থাইল্যান্ডের ফি ফি দ্বীপপুঞ্জের মায়া উপদ্বীপ যেন একখণ্ড স্বর্গ। পর্যটকদের চাপে গত কয়েক বছরের পরিবেশগত বিপর্যয় কাটিয়ে দ্বীপটি ফিরেছে তার পুরোনো রূপে।
মানবজাতির জন্য করোনা মহামারি ভয়াবহ বিপদ বয়ে আনলেও প্রকৃতির জন্য হয়ে এসেছে আশির্বাদ। থাইল্যান্ডের ফি ফি লেহ দ্বীপপুঞ্জে লকডাউনের কারণে আন্তর্জাতিক পর্যটকের চাপ কমে যাওয়ায় দ্বীপটি ফিরে পেয়েছে তার হারানো সৌন্দর্য।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এখানকার মায়া উপদ্বীপটি পর্যটকদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিওর ‘দ্য বিচ’ চলচ্চিত্রটি এখানেই ধারণ করা হয়েছিল। পর্যটকদের চাপে এক পর্যায়ে এর জীববৈচিত্র্য হুমকিতে পড়ে। তাই ২০১৮ সালেই কর্তৃপক্ষ এই স্থানটিকে বছরের চার মাস পর্যটকশূন্য রাখার নির্দেশ দেয়।
ফি ফি দ্বীপপুঞ্জে মহামারির আগে বছরে ২০ লাখ পর্যটক পা রাখতেন। তাদের প্রধান গন্তব্য ছিল মায়া। সুউচ্চ সবুজ পর্বত আর ফিরোজা জলে ঘেরা এর নজরকাড়া সৌন্দর্য ২০০০ সালে নির্মিত ডি ক্যাপ্রিওর মুভিতে উঠে আসে। এরপর দৈনিক ছয় হাজারের বেশি পর্যটক ২৫০ মিটার দীর্ঘ এই সৈকতে পা রাখতে শুরু করেন।
পর্যটকের স্রোত মায়ার মায়াবি সৌন্দর্যের জন্য ডেকে আনে বিপদ। থাইল্যান্ডের কাসেটস্টার্ট ইউনিভার্সিটির গবেষক থন থামরংনাওয়াসাওত বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, মাত্র ১০ বছরে দ্বীপটির প্রবাল প্রাচীরের ৬০ শতাংশ ক্ষয়ে গেছে। তার প্রস্তাবে সরকার পরবর্তীতে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দ্বীপটিতে পর্যটকদের আনাগোনা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়।
এক বছরের মাথায় মহামারি আঘাত হানে বিশ্বে। দ্বীপটিতে পর্যটকদের যাওয়া আপনা আপনি বন্ধ হয়ে যায়। থাই সরকারের কড়া ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় এক পর্যায়ে সেখানে মানুষের উপস্থিতি প্রায় শূন্যে নেমে আসে। এই সুযোগে বিজ্ঞানীরা সেখানকার জীববৈচিত্র্য আগের অবস্থায় আনতে কাজ শুরু করেন।
আশার কথা এই সময়ের মধ্যে মায়াতে প্রতিস্থাপন করা প্রবালের ৪০ শতাংশই টিকে গেছে। সুখবর আছে অন্য সামুদ্রিক প্রাণীদের ক্ষেত্রেও। ব্ল্যাকটিপ বা কালোনাক হাঙ্গর, হকসবিল টার্টল বা বাজঠোঁটি সামুদ্রিক কাছিম, হোয়েল শার্ক বা তিমি হাঙ্গরের মতো বিপন্ন প্রাণীরা আবারো মায়ার জলে বিচরণ শুরু করেছে।
সম্প্রতি থাই সরকার দ্বীপটিকে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে। এখন মূলত থাই পর্যটকরা আসলেও ধীরে ধীরে বিদেশিদের আনাগোনাও শুরু হয়েছে। দ্বীপটির পরিবেশ নিয়ে তাদের কেউ কেউ সচেতন।
প্যারিস থেকে আসা ফ্রাঙ্ক নামে একজন পর্যটক এএফপিকে বলেন, ‘‘আমরা কেবল এখানকার ফিরোজা জলে ডুব দিতে আসিনি। আমরা সহযোগিতাও করতে চাই। দ্বীপের পরিবেশ এমন শান্ত থাকাটাই চমৎকার হবে।’’
তবে কর্তৃপক্ষ আগের মতো পর্যটকদের যথেচ্ছ স্বাধীনতা দিচ্ছে না এবার। বেলাভূমিতে বিচরণ, বা সমুদ্রে স্নান করতে পারবেন তারা, কিন্তু কঠোর নিয়ম-কানুনও মানতে হবে তাদের।
দৈনিক মাত্র ৩০০ পর্যটক এখানে ভ্রমণের সুযোগ পাবেন। থাইল্যান্ডের আশা এই যাত্রায় তারা ফি ফি দ্বীপপুঞ্জকে টেকসই পর্যটনের রোল মডেলে পরিণত করবেন।
সূত্র: ডয়েচে ভেলে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন