০ হাজার টাকা। বিভিন্ন সময়ে নিজের কাছে সঞ্চয় করা ২০ হাজার টাকাসহ ৫০ হাজার টাকা মূলধন নিয়ে বাড়ির আঙিনায় শুরু করেন ভার্মি কম্পোস্ট ও জৈব সার উৎপাদন। নিজের তৈরি জৈব সার বিক্রি করতে কৃষকদের পরামর্শ দেন জাসমা আক্তার। প্রত্যন্ত অঞ্চলে কৃষকদের সাড়া না পেয়ে পড়েন বিপাকে। এরপর গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে পরামর্শ চান তিনি। কৃষি কর্মকর্তা জাসমা আক্তারের ২৭ মণ জৈবসার বিক্রির সহযোগিতা করেন। জাসমা আক্তার বলেন, ‘আমাদের পাশের জেলা ফরিদপুর। সেখানে তানিয়া কেচো কম্পোস্ট সার তৈরি করে বিক্রি করতেন। আমি তাকে অনুকরণ করি। এরপর ২০২১ সালে আমি কেচো কম্পোস্ট সার উৎপাদন শুরু করতে যাই। প্রথমে অনেক বাধা-বিপত্তির মধ্যে পড়তে হয়। বর্তমানে আমার কারখানায় তিনজন নারী কাজ করেন। হোম ডেলিভারি দেওয়ার জন্য একজন পুরুষ আছে। প্রতি মণ সারের দাম মাত্র ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি মাসে ৪০০ বস্তা গোবর প্রক্রিয়াজাত করে সার উৎপাদন করা হয়। উৎপাদন খচর, শ্রমিকের বেতনসহ বিভিন্ন খরচ বাদ দিয়ে মাসে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা লাভ থাকে।’ তিনি আরও বলেন, ‘নারীদের স্বাবলম্বী করতে আমার প্রতিষ্ঠান থেকে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।’ সেখান গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার পাশের একটি ঘরে জাসমা আক্তারের কেচো কম্পোস্ট সারের কারখানা। তার এক পাশে বিক্রির জন্য অফিস করা হয়েছে। কারখানা থেকে ১০০ গজ দূরে বাড়ি। সেখানে বেশ কয়েকটি হাউসে গোবর রাখা হয়েছে। তার পাশে রয়েছে কেচো। স্থানীয় কয়েকজন কৃষক বলেন, রাজবাড়ীতে জৈব সারের ব্যবহার তেমন হয় না। জমিতে কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার করতে হয় এটা জানা ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে জানতে পারি জৈব সার দিলে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায়। এরপর গোয়ালন্দ কৃষি অফিস থেকে আমাদের জৈব সার ব্যবহারের পরামর্শ প্রদান করেন। এরপর থেকে আমরা জাসমা আপার কাছ থেকে জৈব সার ক্রয় করে জমিতে প্রয়োগ করি। জাসমার জৈব সার এলাকায় বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খোকনউজ্জামান বলেন, ‘কৃষি উদ্যোক্তা তৈরিতে কৃষি বিভাগ পরামর্শ ও সহযোগিতা করে থাকেন। জাসমা আক্তার ২০২১ সালে সে ভার্মি কম্পোস্ট ও জৈবসার উৎপাদন শুরু করেন। আমরা পরবর্তীতে জৈব সার তৈরির ঘর, রিং ও মেশিনের ব্যবস্থা করেছি।’