বিজ্ঞানের আবিষ্কার বিমান পৃথিবীর এক দেশের সাথে অন্য দেশের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থায় ঘটিয়েছে ব্যাপক পরিবর্তন। আকাশ পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা করেছে সহজ থেকে সহজতর। এক দেশ থেকে অন্য দেশে চাইলেই খুব সহজেই বিমানের সাহায্যে আকাশ পথে যাতায়াত করা যায়। তবে মাঝে মাঝে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় এ আনন্দ ভ্রমণেই নেমে আসে বিষাদের ছায়া। কারণ দুর্ঘটনায় বিমান বিধ্বস্ত বা বিস্ফোরিত হলে বেঁচে থাকাটা অলৌকিক ব্যাপার। এ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে বিভিন্ন সময় বিমান দুর্ঘটনায় অলৌকিকভাবে বেঁচে থাকা আটজনের ঘটনা।
১. ফ্রান্সেসকা লুইস
১২ বছরের এই মেয়ে পানামাতে বিমান দুর্ঘটনায় অলৌকিকভাবে বেঁচে যায়। ২০০৭ সালে পানামার একটি পাহাড়ে ওই বিমান দুর্ঘটনা ঘটে। পাহাড়ে এক ইঞ্জিনের ছোট ক্রেসনা বিধ্বস্ত হলে তিনজন মারা যায়। কিন্তু প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় খাদ্য ও পানীয় ছাড়াই আড়াই দিন তার আসনটিতে উল্টো অবস্থায় ঝুলে ছিল লুইস। লাগেজটি তার শরীরের ওপরের দিকে থাকায় ঠাণ্ডা থেকে রক্ষা পেয়েছিল সে। বিমানে ফ্রান্সেসকার বন্ধু তালিয়া ক্লেইন (১৩), তালিয়ার পিতা মাইকেল ক্লেইন (৩৭) এবং পাইলট এডউইন লাসো (২৩) তাৎক্ষণিক মারা যান। তারা সবাই পানামাতে ছুটিতে বেড়াতে গিয়েছিলেন।
২. বাহিয়া বাকেরি
১৪ বছরের এই কিশোরী বিমান দুর্ঘটনায় সাগরে পড়েও বেঁচে যায়। ফ্রান্সের এই স্কুলছাত্রী ইয়েমেনের একটি বিমান দুর্ঘটনায় বেঁচে যান। বিমানের ১৫৩ আরোহীর মধ্যে একমাত্র সেই রক্ষা পায়। ২০১৩ সালের ১৩ জুন বাকেরিদের বহনকারী বিমানটি গ্রান্ডে কমোরোসের উত্তর উপকূলের নিকটবর্তী ভারত মহাসাগরে বিধ্বস্ত হয়। বাকেরি সমুদ্রে পড়ে যায়। সে সাঁতার জানতো না। কিন্তু ১৩ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে উড়োজাহাজের একটি ভারি ধ্বংসাবশেষ ধরে ভেসে ছিল। পরে একটি জাহাজ তাকে উদ্ধার করে। তার মা, যিনি প্যারিস থেকে তার সঙ্গে গ্রীষ্মের ছুটির জন্য ভ্রমণ করছিলেন কমোরোসে, তিনি ওই দুর্ঘটনায় মারা যান।
৩. মোহাম্মদ আল ফতেহ ওসমান
মাত্র তিন বছরের এই শিশু অলৌকিকভাবে বেঁচে যায়। ২০০৩ সালে ফতেহ ওসমান সুদান এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে ভ্রমণ করছিল। ১১৭ আরোহী নিয়ে পোর্ট সুদান থেকে উড্ডয়নের পর একটি পাহাড়ে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। এ সময় ফতেহ ওসমান ছিটকে গিয়ে পড়ে একটি গাছের ওপর। সেখান থেকে এক ভবঘুরে তাকে উদ্ধার করেন। দুর্ঘটনায় ছেলেটি তার ডান পা হারায়। বিমানের বাকী ১০৫ যাত্রী এবং ১১ জন ক্রুর সবাই নিহত হন।
৪. সিসিলিয়া সিচান
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক বিমান দুর্ঘটনায় একমাত্র জীবিত মানুষ। ১৯৮৭ সালে নর্থওয়েস্ট এয়ারলাইন্সের একটি বিমান ডেট্রয়েটের মেট্রো বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের কয়েক মিনিট পর বিধ্বস্ত হয়। এতে ১৫৪ আরোহী নিহত হয়। একমাত্র বেঁচে ছিল চার বছরের সিসেলিয়া সিচান। ওই দুর্ঘটনায় তার মা, বাবা, ভাই নিহত হয়। বেঁচে যাওয়া সিচানের পরিচয় বলতে পারছিল না কেউ। অবশেষে কয়েকদিন পরে তার দাদি সংবাদপত্রে তার ছবি দেখে তাকে সনাক্ত করেন। তিনি সিচানের বেগুনি নেইলপলিশ ও সামনের দাঁত দেখে তাকে চিনতে পারেন।
৫. রুবিন ভ্যান অ্যাসু
নেদারল্যান্ডসের এই শিশু বিমান দুর্ঘটনায় রক্ষা পায় অলৌকিকভাবে। নয় বছরের ডাচ বালক রবিন ভ্যান আসু বাবা-মা ও ভাইয়ের সঙ্গে আফ্রিকা এয়ারওয়েজের একটি বিমানে ভ্রমণ করছিল। ২০১০ সালের ১২ মে ত্রিপোলি যাওয়ার পথে তাদের বিমান দুর্ঘটনায় পতিত হয়। লিবিয়ার মরুভূমির বালিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ধ্বংসাবশেষের মধ্যে আসুকে একটি সিটের মধ্যে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। দুর্ঘটনায় তার একটি পা ভেঙ্গে যায়। বিমানের বাকী ১০৩ আরোহীর সবাই মারা যান।
৬. এরিকা ডেলগাডো
১০ বছরের মেয়েটি প্রাণে বাঁচে তার মায়ের জন্য। ১৯৯৫ সালে উত্তর কলম্বিয়াতে একটি বিমান দুর্ঘটনায় অলৌকিকভাবে বেঁচে যায় ১০ বছরের এরিকা ডেলগাডো। সে তার বাবা– মা এবং ছোটো ভাইয়ের সঙ্গে বোগোটা থেকে কার্টাজেনাতে যাচ্ছিল। ডিসি-৯ ইন্টারকন্টিনেন্টাল বিমানটি বোগোটা থেকে ৫০০ মাইল উত্তরে মারিয়া লা বাজা শহরে মধ্য আকাশে বিস্ফোরিত হয়। এরপর একটি বাঁধের ওপর পড়ে ডিগবাজি খেতে খেতে একটি অগভীর হ্রদে গিয়ে পড়ে। একজন কৃষক কান্নার শব্দ শুনতে পেয়ে ডেলগাডোকে উদ্ধার করেন। হাত ভাঙা অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। ডেলগাডো জানিয়েছে, দুর্ঘটনার মুহূর্তে তার মা তাকে প্লেন থেকে বাইরে ছুঁড়ে দেয়। এর ফলে সে বেঁচে যায়।
৭. পল অস্টন ভিক
বিমান দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া বিশ্বের কনিষ্ঠতম মানুষ। ১৯৪৭ সালের জানুয়ারিতে চায়না ন্যাশনাল অ্যাভিয়েশন করপোরেশনের বিমান দুর্ঘটনায় বেঁচে যায় ১৬ মাসের শিশু পল অস্টন ভিক। তার বাবা রবার্ট ভিক কানেকটিকাটের একজন খ্রিষ্টান ধর্মযাজক যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে চীনে ধর্মপ্রচারক হিসেবে কাজ করতেন। ভিকটর, তার স্ত্রী এবং দুই পুত্রকে নিয়ে সাংহাই থেকে চুংকিং যাচ্ছিলেন। বিমানের একটি ইজ্ঞিনে আগুন ধরে গিয়ে দ্রুত কেবিনে ছড়িয়ে পড়ে। বিমানের ২৩ যাত্রী আতঙ্কে লাফালাফি করতে থাকে। ভিক এবং তার স্ত্রী দুই সন্তানকে কোলে নিয়ে লাফিয়ে পড়েন। ভিক ও তার ছেলে পল বেঁচে যায়। কিন্তু ৪০ ঘণ্টা পরে হাসপাতালে ভিক মারা যান। বেঁচে ছিল তার ১৬ মাস বয়সের শিশুটি।
৮. অং ইউ ম্যান
অং ইউ হচ্ছেন বিমান দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়াদের একজন যিনি কিনা নিজেই ওই বিমানটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেছিলেন। ১৯৪৮ সালে অং ইউ ক্যাথে প্যাসিফিকের একটি বিমান ছিনতাই করতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটান যেখানে ২৫ জনের প্রাণহানি ঘটে। এই বিমানে বিত্তশালীরা যাতায়াত করতেন। দুর্ঘটনায় বিমানটি পানিতে পড়ে যাওয়ার পর জেলেরা অচেতন অবস্থায় অং ইউকে ভাসতে দেখে উদ্ধার করে। পরে তাকে ছিনতাইকারীদের অন্যতম হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল