শব্দ দূষণ আজকের যুগের এক প্রধান সমস্যা। ইসলাম শব্দ দূষণ সম্পর্কে অনুসারীদের সতর্ক থাকার তাগিদ দিয়েছে। ইরশাদ করা হয়েছে, 'পদচারণায় মধ্যবর্তিতা অবলম্বন কর এবং কণ্ঠস্বর নিচু কর। নিঃসন্দেহ গাধার স্বরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর।' (সূরা লুকমান : ১৯ আয়াত)।
তোমাদের স্বর নিচু কর- এর অর্থ স্বর প্রয়োজনাতিরিক্ত উচ্চ করো না এবং হট্টগোল করো না। কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ ও কথোপকথনকালে আত্দম্ভরিতার সূরে মুখ ফিরিয়ে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। ইসলামে ধরাপৃষ্ঠে অহঙ্কারভরে বিচরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। মধ্যবর্তী চাল-চলন গ্রহণ করতে নির্দেশ করা হয়েছে। উচ্চস্বরে চিৎকার করে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। নবী করিম (সা.)-এর দরবারে তার সম্মুখে কারও কণ্ঠস্বর নবীজির (সা.) কণ্ঠস্বরের চেয়ে উঁচু করাকে আল্লাহ নিষিদ্ধ করেছেন। আমাদের পারস্পরিক কথাবার্তায় অনেক সময় কণ্ঠ উঁচু হয়ে যায়, কিন্তু নবীজির (সা.) সামনে এটি বেয়াদবি ও ধৃষ্টতা। ইরশাদ হচ্ছে- 'হে মোমিনগণ! তোমরা নবীর কণ্ঠস্বরের ওপর তোমাদের কণ্ঠস্বর উঁচু করো না। (সূরা হুজুরাত : ২ আয়াত)।
কেউ কাউকে উঁচু স্বরে ডাকাডাকি করা এক ধরনের শব্দ দূষণ, যা আল কোরআনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে- 'যারা প্রাচীরের আড়াল থেকে (হে নবী!) আপনাকে উঁচুস্বরে ডাকে, তাদের অধিকাংশই অবুঝ।' (সূরা হুজুরাত ৪ আয়াত)।
প্রতিবেশীর অধিকার রক্ষা ও সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। 'শব্দ' পরিবেশের কোনো খারাপ উপাদান নয়। আমাদের জীবনযাপনের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কিন্তু আমরা অপরিহার্য এ উপাদানটি অতিমাত্রায়, অসচেতনভাবে ব্যবহার করে শব্দকে দূষণে রূপ দিয়েছি, যা পরিবেশের চরম বিরক্তিকর ও ক্ষতিকর উপাদান। জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলো অতিমাত্রায় শব্দ দূষণে আক্রান্ত। বিশেষ করে রাজধানীতে এর পরিমাণ অনেক বেশি। শব্দ দূষণ আমাদের আক্রান্ত করছে নানা রোগে। শ্রবণশক্তি হ্রাস, উচ্চ রক্তচাপ, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, মাথা ধরা, বদহজম, পেপটিক আলসার এবং অনিদ্রাসহ বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি হয় শব্দ দূষণে। একটু সচেতন হলেই শব্দ দূষণ রোধ করা সম্ভব।
[খুলনার খালিশপুরে ক্রিসেন্ট আলিম মাদ্রাসা, হিফ্জখানা, এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের উদ্যোগে ৭ মার্চ বার্ষিক তাফসিরুল কোরআন মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যের অংশ বিশেষ।]