বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার অনুমতি প্রদানের দাবি জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল।
সোমবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার অনুমতি প্রদানের দাবিতে পালন করা এক মানববন্ধনে এ দাবি জানান তারা। মানববন্ধনে সাদা দলের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ এবং বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনে বক্তারা অবিলম্বে খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার অনুমতি প্রদানের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। অন্যথায় প্রতিহিংসার রাজনীতির ফলাফল ভালো কিছু বয়ে আনবে না বলে মনে করিয়ে দেন বক্তারা।
সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব ড. মহিউদ্দিনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সাদা দলের সাবেক আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, সাদা দলের সাবেক আহ্বায়ক ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন খান, সাদা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান, ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. এ বি এম শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান বলেন, শিক্ষকদের দায়িত্ব হচ্ছে পাঠদান, গবেষণা এবং পরীক্ষা নেওয়া। অত্যন্ত মনোবেদনা ও কষ্ট নিয়ে আমরা আজ এখানে উপস্থিত হয়েছি। এদেশের যত ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দল রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম বৃহৎ দল বাংলাদেশ জাতীয়তবাদী দলের চেয়ারপারসন, বাংলাদেশের তিন তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী, ৮০ এর দশকে স্বৈরাচার হটাও আন্দোলনের নেতৃত্ব প্রদানকারী এবং পরবর্তী সকল গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারী একজন মহীয়সী নেত্রী। তাকে সাধারণভাবে বিবেচনা করলে হবে না। উনাকে নিয়ে দায়িত্বশীল জায়গা থেকে অত্যন্ত নিন্দনীয় ভাষায় তিরস্কার করা হচ্ছে তার জন্য আমরা নিন্দা জানাই। দায়িত্বশীল জায়গা থেকে শুধু খালেদা জিয়াকে নয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে নিয়েও কটূক্তি করা হচ্ছে আমরা তাদের এ কটূক্তিকে ধিক্কার জানাই।
লুৎফর রহমান আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা লক্ষ্য করছি বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য আপিল করা হয়েছে, পরিবার থেকে আপিল করা হয়েছে। কিন্তু সরকার কোনও অবস্থাতেই নমনীয় হচ্ছে না। এমন একটি সময়ে আমরা এখানে খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার অনুমতি প্রদানের দাবিতে একত্রিত হয়েছি। সরকার ইতিবাচকভাবে এটি বিবেচনা করবেন বলে আশ প্রকাশ করেন তিনি।
অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন খান বলেন, চিকিৎসা হলো একটি মৌলিক মানবাধিকার। মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে তার কি পরিণতি হয় দেশে দেশে, রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে এবং পৃথিবীতে আমরা দেখেছি। চিকিৎসার মতো সার্বজনীন মানবাধিকার প্রচলিত কোনও কনভেনশনাল অথবা আন কনভেনশনাল আইন দ্বারা কোনও প্রকার বাধা হতে পারে না। সুতরাং আইনের দোহাই দিয়ে তাকে (খালেদা জিয়া) মৌলিক মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত না করার আহ্বান জানান প্রবীণ এ অধ্যাপক।
অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি যদি সর্দিজ্বরে ভুগে তখন তাকে পাঠানো হয় জার্মানিতে। আল্লাহর রহমতে উনি সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসেন। গত ১৩-১৪ বছরে অবৈধ সম্পদে ভরা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের মন্ত্রী-চামচারা যখন অবৈধ টাকায় খাওয়া দাওয়া করে পেটের পীড়ায় ভুগে তখন তাদেরকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে চিকিৎসা নিতে নিয়ে যাওয়া হয় সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া কিংবা থাইল্যান্ডে। অথচ বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে একজন সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে না। আইনি বাধার দোহাই না দিয়ে অবিলম্বে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার অনুমতি প্রদানের আহ্বান জানান এ বি এম ওবায়দুল।
বিডি প্রতিদিন/কালাম