দীর্ঘ চার বছরে হয়নি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীরের ভাঙা দেয়ালের মেরামত কাজ। একের পর এক দরপত্র আহ্বানের কথা বলে পার হয়ে গেছে বছরের পর বছর। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী বলছেন দরপত্রটি আগামীকাল পাশ হবে। তবে এ 'আগামীকাল' শেষ হয়নি বিগত চার বছরে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কয়েকবার জানিয়েছেন ভাঙা দেয়ালের কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান প্রকৌশলীকে। তবে প্রধান প্রকৌশলী বলছেন দরপত্রের দীর্ঘ সুত্রতার জন্য এখনো দরপত্রটি পাশ হয়নি। এ নিয়ে একাধিকবার উপাচার্যের সঙ্গে মিটিং এর কথা বললেও হয়নি কোনো অগ্রগতি। এরমধ্যে ভাঙা দেয়াল টপকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিতরে চুরির ঘটনা ঘটেছে বেশ কয়েকবার।
এদিকে ক্যাম্পাসের সীমানা প্রাচীরের দেয়ালের উপরের নিরাপত্তা বেষ্টনীটি ভেঙে পড়েছে। অধিকাংশ দেয়ালে নেই কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনী কিংবা তারকাঁটার বেড়া। এতে যে কেউ সহজে দেয়াল টপকে প্রবেশ করতে পারবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে। যার ফলে অনিরাপদে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কমনরুম ব্যবহার করা কয়েক হাজার ছাত্রী।
সোমবার সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় গেটের পাশে সদরঘাট অভিমুখী রাস্তার পাশে থাকা ক্যাম্পাসের জ্বীম-ওয়াসি চত্বর থেকে শুরু করে প্রায় ৮০ মিটারের বেশি সীমানা প্রাচীরের মধ্যে নির্মিত লোহার বেষ্টনীটি ভেঙে পড়েছে এবং কিছু অংশে লোহার বেষ্টনী একেবারে নেই।
এছাড়াও সীমানা প্রাচীরের কিছু কিছু অংশের পিলারসহ নিরাপত্তা বেষ্টনীগুলো ভেঙে পড়ে আছে এখনো পর্যন্ত। এদিকে দেয়ালের পাশ ঘিরে রয়েছে ছাত্রীদের কমনরুম। যার ফলে ঘটতে পারে যেকোনো সময় অনাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা- এমনটা বলছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
তবে এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বরত কর্তা-ব্যক্তিরা দেখেও না দেখার ভান করছেন বলে দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। যদিও এসব বিষয়ে একাধিক বার গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলেও কোনো ধরনের প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় গেটের পাশে রয়েছে সদরঘাট, বাংলা বাজার, ইসলামপুর, পাটুয়াতলীসহ বিভিন্ন স্থান অভিমুখী রাস্তা। এসব রাস্তায় পারাপার হওয়া পথচারীরা প্রতিনিয়ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানাপ্রচীরের সঙ্গে থাকা ফুটপাত দিয়ে চলাচল করে। যার ফলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হন। সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় রয়েছেন ছাত্রী কমনরুম ব্যবহারকারীরা।
কমনরুমে আসা একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা সকালবেলা বাসে করে অনেকে দূর-দূরান্তে থেকে ক্যাম্পাসে আসি। তখন কারও ক্লাস থাকে আবার কারও ক্লাস থাকে না। সেক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়ে ছোট্ট পরিসরের এ কমনরুমে সবাই নিজেদের মতো করে সময় কাটাই। কিন্তু রাস্তার পাশের ড্রেনের কাজের সময় ফুটপাত উঁচু করায় সাধারণ পথচারীরা সহজে কমনরুমের করিডর দেখতে পায়।
শিক্ষার্থীরা আরও জানান, দেয়ালের উপরের অংশে লোহার বেষ্টনী ভেঙে পড়ে আছে অনেক দিন ধরে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কোনো মাথা ব্যাথা নেই। এজন্য অনেক মেয়েরা এখন কমনরুমে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হয়তো ভুলে গেছে এখানে একটা কমনরুম আছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ফারজানা রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের পরিধি স্বল্প পরিসরে হওয়ায় নানাবিধ সংকট রয়েছে। এরমধ্যে আমরা এ ছোট একটি কমনরুম ব্যবহারের সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হতে যাচ্ছি। আমাদের কমনরুমের পাশে সদরঘাট অভিমুখী রাস্তা। এ রাস্তার পাশে থাকা ফুটপাতগুলো এতো উঁচু যে কেউ রাস্তার পাশ থেকে আমাদের কমনরুম দেখতে পারে এবং কেউ চাইলে দেয়াল টপকে ভিতরে প্রবেশ করতে পারে।
ফারজানা আরও বলেন, আমরা মেয়েরা সকালবেলা বাসে করে বিভিন্ন দূরদূরান্ত থেকে ক্যাম্পাসে এসে ক্লাসে যাওয়ার আগে পরে কমনরুমে এসে একটু সাজসজ্জা করি, কেউ গল্পের বই পড়ে এবং কেউ গান করে কিন্তু এখন আর সেটা করতে পারি না। আমাদের কমনরুমের পাশের সীমানা প্রাচীরের লোহার বেষ্টনী তো নেই বটে কোনো ধরনের নিরাপত্তা নেই এখন কমনরুমে। যে কোনো সময়ে ঘটে যেতে পারে অনাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা।
নিয়মিত কমনরুম ব্যবহার করা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের নবীন শিক্ষার্থী সায়মা ইয়ান বলেন, আমরা মেয়েরা সাধারণত কমনরুমে এসে যেকোনো অবস্থায় নিজেদের মতো করে সময় কাটাই। অনেকে বই পড়ে কিংবা নিজেদের সুবিধা মতো করিডরের বারান্দায় গল্প করে। কিন্তু বেশকিছুদিন ধরে আমাদের কমনরুমের আশেপাশের অংশ জুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়ালের নিরাপত্তা বেষ্টনীটি নেই। যা নিয়ে আমরা বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান প্রকৌশলী মো, হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, সীমানা প্রাচীরের কাজের জন্য দরপত্র জমা দিয়েছি আমি। আগামীকাল মিটিং হবে। দরপত্রটি এখনো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। উপাচার্য স্যার বাকি সিদ্ধান্ত নিবেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. ইমদাদুল হকের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল