চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) পরিচালিত ৪৭টি স্কুলের দশম শ্রেণির নির্বাচনী পরীক্ষার সাড়ে ৭ হাজার শিক্ষার্থীর প্রায় ৮০ হাজার পরীক্ষার খাতার ফলাফল প্রথমবারের মত অনলাইনে প্রকাশ করা হবে। ইতোমধ্যে সামগ্রিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন ও যাচাই-বাছাই শেষে ফলাফল প্রস্তুত করা হয়েছে। চসিক কম্পিউটার ইনস্টিটিউটের পাঁচ প্রশিক্ষক সফটওয়্যারটি তৈরি করেন। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে চসিক মেয়র আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা করার কথা রয়েছে।
চসিক সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে সনাতন পদ্ধতিতে পরীক্ষার ফলাফল বের করতে গিয়ে নানা সমস্যা ভোগান্তিতে পড়ত। এর মধ্যে ছিল এক পরীক্ষার্থীর সঙ্গ অন্য পরীক্ষার্থীর রোল নম্বর মিলে যাওয়া, রেজিস্ট্রেশন না করেও পরীক্ষা দেওয়া, খাতা মূল্যায়নের পর মূল খাতার কোড মেলানোসহ নানা জটিলতা তৈরি হত। কিন্তু এবার অনলাইনের মাধ্যমে ফলাফল তৈরি করায় এ জটিলতা নিরসন হয়। এ বছর থেকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পূর্ণ অনলাইনে স্কুলভিত্তিক রেজিস্টেশনের মাধ্যমে শিক্ষার্থী নিবন্ধন করে অনুষ্ঠিত হয়েছে পরীক্ষা। চসিক কম্পিউটার ইনস্টিটিউটের পরিচালক আনিছ আহমদের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানের চার তরুণ প্রশিক্ষক আশরাফ রেজা, আলী উজ্জামান, নুর উদ্দিন ও হায়দার আলী এ সফটওয়্যারটি তৈরি করেন।
চসিক কম্পিউটার ইনস্টিটিউটের পরিচালক আনিছ আহমদ বলেন, চসিক পরীক্ষা কমিটির আহবায়কের অনুরোধ ছিল, পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের প্রাপ্ত নম্বরেরগুলো সম্পূর্ণ অপরিবর্তিত এবং শতভাগ নিরাপত্তায় ফল প্রকাশ করার। এরপর ইনস্টিটিউটের তরুণ চার শিক্ষকের সঙ্গে আলোচনা করে এ নিয়ে একটি পৃথক সফটওয়ার তৈরি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। পরে ৪৭টি স্কুলের জন্য পৃথক ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে একটি সফটওয়ার তৈরি করা হয়। যে কোনো স্কুল-প্রতিষ্ঠান নামমাত্র মূল্যে এই সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন।
সফটওয়ার কাজের দলপ্রধান আশরাফ রেজা বলেন, প্রথম অংশে প্রতিটি স্কুলের জন্য পৃথক প্যানেল তৈরি করে প্যানেল থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের তালিকা অনলাইনে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে ৭ হাজার ৬৬০ জন শিক্ষার্থীর তালিকা পাওয়া যায়। প্রতি বছর এই তালিকাগুলোতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থাকলেও এ বছর অনলাইন পদ্ধতিতে সমস্যাগুলো এড়ানো সম্ভব হয়। দ্বিতীয় ধাপে প্রতিদিনের পরীক্ষার উপস্থিতির তালিকাও স্কুলগুলো থেকে অনলাইনে গ্রহণ করা হয়। ফলে প্রতিদিনের বিভিন্ন বিষয়ে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার হাজিরা এবং উত্তরপত্রের জন্য পৃথক পৃথক কোড স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি হয়ে কেন্দ্রীয় পরীক্ষা কমিটির কাছে চলে আসে।
তিনি বলেন, তৃতীয় ধাপে আমরা উত্তরপত্রের প্রাপ্ত নম্বরগুলো সংগ্রহের জন্য আরো একটি প্যানেল তৈরি করি। সর্বশেষ তৈরি করা হয় ফলাফল প্যানেল। এ প্যানেলটি কাজ করে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে। এবারই প্রথম সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধটিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষার ফলাফল পরীক্ষার্থীরা তাদের কম্পিউটার অথবা মোবাইল থেকে অনলাইনের মাধ্যমে দেখতে পাবে এই ঠিকানায়।
জানা যায়, এই সফটওয়ারের রয়েছে প্রতিটি স্কুলের জন্য ভিন্ন ভিন্ন লগইন প্যানেল, স্কুলের নির্ধারিত ব্যাক্তিদের জন্য আলাদা প্যানেল, শিক্ষকদের জন্য লগইন প্যানেল, পরীক্ষার্থীদের প্রতিটি উত্তরপত্রের জন্য পৃথক গোপন নম্বর তৈরি, শিক্ষার্থীর রোল নম্বর ভিত্তিক ফলাফল প্রদর্শনসহ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা।
পরীক্ষা কমিটির আহ্বায়ক (মাধ্যমিক) মো. আবুল হোসেন বলেন, পুরো পদ্ধতি অনলাইনে নিয়ে আসার পর আমাদের পূর্বের চেয়ে ভুল-ভ্রান্তি প্রায়ই কমেছে। কম সময়ে নির্ভুলভাবে দ্রুতগতিতে সম্পূর্ণ পরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছি। স্কুলের প্রধান শিক্ষকগণসহ সব শিক্ষক বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসাবে দেখছেন। নিয়মিত এই সফটওয়ারটি ব্যবহার করছেন। এবার অতীতের চেয়ে কম সময়েই পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ সম্ভব হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা