বছর ঘুরে আবারো ফিরে এসেছে মহান ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত মাস- ফেব্রুয়ারি। মাসটিতে বাঙালি জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগকে। যাদের বুকের রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে। তাদের স্মরণে ফুলে ফুলে ভরে উঠবে দেশের সব শহীদ মিনারের বেদী। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর 'একুশে ভাস্কর্য'টি পড়ে থাকবে অবহেলায়!
জাবির প্রধান ফটক দিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করার পর সবার প্রথমেই চোখে পড়ে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে অবস্থিত মহান ভাষা আন্দোলনের প্রতীক 'অমর একুশে' ভাস্কর্যটি। ভাষা আন্দোলনের প্রতিবাদী মিছিলে শত্রুর গুলিতে মায়ের কোল ভেঙে মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে বাংলার এক দামাল ছেলে- এমনটাই এক চিত্রকে কংক্রীটের গায়ে অতি যত্নে ফুটিয়ে তুলেছেন ভাস্কর জাহানারা পারভীন।
১৯৯১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নির্মিত হয় ভাস্কর্যটি। কিন্তু প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংস্কারের অভাবে এটির এখন বেহাল দশা। অযত্ন আর অবহেলায় দীর্ঘ দিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে এটি। খসে পড়তে শুরু করেছে এর বিভিন্ন অংশের পলেস্তারা। স্থাপন করার ২৬ বছরেও বাস্তবায়িত হয়নি নকশানুযায়ী পুরো প্রকল্পের কাজ। রং জ্বলে গিয়ে ছাই বর্ণ ধারণ করার পাশাপাশি মায়ের আঁচলের অংশের পলেস্তারা খসে বেরিয়ে পড়েছে এর ভেতরের রড। ভাস্কর্যটির বেদীতে যত্রতত্র লাগানো হচ্ছে বিভিন্ন সংগঠন ও অনুষ্ঠানের পোস্টার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত শুধুমাত্র এই ভাস্কর্যটি নিয়ে যতগুলো সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তা অন্য কোনো বিষয় নিয়ে হয়নি। জাবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও এটি সংস্কারের জন্য বরাবরই প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়ে আসছে। তবুও টনক নড়েনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। এসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ভাস্কর্যটির মূল নকশা বাস্তবায়নের পাশাপাশি সংস্কার কাজের জন্য ৩৫ লক্ষ টাকার প্রয়োজন। আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অনুদানের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। স্পন্সর পাওয়া গেলেই কাজ শুরু করা হবে।
এবিষয়ে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি দীপাঞ্জন সিদ্ধান্ত কাজল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শিক্ষার্থীরা নানাবিধ সংকটের মধ্য দিয়ে দিন পার করছে। আবাসিক হল ও গ্রন্থাগারে আসন সংকট, ক্লাসরুম সংকট, পরিবহন সংকট বিষিয়ে তুলেছে তাদের পড়াশোনার পরিবেশকে। এসব সমস্যার সমাধান না করে শিক্ষার্থীদের জন্য এই মুহূর্তে অপ্রয়োজনীয় কনভেনশন সেন্টার করতে প্রশাসন স্পন্সর ঠিকই খুঁজে পায়। অমর একুশে আমাদের গর্বের প্রতীক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবহেলায় এটির যে দশা হয়েছে তা আমাদেরকে লজ্জা দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিৎ কোনো স্পন্সরের উপর নির্ভর না করে এটি সংস্কারের প্রয়োজনীয় অর্থ রাষ্ট্রের কাছ থেকেই আদায় করা।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার