কাজ না করে আট প্রকল্পের মোট ১ হাজার ৭৯ কোটি ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৮৩৯ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে পিরোজপুর-২ আসনের সাবেক এমপি মহিউদ্দীন মহারাজ এবং পিরোজপুর এলজিইডির সাবেক প্রধান প্রকৌশলীসহ ২৭ জনের বিরুদ্ধে পৃথক ৮টি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত মঙ্গলবার পিরোজপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাগুলো হয়। মামলার পরই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এসব জানান দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন। তিনি বলেন, দেশের দক্ষিণের জেলা পিরোজপুরে সরকারের ১৭টি প্রকল্প নেওয়া হয়। এসব প্রকল্পের মধ্যে ‘দেশের দক্ষিণাঞ্চলের আয়রন ব্রিজ পুনর্বাসন (আইবিআরপি)’ প্রকল্পের আওতায় ২০১৮-১৯ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ১২৮টি স্কিমের বিপরীতে ২৭৭ কোটি ৫৭ লাখ ৯৮ হাজার টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন (আইআরডিপি-৩)’ প্রকল্পের আওতায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পিরোজপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় দুটি স্কিমের কাজ না করেই ১০ কোটি ৫০ লাখ ৩৯ হাজার টাকা, ‘ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পল্লি সড়ক অবকাঠামো পুনর্বাসন শীর্ষক (সিএএফডিএআরআইডি)’ প্রকল্পের আওতায় ২০২১-২২ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত ৬৪টি স্কিমের বিপরীতে মোট ২০৬ কোটি ৬০ লাখ ৫৫ হাজার টাকা, ‘পিরোজপুর জেলা পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের (পিডিআরআইডিপি)’ প্রকল্পের আওতায় ২০২১-২২ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত ৩১টি স্কিমের বিপরীতে মোট ৯০ কোটি ৮৬ লাখ ১৯ হাজার টাকা, ‘বরিশাল বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক প্রশস্তকরণ এবং শক্তিশালীকরণ প্রকল্প (বিডিআইআরডব্লিউএসপি)’ প্রকল্পের আওতায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১১৮টি স্কিমের কাজ না করে ৪০৮ কোটি ৫৭ লাখ ৮৯ হাজার ৪০০ টাকা, ‘উপজেলা শহর (নন-মিউনিসিপ্যাল) মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন ও মৌলিক অবকাঠামো (প্রথম সংশোধিত) (ইউটিএমআইডিপি)’ প্রকল্পের আওতায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দুটি স্কিমের কাজ না করে ৩ কোটি ৭৩ লাখ ৫৮ হাজার টাকা, ‘বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর জেলা (বিজেপি)’ প্রকল্পের আওতায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩১টি স্কিমের বিপরীতে ৭০ কোটি ৬৭ লাখ ৯৬ হাজার ৪৩৯ টাকা এবং ‘পল্লি সড়ক ও কালভার্ট মেরামত কর্মসূচি (গভ. মেইনটেন্যান্স)’ প্রকল্পের আওতায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দুটি স্কিমের বিপরীতে ১০ কোটি ৫০ লাখ ৩৯ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। দুদক মহাপরিচালক আরও বলেন, এভাবে বিভিন্ন উপজেলায় ভিন্ন ভিন্ন প্রকল্পের কাজ না করে মোট ১ হাজার ৭৯ কোটি ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৮৩৯ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে আসামিদের বিরুদ্ধে। মামলায় মেসার্স হরিনপালা ট্রেডার্সের মালিক সাবেক এমপি মহিউদ্দীন মহারাজ, পিরোজপুর এলজিইডির সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আলি আখতার হোসেন, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আবদুর রশীদ খান, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুস সাত্তার হাওলাদারসহ মোট ২৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এর মধ্যে পিরোজপুর জেলা হিসাব সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. মোহাসীন, এসএএস সুপার মাসুম হাওলাদার, নজরুল ইসলাম, সাবেক জেলা হিসাব সংরক্ষণ কর্মকর্তা আলমগীর হাসান এবং পিরোজপুর এলজিইডি কার্যালয়ের হিসাবরক্ষক এ কে এম মোজাম্মেল হক খানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুদক সূত্র জানায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের তিনটি তদন্ত প্রতিবেদনে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কয়েকজন নেতা ও সাবেক মন্ত্রীর এই দুর্নীতিতে জড়িত থাকার তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়মে জড়িত ১১ জন সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে।