অন্য কিছু নয় শুধু চা-পানি পান করেই পঁয়ত্রিশ বছর ধরে বেঁচে আছেন ভারতের অণিমা চক্রবর্তী৷ কোনো শারীরিক সমস্যা ছাড়াই দিব্যি চলছে তার জীবনের রেলগাড়ি। পয়ষট্টি বছর বয়স্ক অনিমা চক্রবর্তী সুস্থ-সবল স্বাভাবিক মানুষের মতোই হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেন৷ বাড়িতে দুই বৌমা থাকা সত্ত্বেও কাজ না করে তিনি থাকতে পারেন না৷ এখনো নিজেই বাড়ি বাড়ি ঘুরে মুড়ি বিক্রি করেন৷
গোয়াঘাটের শ্যামবাজার পঞ্চায়েতের বেলডিহা গ্রামে একটি তিন কামরার মাটির ঘরে স্বামী, দুই ছেলে, ছেলের বউ আর দুই নাতিদের নিয়ে তার সুখের সংসার৷ জায়গাজমি কিছুই নেই৷ একসময় তাঁর স্বামী গোপালবাবু অল্পকিছু ঘরে শুধুমাত্র যজমানি করেই সংসারের চাকা সচল রাখতেন ৷ আর সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার জন্য অণিমাদেবী দেড় কিলোমিটার দূরে পাণ্ডুগ্রামে একটি বাড়িতে রাঁধুনির কাজ করতেন৷ সেখানে তাঁর পেটপুরে খাওয়ার সুযোগ থাকলেও বাড়িতে অভুক্ত ছেলেমেয়েদের কথা ভেবে ভাত-মুড়ি মুখে তুলতে তার বাঁধত। এর পর বাড়ি ফিরে কিছু খেয়েই আবার পাড়ার বিভিন্ন বাড়িতে মুড়ি ভাজার কাজে বেরিয়ে পড়তেন৷ অভাবের জন্য বেশিরভাগ দিনই আধপেটা খেয়ে কাটিয়ে দিতে হত৷
অণিমা দেবী বলেন, 'এভাবে চলতে গিয়েই একদিন অসুস্থ হয়ে পড়ি৷ ভাত-মুড়ি খেলেই বমি হতে থাকে৷ ধরা পড়ে পেটে গ্যাস্ট্রিক আলসার হয়েছে৷ ভাত-মুড়ি খাওয়া একেবারেই ছেড়ে দিই৷' তার পর থেকেই প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর সারাদিনে একবার হরলিক্স, দু’কাপ চা, গ্লুকোজ আর জল খেয়েই কাটাচ্ছেন তিনি। কিন্তু কোন কঠিন খাবার গ্রহণ না করে তিনি কিভাবে বেঁচে আছেন? অবশ্য এমনটাও নয় যে তিনি কখনো ভাত খাওয়ার চেষ্ঠা করেননি। অণিমা বলেন, 'আগে দু-একবার খাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম৷ কিন্তু খেতেই পেটে যন্ত্রণা শুরু হয়ে যায়৷ না খেয়েই বরং সুস্থ আছি৷ কাজ করতে কোনও অসুবিধা হয় না৷'
অণিমা চক্রবর্তীর এই চা-জল খেয়ে থাকার ব্যাপারে এলাকাবাসীর জন্য বিরাট এক বিষ্ময়ের কারন হলেও গোয়াঘাট ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ডা. সুদীপ্ত মণ্ডল এর মধ্যে অস্বাভাবিকতা কিছু দেখছেন না৷ ডা. সুদীপ্ত জানান, একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন গড়ে ২০০০ কিলো ক্যালরি শক্তির প্রয়োজন হয়৷ ওই শক্তি আমরা খাবারের মধ্যে থেকে পেয়ে থাকি৷ উনি যে সমস্ত খাবার খান তার মধ্যে যদি ওই পরিমাণ শক্তি থাকে তা হলে তাঁর সুস্থভাবে বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়৷'
বিডি-প্রতিদিন/২৩ আগস্ট ২০১৫/শরীফ