প্রকৃত সাহসী তিনিই, যিনি গতকাল রাত্রে কেঁদেও আজ সকালের হাসিটা দিব্যি বজায় রাখেন। তবে এই সাহসীনী দু'একটা রাতই শুধু নয়, গত দশ বছর ধরে বার বার ধাক্কা খেয়েছেন, কেঁদেছেন, কিন্ত হার মানেননি জীবনের কাছে। এসময় শিকার হয়েছেন অপহরণ, পাচার থেকে শুরু করে শারীরিক-মানসিক নির্যাতন, ধর্ষণ এমনকি জোর করে বিয়েরও। অবশেষে দশটি দুঃস্বপ্নের বছর পার করে গত ২৫ জুলাই বাড়ি ফিরতে সক্ষম হয়েছেন দিল্লির বাসিন্দা ওই তরুণী। এখন তার বয়স ২২।
১২ বছর বয়সে সিলামপুর জনতা কলোনির কাছে এক দম্পতি তাকে অপহরণ করেছিল। ঘটনাটি ২০০৬ সালের। নির্যাতিতা জানিয়েছেন, বাড়ির কাছে এক আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন তিনি। সেই সময়ে ওই দম্পতি টেনেহিঁচড়ে তাকে গাড়িতে তুলে অজ্ঞান করে।
তার মায়ের কথায়, 'জ্ঞান ফেরার পর সমবয়সি দশটি মেয়ের সঙ্গে বন্দি অবস্থায় আম্বালার একটি ঘরে নিজেকে খুঁজে পায় ও। প্রায় পনেরো-কুড়ি দিন সেখানে আটকে রাখা হয় ওকে। এর পরে সেই দম্পতি গুজরাটের একটি গ্রামে, এক কৃষকের কাছে ওকে বিক্রি করে।'
তরুণীর ঠাই হয় চাষের জমির পাশে একটি পাম্পঘরে। দু'বছর ধরে সে ঘরেই তাকে আটকে রাখা হত। দিনে চাষ, রাতে বন্দি— এই ছিল সানার দিনলিপি। সংবাদমাধ্যমকে ওই তরুণীর মা আরও বলেছেন, 'এই সময়ে চাষীর ছেলে বলবন্ত নিয়মিত ধর্ষণ করেছে মেয়েটাকে। শুধু তা-ই নয়, ওকে মারত, সিগারেটের ছ্যাঁকা দিত।'
ঠিক দু'বছর পর ওই দম্পতি আবার ফিরে আসে। এবার তরুণীকে নিয়ে যাওয়া হয় আম্বালা, চণ্ডীগড় ও পঞ্জাবের বেশ কয়েকটি গ্রামে। সবশেষে পঞ্জাবের এক স্থানে এক ব্যক্তির কাছে তাকে ফের বিক্রি করা হয়। তরুণী বলেছেন, 'সেই ব্যক্তি তার এক ড্রাইভার আত্মীয়ের সঙ্গে আমাকে জোর করে বিয়ে দিয়েছিল। কয়েক বছর পরে আমি দুই সন্তানের জন্ম দিই। বছর তিনেক বাদে তিনি মারা গেলে দুই সন্তানকে কেড়ে নিয়ে পরিবার থেকে আমায় বের করে দেওয়া হয়।'
এর পরে তিনি নিজেই ফিরে আসেন আম্বালায়। ইতিমধ্যে আম্বালায় এক নারীর সঙ্গে তার আলাপ হয়, যিনি একটি কাজ পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন এবং শিলিগুড়িতে নিয়ে আসেন তাকে। এখানে তরুণী একটি বারে নৃত্যশিল্পী হিসেবে কাজ করেন কিছুদিন। তরুণীর মুখে তার কাহিনি শোনার পরে ওই নারী দায়িত্ব নিয়ে দিল্লিতে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেন।
সূত্র: এবেলা
বিডি প্রতিদিন/ ০৩ আগষ্ট ২০১৬/ সালাহ উদ্দীন