১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশি জনগণের স্বাধীনতার যে গৌরব অর্জিত হয়েছে, তা মহান আল্লাহ তায়ালার বিশেষ দয়ার দান ও বিশাল নিয়ামত। কেননা, মহান আল্লাহ প্রদত্ত সংবিধান, মহাঐশীগ্রন্থ আল-কোরআনুল করিমের ৪ নম্বর সূরা, সূরাতুন নিসার ৭৯ নং আয়াতে আছে, আপনার যে কল্যাণ হয় তথা নিয়ামত অর্জিত হয়, তা অর্জিত হয় মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে। সমগ্র বিশ্বের কওমি মাদ্রাসাসমূহের ‘মা’ উম্মুল মাদারিস জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম দেওবন্দ, ভারতের তত্কালীন গ্র্যান্ডমুফতি, আল্লামা মুফতিয়ে আজম শফি (রহ.) কৃত তাফসিরে মাআরিফুল কোরআনে বলা হয়েছে, মানুষ শুধু আল্লাহর অনুগ্রহেই নেয়ামত লাভ করে। এ আয়াতের দ্বারা ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, মানুষ যে সব নেয়ামত লাভ করে তা তাদের প্রাপ্য নয়, বরং একান্ত আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহেই প্রাপ্ত হয়। বাংলাদেশ নামক বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ যে রাষ্ট্র ‘আজ’ পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান পেয়েছে, তা মহান আল্লাহ তায়ালাই আমাদের উপহার দিয়েছেন তথা দান করেছেন। মহান আল্লাহ প্রদত্ত সংবিধান, মহা ঐশীগ্রন্থ আল-কোরআনুল করিমের সূরা আল ইমরানে ইরশাদ করা হয়েছে, বলুন হে মহান আল্লাহ্! আপনিই সার্বভৌম শক্তির অধিকারী। আপনি যাকে ইচ্ছা রাজ্য/রাষ্ট্র দান করেন এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজ্য/রাষ্ট্র ছিনিয়ে নেন এবং যাকে ইচ্ছা সম্মান দান করেন আর যাকে ইচ্ছা অপমানে পতিত করেন। আপনারই হাতে রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ। নিশ্চয়ই আপনি সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল (সব ক্ষমতার উত্স)। পাকিস্তানি বাহিনী ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ গণহত্যা শুরু করলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়।
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসে বলা হয়েছে, ‘দুনিয়া ধ্বংস করে দেওয়ার চেয়েও আল্লাহর কাছে ঘৃণিত কাজ হলো মানুষ হত্যা করা।’ (তিরমিজি)
অন্যায়ভাবে কোনো মানুষকে হত্যা করা গুরুতর অপরাধ বা কবিরা গুনাহ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের জনগণের মুক্তি সংগ্রামকে ধ্বংস করার জন্য পাকিস্তানিরা গণহত্যা ও নির্যাতনের আশ্রয় নেয়। ইসলামের দৃষ্টিতে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড চরমভাবে নিন্দনীয়। স্বাধীনতা উপলক্ষে আমাদের সবার উচিত মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা। মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের অংশ হিসেবে যে সব মানুষের (মুক্তিযোদ্ধার) মাধ্যমে স্বাধীনতার নিয়ামত অর্জিত হয়েছে, তাদের শুকরিয়া আদায় করা, তাদের অবদানের কথা স্মরণ করা, তাদের মধ্য থেকে যারা জীবিত আছেন তাদের প্রতিদান দেওয়ার প্রচেষ্টা করা, হেদায়েতের দোয়া করা, তাওহিদি মুসলিম অবস্থায় মারা গিয়ে থাকলে পরকালীন মুক্তি ও কল্যাণের, সফলতার দোয়া করা।
লেখক : প্রিন্সিপাল, মুহাম্মাদিয়া কওমি মহিলা মাদ্রাসা, মুসলমান পাড়া রোড, খুলনা।