আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগেই চট্টগ্রামের তিন সাংগঠনিক কমিটির শুধুমাত্র উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হতে যাচ্ছে। এই সম্মেলন ঘিরে রয়েছে উত্তরে নেতা-কর্মীদের ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনাও। উত্তরের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কারা আসছেন সেই আলোচনা কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল নেতাকর্মী পর্যন্ত সবার মুখে মুখে। সামাজিক যোগাযোগ্য মাধ্যমে নেতাদের পক্ষে চলছে ব্যাপক প্রচারণাও। সম্মেলনে ভোটাভুটির মাধ্যমে নাকি সমঝোতায় নতুন নেতৃত্ব আসছে তা নিয়েও আলোচনার কমতি নেই। তবে উক্ত দুটি পদসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পদে নতুন মুখ আসতে পারেন বলে দলের কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড সূত্রে নিশ্চিত করা হয়েছে।
এর আগে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরী মারা যাওয়ায় (গত ২৭ জানুয়ারি) পর ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এবং দীর্ঘদিন ধরেই সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বপালন করে আসছেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ সালাম। তাছাড়া সম্মেলন পরবর্তী উক্ত দুই গুরুত্বপূর্ণ পদে কারা আসছেন সেই বিষয়ে নিশ্চিত করে কেউ বলতে না পারলেও দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকেই দৃষ্টি সকল নেতা-কর্মীদের। তিনি যোগ্য, ত্যাগী, সততা এবং দীর্ঘদিনের আওয়ামী রাজনীতি জীবনের পাশাপাশি দুঃসময়ে কারা ছিলেন এবং সংসদীয় আসন উপহার দিয়েছিলেন সেসব বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে যোগ্য নেতা নির্বাচন করতে পারেন বলে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের অভিমত।
দলীয় নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদ ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে ব্যাপক পরির্বতন এবং নতুন নেতৃত্ব আসতে পারেন। এবার তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে এমন নেতাদের মধ্যে নাম আসছেন অনেক যোগ্য এবং দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতাদের। তাদের মধ্যে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি টানা চারবারের এমপি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এমএ সালাম ছাড়াও আলোচনায় আছেন এর মধ্যে সাধারণ সম্পাদকের পদে নাম আসছে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, সদ্য বিদায়ী মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি (সাবেক) ও জেলা পরিষদ সদস্য শেখ আতাউর রহমান, গিয়াস উদ্দিন। অন্যদিকে সাংগঠনিক এ জেলা কমিটির সম্মেলনের আগে ইতোমধ্যে তৃণমূলের অধিকাংশ উপজেলা সম্মেলন হয়েছে। বাকি তিন উপজেলার সম্মেলন সম্পন্ন শেষ করেই ৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। নগরীর কাজীড় দেউড়িস্থ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন হলে আয়োজিত এ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, দলের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম এমপিসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, এমপি এবং কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। এ সম্মেলন নিয়ে নানা প্রস্তুতিও চলছে। করা হয়েছে বিভিন্ন উপ-কমিটিও।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক নেতা-কর্মী বলেন, এই সম্মেলন ঘিলে কর্মীদের উৎসাহ-উদ্দীপনার পাশাপাশি এবার দুই বিষয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে। চট্টগ্রামের তিন সাংগঠনিক কমিটির মধ্যে মহানগর ও দক্ষিণে এবার সম্মেলন হচ্ছে কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে। তাই শুধুমাত্র সম্মেলন হচ্ছে উত্তরেই। অন্যদিকে সভাপতি-সম্পাদক দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি পদে আসতে পারেন নতুন মুখও। সবমিলে কারা নেত্বত্ব আসছে সেই বিষয়ে প্রতিটি উপজেলার নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনাও হচ্ছে। তবে যোগ্য, ত্যাগী এবং পরীক্ষিত নেতাদের যোগ্য আসনের দায়িত্ব পেলেই কর্মীরা শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে উপহার পেতে পারেন বলে জানান তৃণমূল নেতা-কর্মীরা।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালাম বলেন, সম্মেলন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে শেষ করতে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এতে গুরুত্বপূর্ণ পদে নেতা নির্বাচনের বিষয়ে দলের সভানেত্রী এবং কাউন্সিলররা যা চাইবেন সেটাই হবে। তিনি বলেন, দীর্ঘ রাজনীতিতে উত্তরে কোন ধরনের দ্বন্দ্ব বা বিরোধ ছিল না, এখনও নেই। তাছাড়া উত্তর জেলায় সাংগঠনিক শক্তিশালী হওয়ায় ২০০১ সালে নির্বাচনে দলের যখন ভরাডুবি হয়েছিল, তখন ১৫টি আসনের মধ্যে যেই দুটি পেয়েছিল, সেই দুটোই উত্তর জেলার আওতাধীন।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার