চীনের ওপর আরোপিত চড়া শুল্ক শিথিলের ইঙ্গিত দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে। ট্রাম্প বলেছেন, চীনের ওপর আমি আর শুল্ক বৃদ্ধি করতে চাই না। নইলে এক পর্যায়ে মানুষ আর কিছু কিনবে না।
গত ২ এপ্রিল চীনসহ কয়েক ডজন দেশের ওপর দেদার শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। এদিকে চীন পাল্টা শুল্ক আরোপ করায় নাখোশ হন ট্রাম্প। তিনি চীনের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করতে থাকলে সেটা শেষ পর্যন্ত ২৪৫ শতাংশে গিয়ে ঠেকে। তবে এই পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ নিয়ে বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। শেয়ারবাজারে ব্যাপক দরপতন হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এবং ট্রাম্পের মন্তব্যে ধারণা করা যাচ্ছে, আপাতত শুল্ক নিয়ে আগ্রহ হারাচ্ছে মার্কিন প্রশাসন। ট্রাম্প আরও বলেছেন, আমি হয়তো শুল্ক আর বৃদ্ধি করব না, বরং সেটা হ্রাস করার চিন্তা করতে পারি। কারণ আমরা চাই, মানুষ কেনাকাটা জারি রাখুক। কিন্তু এমন একটা পর্যায় আসতে পারে, যখন মানুষ আর কিছু কিনতে চাইবে না। গত ৯ এপ্রিল চীন বাদে অধিকাংশ দেশের ওপর আরোপিত শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিতের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। তবে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানির ক্ষেত্রে সবার জন্য সাধারণ ১০ শতাংশ শুল্ক জারি থাকে। এই তিন মাসে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে নতুন বাণিজ্যনীতি নিয়ে আলোচনা করবে যুক্তরাষ্ট্র। কয়েক দিনের পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের পর গত সপ্তাহে চীন ঘোষণা করে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর সংখ্যার প্রতিযোগিতায় আগ্রহী নয় তারা। তবে ওয়াশিংটনের কোনো পদক্ষেপে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হলে ছাড় দেওয়া হবে না বলেও হুমকি দেয় বেইজিং। বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প দাবি করেন, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যনীতি সংস্কারে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীন যোগাযোগ করেছে। আলোচনা হলে নতুন চুক্তি হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি। তবে বিভিন্ন সূত্রের ভিত্তিতে রয়টার্স দাবি করছে, দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা এখনো দেখা যায়নি। এমনকি সম্ভাব্য ওই বৈঠকে আলোচনার প্রকৃতি কী এবং তাতে শি জিনপিং অংশগ্রহণ করবেন কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
এদিকে চার দিনের সফরে আগামী সপ্তাহে ভারত যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। সেখানে তাঁর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে। আলোচনার মূল বিষয় হবে অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও ভূরাজনৈতিক সম্পর্ক। সংবাদমাধ্যম বিবিসি তাদের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, এই সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ নির্ধারিত রয়েছে ২১ এপ্রিল।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘এই সফর উভয় পক্ষকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা করার সুযোগ দেবে।’ ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের পর ভ্যান্স যখন প্রথম ভারত সফর করছেন, তখন দেশ দুটি আগামী শরতের মধ্যে একটি বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছাতে কাজ করছে। -বিবিসি
ভ্যান্সের সঙ্গে থাকছেন তাঁর সন্তান ও স্ত্রী ঊষা ভ্যান্স, যার মা-বাবা ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে থিতু হয়েছেন। বিবিসি লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে তীব্র বাণিজ্যযুদ্ধের মধ্যে এই সফর হতে যাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শতাধিক দেশের ওপর যে শুল্ক আরোপ করার পর তা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেছেন, সেই তালিকা অনুযায়ী ভারতের ক্ষেত্রে ২৭ শতাংশ মার্কিন শুল্ক আরোপ হওয়ার কথা। মার্কিন শুল্কনীতি ঘোষণার পরপরই দিল্লি ও ওয়াশিংটন বাণিজ্যিক সমঝোতায় দ্রুত পৌঁছাতে কাজ করে যাচ্ছে। ভারত ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি পণ্যের ওপর শুল্ক কমিয়েছে এবং ট্রাম্পের হুমকির মুখে আরও বিস্তৃত পরিসরে শুল্ক কাটছাঁটের কথা বিবেচনা করছে বলে জানা গেছে। কিছুদিন আগে পর্যন্ত ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার ছিল যুক্তরাষ্ট্র, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য পৌঁছেছিল ১৯০ বিলিয়ন ডলারে। ট্রাম্পের অভিষেকের পরপরই ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং দুই নেতা আলোচনায় বসেছিলেন। সফরকালে মোদি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘মেগা অংশীদারির’ প্রশংসা করেছিলেন। তখন দুই নেতা একটি চুক্তি ঘোষণা করেছিলেন, যাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তেল, গ্যাসসহ বিভিন্ন পণ্য আরও আমদানি করার কথা ভারতের। ট্রাম্প ও মোদি দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য দ্বিগুণ করে ৫০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছেন। বিবিসি