বাস্তব ঘটনা নাকি অনেক সময় কল্পকাহিনীর থেকেও বিচিত্র হতে পারে। কথাটা যে নির্জলা মিথ্যে নয়, বরং ফিল্মের থেকেও মারাত্মক হয়ে ওঠে, তা প্রমাণ করল সম্প্রতি ভারতের বিহারে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা। যে ঘটনায় নিজের পুত্রবধূর প্রেমিকের কবরে শুয়ে টানা ছয় মাস যাপন করেছেন এক শাশুড়ি।
জানা যায়, ঘটনাস্থল বিহারের বেগুসরাই জেলার বাখারি অঞ্চল। দীপক যাদবের সঙ্গে বছর দুয়েক আগে বিয়ে হয় মণীষার। দীপক-মণীষার দাম্পত্য জীবন প্রথম কয়েক মাস ঠিকঠাক কাটলেও, তারপরেই শুরু হয় অশান্তি। অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায় মণীষার বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক।
স্বামী দীপক জানতে পারেন, সোনু নামের একটি ছেলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করছেন তার স্ত্রী। তিনি অনেকবার বারণ করেন, কিন্তু মণীষা শোনেননি।
এতে দীপকের ধারণা হয়, সোনুকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়াই সমস্যা সমাধানের এক মাত্র রাস্তা। সেই চিন্তা থেকে চলতি বছরের ৫ জুন তিনি সোনুকে ফোন করে তার সঙ্গে দেখা করতে বলেন। রাত ১১টা নাগাদ সোনুকে নিয়ে নিজের বাড়িতে ফিরে আসেন দীপক। মণীষা তখন সেই ঘরেই ছিলেন। পাশের ঘরে শুয়ে ঘুমোচ্ছিলেন দীপকের মা মালতী। মাঝ রাত্রে মালতী ছেলে-বউয়ের ঘর থেকে ধস্তাধস্তি এবং ভারি কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ শুনতে পান। তিনি বন্ধ দরজায় ধাক্কা দিয়ে জানতে চান, কীসের শব্দ হচ্ছে। কিন্তু ভিতর থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে আবার নিজের ঘরে এসে শুয়ে পড়েন।
ওই সময়েই সোনুকে খুন করেন দীপক। সারা রাত লাশ লুকিয়ে রাখেন নিজের ঘরে। পরের দিন সকালে মালতী বাইরে গেলে সোনুর মরদেহটি দীপক মায়ের ঘরের মেঝেতে গর্ত করে মাটি চাপা দেওয়ার আগে লাশের উপর ছড়িয়ে দেন অ্যাসিড, যাতে মৃতদেহ দ্রুত গলে যায়। তারপর মাটি চাপা দিয়ে কবরের উপরে বিছিয়ে দেন একটি কার্পেট, যাতে বাইরে থেকে কিছু বোঝা না যায়।
ঘটনার পরে কেটে গেছে ছয় মাস। এই ছয় মাসে মালতী কিছু টেরও পাননি। তিনি অভ্যাস মতো নিজের ঘরে মাটিতে বিছানা করেই শুচ্ছিলেন। কার্যত সোনুর কবরের উপরেই বিছানা করে রাত্রে ঘুমিয়েছেন তিনি।
এদিকে সোনু বাড়ি না ফেরায় থানায় নিরুদ্দেশ ডায়েরি করেন তার পরিবারের লোকজন। পুলিশ তদন্ত শুরু করার কয়েক দিনের মাথাতেই মণীষার সঙ্গে সোনুর সম্পর্কের কথা জানতে পারে। সেই সূত্র ধরে গত ২৬ ডিসেম্বর পুলিশ পৌঁছায় দীপকের বাড়িতে। জেরার মুখে ভেঙে পড়েন দীপক এবং নিজের অপরাধ স্বীকার করেন। আবিষ্কার হয় সোনুর কবরটিও। মাটি খুঁড়তেই হাড়গোড় এবং চুলের টুকরো পায় পুলিশ।
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রাপ্ত দেহাবশিষ্ট সোনুরই কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডিএনএ পরীক্ষার সাহায্য নেবে তারা। কিন্তু দীপকের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে তারা প্রায় নিঃসন্দেহ যে, ওটা সোনুরই দেহাংশ।
দীপক ও মালতীকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে গোটা ঘটনাটা জানতে পারে পুলিশ। তারপরেই গ্রেফতার করা হয় দীপক ও মণীষাকে।
বিডি প্রতিদিন/২৮ ডিসেম্বর ২০১৬/এনায়েত করিম