ব্যারিস্টার নোরা শরীফ নামটি যেন বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা। ছিলেন ব্রিটিশ-আইরিশ নাগরিক। নিজ সাধনায় বাঙালিত্ব অর্জন করে নিয়েছিলেন। ব্রিটেনে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফের সহধর্মিনী নোরা বাঙালির সকল আন্দোলন-সংগ্রামের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করে বাংলার ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে শুরু করে মুক্তি যুদ্ধ- সর্বক্ষেত্রে নোরা হয়ে ওঠেন বাঙালির সংগ্রাম সঙ্গী। গত ৯ ফেব্রুয়ারি বিকেলে লন্ডনের ঐতিহাসিক ওয়েস্টমিনিস্টারের সেন্টাল হলে নোরা শরীফ স্মরনে হয়ে গেল নাগরিক স্মরণসভা।
যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাঙালিদের উদ্যোগে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন, প্রথিতযশা সাংবাদিক, সাহিত্যিক, কলাম লেখক আবদুল গাফফার চৌধুরী। উপস্থাপনা করেন বঙ্গবন্ধু নাতনি রুপন্তি সিদ্দিক ও উর্মি মজহার। অনুষ্ঠানের প্রথমেই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার পাঠানো শোকবার্তা পাঠ করে শোনানো হয়। স্মরণসভার পুরোটা সময় উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা।
সভায় স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্য রাখেন সাবেক ব্রিটিশ এমপি ও ইউকেআইএস'র সাবেক চেয়ারম্যান অমবুসম্যান ও ফেন্ডস অব বাংলাদেশ খেতাব প্রাপ্ত মি. মাইকেল ব্রান। বক্তব্য রাখেন ২০১৫ সালের ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচনে লেবার পার্টির প্রার্থী শেখ রেহানার কন্যা টিউলিপ সিদ্দিক, প্রয়াত নোরা শরীফের বোন ড. জিন হোয়াইট, ড. বারবারা মারী ও ভাই মি. উইলিয়াম মারী, যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মিজারুল কায়েস, সাবেক হাইকমিশনার গিয়াসউদ্দিন, ফেন্ডস অব বাংলাদেশ খেতাব প্রাপ্ত বিমান মল্লিক, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক, সহ-সভাপতি সৈয়দ মোজাম্মেল আলী, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নঙ্গমুদ্দিন রিয়াজ, কাউন্সিলার খলিল কাজী, সাংবাদিক সৈয়দ আনাস পাশা, যুক্তরাজ্য মহিলা আওয়ামী লীগের সভনেত্রী খালেদা কোরেশী, মুরাদ কোরেশী, ড. রায়হান রশীদ, মিসেস জেলি খালেক প্রমুখ।
নোরা শরীফ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় আটক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্ত করার জন্য লন্ডন থেকে ঢাকায় আইনজীবী পাঠাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। '৬৯-এর গণঅভ্যুথান, '৭০-এর নির্বাচন ও '৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্ব জনমত গড়ে তুলতে তার ভূমিকা ছিল অসাধারণ। একাত্তরের মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সহায়তা দিতে ১০১ সদস্যের ব্রিটিশ-বাংলাদেশি আইনজীবী প্যানেলের প্রধান ছিলেন তিনি।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্যে বাংলাদেশ সরকার ব্যারিস্টার নোরা শরীফকে 'ফ্রেন্ডস অব লিবারেশন ওয়ার অনার' পদকে ভুষিত করে। ২০১২ সালের ২৭ মার্চ পদকটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকায় তার হাতে তুলে দেন। ব্যারিস্টার নোরা শরীফ দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ২০১৩ সালের ২৯ নভেম্বর লন্ডনে নিজ বাসভবনে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। শোকসভায় জানানো হয়, পরিবারের পক্ষ থেকে নোরা শরীফ স্মরণে একটি ট্রাস্ট গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। এই ট্রাস্ট থেকে গরিব, মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তি প্রদানসহ বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজ করা হবে।