গত কয়েক বছরে সারাদেশের বিভিন্ন জনপরিসরগুলোকে সঙ্কুচিত করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রশাসন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির জনপরিসরকে সঙ্কুচিত করে বহুতল ভবন নির্মাণ করে সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক পরিবেশকে নষ্ট করতে চায়। ইতিহাস ঐতিহ্যের পাঁজর ভেঙে কোনভাবেই টিএসসির উন্নয়ন চাই না।
সম্প্রতি গণপূর্ত অধিদফতরের অধীনে টিএসসি সংস্কারের উদ্যোগ বিষয়ে আয়োজিত শুক্রবার টিএসসির সামনে এক উন্মুক্ত আলোচনায় এসব কথা বলেন বক্তারা। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট এই আলোচনার আয়োজন করে।
সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সালমান সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক প্রগতি বর্মণ তমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ শাহরিয়ার, শিশু ও শিক্ষা রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক রাখাল রাহা, সাবেক ছাত্রনেতা ও গল্পকার মাহমুদুল হক আরিফ, ইঞ্জিনিয়ারিং ও আর্কিটেক্টস ডেভেলপমেন্টের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল্লামা আল রাজি, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ঢাকা মহানগর ইনচার্জ সুস্মিতা রায় সুপ্তি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক রাজিব কান্তি রায় এবং ডাকসু আন্দোলনকারী ওয়ালিদ আশরাফ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে মোহাম্মদ আযম বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উপলক্ষে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হতে পারতো, এখানে সরকার আন্তর্জাতিক না হোক উপমহাদেশীয় মানের একটা ল্যাব করে দিবে। আমাদের পড়ার মত কোন লাইব্রেরি নাই। চাইলেই বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত যাবতীয় কলা মেনে বৃহৎ লাইব্রেরি কমপ্লেক্স নির্মাণ করা যেত। কিন্তু সেরকম কোন পরিকল্পনা আমরা দেখছি না। বরং বড় বড় বিল্ডিং নির্মাণের কথা শুনি। টিএসসি ভেঙে বহুতল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা এরই অংশ। বিশ্ববিদ্যালয় কোন সিদ্ধান্ত নিতে পদ্ধতিগত মত উৎপাদন করতে পারছে না বলে প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিচ্ছে। বিদ্যমান অবস্থায় যদি টিএসসি সংস্কার করতে হয়, তাহলে সকল পক্ষের মতকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সবসময় শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ীই হতে হবে তা নয়, বরং সিদ্ধান্তে তার প্রতিফলন থাকতে হবে।
রাখাল রাহা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন বলতে শুধু বড় বড় ভবন নির্মাণ করা হয়। এরকম উন্নয়নের কথা যখন কর্তৃপক্ষ যখন আমাদের শোনায়, তখন আমরা ভয়ই পায়। কারণ এটা শেষ পর্যন্ত সামাজিক বিজ্ঞান ভবনের মতই হয়। যেমন টিএসসির পিছনে লম্বা লম্বা যে ভবনগুলো হয়েছে, সেগুলো আমাদের দিকে তাকিয়ে অট্টহাসি দেয়। তারা বলে, 'তোমরা তো বায়ান্ন একাত্তরের কথা বল। এই নাও, একদলা থু থু দিলাম!'
আলোচনায় বক্তারা বলেন, টিএসসি ভেঙে ফেলে সেখানে ২০ তলা ‘আধুনিক ভবন’ তৈরির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলেও এর নকশা কেমন হবে সে সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ কোনো ধারণা দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এত বড় একটি সিদ্ধান্ত অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশীজনসহ বিশেষজ্ঞদের কোন মতামত নেওয়া হয়নি। এমন সিদ্ধান্ত প্রশাসনের অগণতান্ত্রিক আচরণেরই পরিচায়ক। এ সম্পর্কে স্থপতিবিদদের অনেকেই গণমাধ্যমে তাদের মতামত জানিয়েছেন। তাদের বক্তব্য-টিএসসির স্থাপত্যরীতি ও গঠনশৈলী অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। ফলে ২০ তলা ভবন নির্মাণ নিঃসন্দেহে এর মূল অবকাঠামো নষ্ট ও জনপরিসরকে ধ্বংস করবে। এর মূল কাঠামোর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ সর্বোচ্চ চার তলা ভবন এখানে নির্মাণ করা যেতে পারে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন