বয়স মাত্র এক বছর। অথচ সেই বয়সের এক মেয়ের পেট থেকে বের হল সাড়ে তিন কেজি ওজনের ভ্রূণ। শনিবার বিকেলে ভারতের তামিলনাড়ুর এক বেসরকারি হাসপাতালে ওই শিশুর পেট থেকে অপরিণত ভ্রূণটি অস্ত্রোপচার করে বের করা হয়।
জানা গেছে, ৩.৫ কেজি ওজনের ভ্রূণটি শিশুর শরীরের রক্ত চলাচল ব্যবস্থা ব্যবহার করে বেড়ে উঠছিল। সেই সঙ্গে শিশুর শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের উপর অসহনীয় চাপ তৈরি করছিল।
চিকিত্সকরা জানিয়েছেন, নিশা নামে ওই শিশুর বাবা রাজু পেশায় দিনমজুর এবং মা সুমতি ইরোডের গোবি এলাকার এক প্রাথমিক চিকিত্সা কেন্দ্রে কর্মরত। জন্ম থেকেই নিশার পেটটি অন্য শিশুদের তুলনায় বড় আকারের ছিল। তবে এটা নিয়ে রাজু বা সুমতি, কেউ উদ্বিগ্ন ছিলেন না।
হাসপাতালের শিশু শল্য চিকিত্সক ডি বিজয়গিরি জানিয়েছেন, 'শিশুটির শ্বাসকষ্ট ও খাওয়ার সমস্যা দেখা দিলে বাবা-মায়ের টনক নড়ে। সেই সঙ্গে তার পেট অতিরিক্ত ফুলে ওঠে। এই কারণে স্থানীয় এক চিকিত্সকের কাছে নিশাকে নিয়ে যাওয়া হয়।' শিশুর পেটের ভিতর টিউমার রয়েছে সন্দেহ করে গত বৃহস্পতিবার সেই চিকিত্সক নিশাকে ডক্টর বিজয়গিরির কাছে পাঠান।
বিজয়গিরির ভাষ্য, 'আমিও প্রথমে শিশুর পেটে টিউমার বা সিস্টের উপস্থিতি অনুমান করেছিলাম। কিন্তু আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষায় ধরা পড়ে, পাকস্থলির ভিতরে থাকা মাংসপিণ্ডের মধ্যে হাড়ের উপস্থিতি রয়েছে। রয়েছে ক্যালসিফায়েড অংশ এবং টেরাটোমার মতো আকৃতি। তাই দেখেই সন্দেহ হয় ওটি ভ্রূণের মধ্যে থাকা ভ্রূণ। এরপর এই বিষয়ে তাড়াতাড়ি বিশদে জেনে নিই।'
দেরি না করে শনিবার বিকেলেই অস্ত্রোপচার সেরে পেলেন ডক্টর বিজয়গিরি। তিনি জানিয়েছেন, 'মাংসপিণ্ডটি সরানোর পরেই বুঝতে পারি সেটি ভ্রূণ ছাড়া কিছু নয়। তবে প্যাথোলজি পরীক্ষার আগে বলা সম্ভব নয় য়ে তার মধ্যে কী কী অঙ্গ গড়ে উঠেছিল।'
বলা বাহুল্য, অস্ত্রোপচারটি যথেষ্ট জটিল ছিল কারণ অপরিণত ভ্রূণটির সঙ্গে শিশুর বাঁ কিডনিটি যুক্ত ছিল। অগ্ন্যাশয়, প্লীহার একটি অংশ এবং মলাশয়ের সঙ্গেও যোগ ছিল তার। এই কারণে ভ্রূণের সঙ্গে যুক্ত রক্তনালী সরানোর পরে প্রতিটি অঙ্গ সাবধানে তার থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া হয়। ভ্রূণটি সরানোর পরে যত্নের সঙ্গে প্রত্যেকটি অঙ্গ ফের শিশুর শরীরে বসানো হয় বলে জানিয়েছেন ড. বিজয়গিরি। জানা গেছে, হাসপাতালে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে নিশা।
বিডি-প্রতিদিন/০৯ আগস্ট, ২০১৬/মাহবুব