জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) বসুন্ধরা শুভসংঘের একঝাঁক তরুণ সদস্য নিয়ে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে তরুণদের ভাবনা নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। "স্বপ্ন, সাহস আর সৃজনশীলতা—এই তিনে ভর করে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলবে তরুণরাই" এমন বিশ্বাস থেকেই এটি আয়োজন করা হয়।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ৩১৫ নং রুমে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় কেউ গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যাশা, কেউ বাংলাদেশের দারিদ্র্য দূরীকরণে তরুণদের ভূমিকার কথা, কেউ নতুন বাংলাদেশ বিনির্মানে নতুন স্বপ্নে দেখান, কেউ বা আবার তরুণদের দক্ষতার উন্নয়নের নানা পরিকল্পনা ব্যক্ত করেছেন।
জবি শুভসংঘের সভাপতি মো. জুনায়েত শেখের সভাপতিত্বে 'তরুণদের নতুন বাংলাদেশ' শীর্ষক আলোচনাসভায় আরো অংশ নেন কমিটির বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
সভায় শুভসংঘের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তানভীর আনজুম বিশ্বাস বলেন, গণঅভ্যুত্থান আমাদের দেখিয়েছে- বাংলাদেশ এখনও স্বপ্ন দেখতে জানে, জানে ঘুমন্ত বিবেককে জাগিয়ে তুলতে। আমরা যারা এই দেশের ভবিষ্যৎ, সেই তরুণ প্রজন্ম, আজ আমাদের কাঁধে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার দায়িত্ব। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ হবে এক সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র—যেখানে মানুষ কথা বলবে মুক্ত মনে, চিন্তা করবে স্বাধীনভাবে।
সহ সাংগঠনিক সম্পাদক তাহমিদ আব্দুল্লাহ রাদ বলেন, বাংলাদেশ হবে দুর্নীতিমুক্ত ও বৈষম্যহীন—যেখানে সুযোগ ও সেবার সমান অধিকার পাবে শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত প্রতিটি মানুষ। যেখানে শিক্ষার মান হবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের, গবেষণায় আমরা প্রতিযোগিতা করবো বিশ্বের সাথে, আর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে যোগ্যতার ভিত্তিতে।
শুভসংঘের সদস্য আবিদা সুলতানা আখি বলেন, আমরা চাইলে উদ্যোক্তা হয়ে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারি। চাকরি খুঁজে না বেড়িয়ে, চাকরি দেওয়ার মানুষ হতে পারি। আমরা চাইলে প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রামের কৃষককে শহরের বাজারের সাথে যুক্ত করতে পারি, শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে পারি প্রত্যন্ত অঞ্চলে।
আইন বিষয়ক সম্পাদক সাকেরুল ইসলাম বলেন, আমরা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে দরিদ্র শিশুদের শিক্ষায় ফিরিয়ে আনতে পারি, সচেতনতা বাড়াতে পারি স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ে, সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিতে পারি যেকোনো দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে। তরুণ মানেই স্বপ্ন, সাহস আর সৃজনশীলতা। আমরা যদি আমাদের মেধা, সময় আর প্রযুক্তিকে সঠিকভাবে কাজে লাগাই, তবে একদিন বাংলাদেশের কোনো মানুষ আর 'গরিব' নামে পরিচিত হবে না।
আরেক শিক্ষার্থী ও নবীন সদস্য রাফিজুল ইসলাম বলেন, দারিদ্র্য দূরীকরণে তরুণদের অংশগ্রহণ শুধু নয়, পাশাপাশি দরকার বিভিন্ন বিষয়ের দক্ষতা সম্পন্ন জ্ঞান। আমরা যদি প্রযুক্তি, যোগাযোগ, উদ্যোক্তা দক্ষতা ও নেতৃত্বগুণে পারদর্শী না হই—তাহলে আমরা পরিবর্তন আনতে পারবো না। কাজেই দরকার বাস্তবমুখী শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও উদ্যোগমূলক পরিবেশ।রদক্ষ তরুণ মানেই একটি দক্ষ বাংলাদেশ। আর দক্ষ বাংলাদেশই পারবে দারিদ্র্যকে ইতিহাসের পাতায় পাঠিয়ে দিতে।
বক্তব্যে বসুন্ধরা শুভসংঘের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মো. জুনায়েত শেখ বলেন, আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো আমাদের তরুণ সমাজ। এই তরুণরাই পারে আধুনিক, শিক্ষিত ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে। তবে তার জন্য প্রয়োজন মানসম্পন্ন শিক্ষা, দক্ষতা বৃদ্ধি, এবং সুযোগ তৈরি। একজন শিক্ষিত, সচেতন ও দক্ষ তরুণ কেবল নিজের জীবন বদলায় না—সে সমাজকেও বদলায়। দারিদ্র্য দূরীকরণে তরুণদের উদ্যোক্তা হওয়া, প্রযুক্তি ব্যবহারে পারদর্শী হওয়া এবং মানবিক নেতৃত্ব দেওয়া এখন সময়ের দাবি।
তিনি বলেন, আমি আশা করি, আজকের এই সভা আমাদের সবাইকে অনুপ্রাণিত করবে নতুন বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকারে। আমরা সবাই মিলে একটি শিক্ষিত, দক্ষ, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবো ইনশাআল্লাহ।
বিডি প্রতিদিন/এএ