মাথা গোঁজার জন্য এক টুকরো ছাদ, আর কিছুটা ঘরের মতোই করে দেখতে চার দেওয়াল৷ কিছুদিনের জন্য এই ‘ঘর’ই ছিল এক কিশোরীর বসবাসের জায়গা৷ পরিবার পরিজন ছেড়ে, কয়েকটি থালা বাসন নিয়ে সেখানেই আশ্রয় হয়েছিল তার। কারণ সে নাকি অপবিত্র৷ রজঃস্রাবের সময় এমনই নির্মম প্রথার মধ্যে দিয়ে দিন পারা করতে হয় তাকে। তবে সে একাই নয়, এর আগেও অনেককেই তার মত এই প্রথার ভেতর দিয়ে যেতে হয়রছে৷ তাই এই প্রথার বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহসও হয়নি ১৫বছর বয়সী সেই কিশোরীর৷
গত নয় বছরে নেপালে এই নিয়ে ১০টি তাজা প্রাণ গেল একটি কুঁড়েঘরে৷ যদিও ২০০৫ সালে নিষিদ্ধ হয়ে যায় এই প্রথা৷ তারপরেও এমন একটি নিষিদ্ধ প্রথাই প্রাণ কেড়ে নিল কিশোরীর৷ আর চলতি মাসে এই নিয়ে এমন ঘটনা দু’টি জানিয়েছেন নেপালেড় আসশা জেলার পুলিশ ইন্সপেক্টর বদরি প্রসাদ ধকল৷
রজঃস্রাবের সময় এমনিতেই দুর্বল থাকে মেয়েদের শরীর৷ তার ওপর আবহাওয়াগত চাপ এবং সাপের উপদ্রব, সব মিলিয়ে প্রাণহানির আশঙ্কা যে থাকে সে কথা অস্বীকার করার উপায় নেই৷ তবুও বিক্ষিপ্তভাবে এমন একটি নির্মম প্রথা মেনে চলেছে অনেকেই৷ ‘রজঃস্রাবের কুঁড়েঘর’ দেখলে চমকে যাবেন আপনিও৷ নির্বাসনের এমন ছবি যে আজও সমাজের বুকে দেখা যায়, নিজের চোখে না দেখলে হয়তো বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে অনেকেরই৷
সেই কুঁড়েঘরে রয়েছে ছোট্ট একটি দরজা৷ নেই কোনও জানালার ব্যবস্থা৷ এখানেই শেষ নয়৷ রজঃস্রাব চলাকালীন মেয়েটি কোনও মানুষ, গাছ, ফল বা কোনও গবাদি পশুকে ছুঁতে পারবে না৷ দুধ বা দুগ্ধজাত খাদ্যদ্রব্যও নিষিদ্ধ এই সময়৷ পানি ব্যবহার করতে পারবে নির্দিষ্ট করে দেওয়া স্থান থেকেই৷
মেয়েদের রজঃস্রাব নিয়ে বিভিন্ন কুসংস্কার এখনও ডানা বিস্তার করেছে৷ কিছু ক্ষেত্রে বিশ্বাস এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে মাসের ঐ বিশেষ সময়ে মেয়েদের বই স্পর্শ বা পড়া অথবা লেখা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। যাবতীয় এই বিশ্বাস, নিষেধ, বিধি-নীতি অনেক, কিন্তু যে নির্মম প্রথা কেড়ে নিল একটি তাজা প্রাণ, তার উত্তর এখনও অধরাই থেকে গেল৷
বিডি-প্রতিদিন/ ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৬/ তাফসীর-১২