জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি-সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে ছাত্রলীগ থেকে অনুপ্রবেশকারী ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা। এক সময়ে যারা ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ছিল, তারাই এখন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের কমিটিতে পদ পেতে জোর লবিং শুরু করেছে।
বাংলাদেশ প্রতিদিনের অনুসন্ধানে জানা গেছে, বর্তমান শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানাসহ কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী ছাত্রদলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে। এদের মধ্যে শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নির্ঝর আলমের হাতে রাজনীতি শুরু করেন শহীদ সালাম-বরকত হলের ছাত্র সোহেল রানা। পরে ওই হলে মোবাইল ফোন চুরির অপরাধে তাকে হল থেকে বের করে দিলে তিনি আল বেরুনী হলের ছাত্রলীগ নেতা এমিলের কাছে আশ্রয় নেন এবং নির্ঝর-এমিলের সঙ্গে ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু করেন। পরবর্তীতে ২০১০ সালের ৫ জুলাই ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের ভয়াবহ সংঘর্ষে সম্পাদক গ্রুপের অনুসারী সোহেল হামলায় অংশ নেন। ওই ঘটনায় ছাত্রলীগ সভাপতি গ্রুপের পক্ষে আব্দুল মালেক বাদী হয়ে সোহেলসহ সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের ১২ জনকে আসামি করে মামলা করেন। সে মামলায় ছাত্রলীগ কর্মী সোহেল সাত নম্বর আসামি ছিল। তবুও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর এলাকায় বাড়ি হওয়ার সুবাদে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের কমিটিতে যুগ্ম সম্পাদক পদ পান। আসন্ন প্রস্তাবিত খসড়া কমিটিতে তাকে সভাপতি পদ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এছাড়া প্রকৃত ছাত্রদল নেতাকর্মীরা জাবি ক্যাম্পাসে আসতে না পারলেও ছাত্রলীগের সঙ্গে আতাঁত করে সোহেল ক্যাম্পাসে মাঝে মধ্যে বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরবর্তীতে সেই বিক্ষোভ মিছিলের ছবি কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতাদের কাছে পৌঁছে দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তবে এসব অভিযোগ শুরু থেকেই অস্বীকার করে আসছেন সোহেল। এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
আরেক ছাত্রলীগ নেতা মুরাদ হোসেন হীরা প্রথম বর্ষে ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু করেন। ছাত্রলীগের মিছিল-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা যায় তাকে। পরবর্তীতে বিএনপি ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা দেখে শুরু করেন ছাত্রদলের রাজনীতি। অনুপ্রবেশকারী হওয়ায় ছাত্রদলের কোনো কমিটিতেই পদ পাননি তিনি। তবে আসন্ন প্রস্তাবিত খসড়া কমিটিতে তাকে সাধারন সম্পাদক পদে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে অভিযোগ অস্বীকার করে হীরা বলেন, এটা ভুল তথ্য। আমি ছাত্রলীগের সঙ্গে কখনো রাজনীতি করিনি।
এদিকে, ছাত্রলীগ মুক্ত জাবি ছাত্রদল দাবি করেছে দলের ত্যাগী কর্মীরা। অছাত্র, অনুপ্রেবেশকারী ও বিতর্কিত নেতাদের বাদ দিয়ে নিয়মিত ছাত্র ও ত্যাগী নেতাদের দায়িত্ব দিলে ফের ঘুঁরে দাড়াবে ছাত্রদল। জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের শিক্ষকরাও দাবি করেছেন, ছাত্রলীগ থেকে অনুপ্রবেশকারীদের বাদ দিয়ে নিয়মিত ছাত্রদের দিয়ে কমিটি গঠন করা হলে সুযোগ্য নেতৃত্ব উঠে আসবে। এমনটাই কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে প্রত্যাশা তাদের।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০১১ সালের ২৭ এপ্রিল জাকিরুল ইসলামকে সভাপতি ও আবু সাঈদ ভূইয়াকে সাধারণ সম্পাদক করে জাবি শাখা ছাত্রদলের ১০ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়।
বিডি-প্রতিদিন/ ২৭ জানুয়ারি, ২০১৬/ রশিদা