শীতের সকালে গ্রামের মেঠোপথ ধরে ছোট ছোট পায়ের স্পর্শে জেগে উঠছে নিস্তব্ধ প্রকৃতি। অভিভাবকদের হাত ধরে স্বপ্নের পানে ছুটছে শিশুরা। নতুন বইয়ের ঘ্রাণ আর অজানা জগতের আহ্বান যেন তাদের চোখে এক নতুন আলোর বার্তা ছড়াচ্ছে। বই বিতরণের এই দিনটি শুধু শিক্ষার নয়, বরং এক নীরব বিপ্লবের প্রতীক। যেখানে শিশুদের কল্পনায় ফুটে ওঠে অজেয় ভবিষ্যতের স্বপ্ন। বছরের শুরুতে নতুন বইয়ের ঘ্রাণ পেতে বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুলের শিক্ষার্থীদের আনন্দের যেন সীমা নেই। তাইতো নতুন বছরের নতুন বইয়ের ঘ্রাণে বিদ্যালয়ের পানে ছুটে যেতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের।
জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার কাঁচাকুল গ্রাম জেলা শহর থেকে দূরে এক প্রত্যন্ত এলাকা। এখানে প্রকৃতি যেন নিজ হাতে গড়ে তুলেছে এক অনন্য সৌন্দর্যের মঞ্চ। কিন্তু এই রূপ-লাবণ্যের ছায়ায় লুকিয়ে রয়েছে শিক্ষার প্রতি মানুষের দীর্ঘদিনের বঞ্চনা। সরকারি কিংবা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাবে এখানকার শিশু-কিশোররা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ছিল। তবে এই প্রান্তিক এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়ানোর অঙ্গীকার নিয়ে এগিয়ে এসেছে বসুন্ধরা গ্রুপ। তাদের আর্থিক সহযোগিতায় স্থাপিত ‘বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুল’ বর্তমানে এই অঞ্চলের নতুন প্রজন্মের জন্য আলোকবর্তিকা হয়ে উঠেছে।
রবিবার (২৬ জানুয়ারি) সকালে সাড়ে নয়টায় বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুলে শিশু শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। বই বিতরণ অনুষ্ঠান উপলক্ষে প্রভাতে কাঁচাকুল এলাকার শান্ত পরিবেশে যেন ছড়িয়ে পড়েছে এক আলাদা উদ্দীপনা। বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুলে আয়োজন করা হয়েছে নতুন বই বিতরণ অনুষ্ঠানের। সূর্যোদয়ের আলো ঠিক যেমন নতুন দিনের বার্তা নিয়ে আসে, তেমনি নতুন বইয়ের এই উৎসব যেন জীবনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।
প্রতিবছরের মতো এবারও বই বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক কালেরকন্ঠ ক্ষেতলাল, জয়পুরহাট প্রতিনিধি এম রাসেল আহমেদ। তার উপস্থিতি যেন গোটা অনুষ্ঠানে এক আলাদা মাত্রা এনে দেয়। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে তাদের উৎসাহিত করেন তিনি। এসময় তিনি বলেন, শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে বসুন্ধরা গ্রুপের যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। এই স্কুলের মাধ্যমে কাঁচাকুল গ্রামের শিশুদের জন্য ভবিষ্যৎ নির্মাণের পথ সুগম হয়েছে। এই শিশুদের চোখে স্বপ্ন জ্বালানোর কাজটি বসুন্ধরা গ্রুপ যে কাজ শুরু করেছে, তা আমাদেরকেও সবাইকে উদ্বুদ্ধ করে।
বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুলের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকেই এখানকার শিশুদের জীবনে এসেছে এক আমূল পরিবর্তন। কাঁচাকুলের মতো দুর্গম এলাকায় যেখানে শিক্ষার কোনও সুযোগ ছিল না, সেখানে এখন প্রতিদিন বইয়ের পাতায় আঁকা হয় নতুন স্বপ্ন।
স্থানীয় অভিভাবকরা জানান, তাদের সন্তানদের বই হাতে স্কুলে যাওয়ার দৃশ্যটি একসময় ছিল কল্পনার মতো। আজ সেই কল্পনা বাস্তবে রূপ নিয়েছে। এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক রুমা খাতুন বলেন, আগে আমরা ভাবতাম, আমাদের ছেলেমেয়েরা কখনই পড়ালেখা করতে পারবে না। কিন্তু এখন তারা নিয়মিত স্কুলে যায়। আজ যখন নতুন বই পেল, তখন তাদের মুখের হাসি দেখে আমরা নিজেদের ধন্য মনে করি।
নতুন বই পেয়ে আনন্দে আত্মহারা শিক্ষার্থী রিফাহ বলে, নতুন বইয়ের গন্ধ আমার খুব ভালো লাগে। এই বইগুলো দিয়ে আমি অনেক কিছু শিখতে পারব। আমার স্বপ্ন আমি বড় হয়ে ডাক্তার হবো।
নতুন বই বিতরণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলের শিশুরা শুধু বই পায়নি, তারা পেয়েছে স্বপ্ন দেখার সাহস। বসুন্ধরা গ্রুপের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। শিশুদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বসুন্ধরা গ্রুপের এই উদ্যোগ শুধু বই বিতরণেই সীমাবদ্ধ নয়। তাদের লক্ষ্য দীর্ঘমেয়াদি। কাচাকুলের মতো প্রত্যন্ত এলাকায় শিক্ষা বিস্তারের মাধ্যমে তারা একটি শিক্ষিত সমাজ গড়ে তুলতে চায়।
বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুলের প্রধান শিক্ষক হেলেনা আক্তার জানান, “শুধু পাঠ্য বই নয়, এখানে সহশিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমেও শিক্ষার্থীদের সবদিক থেকে উন্নত করার চেষ্টা করা হয়। ছাত্রছাত্রীরা যাতে ভবিষ্যতে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে, সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি আমরা।”
নতুন বছরের প্রথমদিকে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়ার এই আয়োজন যেন কাঁচাকুলের মানুষকে জানিয়ে দিল- অন্ধকার যত গভীরই হোক, শিক্ষার আলো সেই অন্ধকার দূর করবেই।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ