জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ১ম বর্ষে ভর্তির সুযোগপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া 'অতিরিক্ত ফি' বাতিলের দাবিতে সৃষ্ট আন্দোলন বন্ধের জন্য হুঁশিয়ারী দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আন্দোলন প্রত্যাহার না করলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ১ম বর্ষে ভর্তির সুযোগপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে বিভিন্ন অংকের বিভাগ উন্নয়ন ফি। যার পরিমাণ ৫-১০ হাজার টাকা। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে প্রশাসন এর পরিমাণ সর্বোচ্চ ৮ হাজার টাকা ঘোষণা করে। কিন্তু এই ফিকে অবৈধ দাবি করে তা সম্পূর্ণরূপে বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। আর এ আন্দোলন প্রত্যাহার করে না নিলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে ‘হুশিয়ার’ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কার্যালয় থেকে গণমাধ্যমে প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই সতর্কবার্তা পাঠানো হয়। তবে এই সতর্ক বার্তার বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতারা।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আন্দোলনকারীদের প্রতি বলা হয়েছে, আন্দোলন প্রত্যাহার করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আগত শিক্ষার্থীদেরকে ভর্তির ক্ষেত্রে সহযোগিতা করার জন্য। তা না করে ভর্তি প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটালে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইন আনুযায়ী কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া প্রশাসনের পক্ষ হতে ভর্তি কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই সতর্কবাতাকে দৃষ্টিকটু উল্লেখ করে জাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুর রহমান জনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, “এতে করে প্রশাসন এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে দূরত্ব আরো বেড়ে যাবে। প্রশাসনের উচিৎ ছিল আন্দোলনকারীদের সাথে বসে গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমে বিষয়টি মিমাংসা করা।”
ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি দীপাঞ্জন সিদ্ধান্ত কাজল এই সতর্কবার্তাকে গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতি হুমকিস্বরূপ উল্লেখ করে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, “অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন প্রত্যেকের গণতান্ত্রিক অধিকার। আমাদের নৈতিক দাবির এই আন্দোলনে যদি এভাবে হুমকি দেয়া হয় তবে বলতে হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনই অবৈধ। কেননা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী সিনেটে একজন ছাত্র প্রতিনিধি থাকার কথা। অথচ শিক্ষার্থীদেরকে দমিয়ে রাখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গত ২৬ বছর ধরে জাকসু নির্বাচন দিচ্ছে না। বিভাগ উন্নয়ন ফি বাতিলের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো।”
প্রসঙ্গত, বিভাগ উন্নয়ন ফি- কে অবৈধ দাবি করে গত ৮ ডিসেম্বর জাবির অগ্রণী ব্যাংকের ভবন অবরোধ করে রাখে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। এতে করে ভর্তি হতে না পেরে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আগত ১ম মেধা তালিকায় ভর্তির সুযোগপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা ফিরে যায়।
পরে গত ১১ ডিসেম্বর ভর্তি পরিচালনা কমিটির জরুরি সভায় ১৮-২২ ডিসেম্বর পুনরায় ভর্তি কার্যক্রম শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে এবারে অগ্রণী ব্যাংকের যে কোনো শাখায় এবং শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ বিভাগেই বিভাগ উন্নয়ন ফি দেয়ার সুযোগ রেখেছে প্রশাসন।
বিপরীতে গত ১২ ডিসেম্বর নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। যার অংশ হিসেবে আগামীকাল ১৫ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে লাগাতার প্রশাসনিক ভবন অবরোধ।