রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের নামে পেট্রল বোমা ছুড়ে নিরীহ মানুষ হত্যা, বাসে আগুন দিয়ে শিশু ও নারীসহ যাত্রীদের পুড়ে মারা এবং নাশকতা ও সন্ত্রাসী তৎপরতায় গোটা দেশকে একটি ভয়ংকর পরিস্থিতির মধ্যে নিপতিত করার তথ্যভিত্তিক বিবরণী দেখে আঁতকে উঠলেন যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে ফরেন এফেয়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান কংগ্রেসম্যান এড রয়েস।
বুধবার স্থানীয় সময় দুপুরে ক্যাপিটল হিলে কংগ্রেসম্যানের অফিসে গিয়ে তার সাথে এক আনুষ্ঠানিক বৈঠকে মিলিত হন মেট্র ওয়াশিংটন আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল।
সংগঠনের সভাপতি ড. শাহজাহান মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুন্নবী বাকী, সহসভাপতি সাদেক খান, যুগ্ম সম্পাদক হারুন-অর রশীদ এবং কম্যুনিটি লিডার সিদ্দিকুর রহমান ছিলেন প্রতিনিধি দলে।
বৈঠকে উল্লেখযোগ্য সময় অতিবাহিত হয় বিএনপি কর্তৃক এই কংগ্রেসম্যানসহ ৬ কংগ্রেসম্যানের স্বাক্ষর জালিয়াতি এবং বিজেপি সভাপতির সাথে খালেদা জিয়ার বানোয়াট টেলি সংলাপের ঘটনাবলী। কংগ্রেসম্যান এড রয়েস প্রচন্ড ক্ষোভের সাথে প্রতিনিধি দলের কাছে মন্তব্য করেছেন যে, ‘এমন আচরণের শিকার আর কখনো হইনি। এটি সত্যি দুঃখজনক এবং লজ্জাজনকও বটে।’
প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে হরতাল-অবরোধের নামে বিএনপি-জামায়াত-শিবির কর্তৃক চলমান সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কিছু ছবি ও ডকুমেন্ট হস্তান্তর করা হয় কংগ্রেসম্যানের কাছে। এগুলো দেখে বিমর্ষবোধ করেন তিনি। বিশ্বাসই করতে চান না যে, গণতন্ত্রে বিশ্বাসী কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষে এমন কাজ করা সম্ভব। স্টেট ডিপার্টমেন্টের সাথে যোগাযোগ করে বাংলাদেশের সর্বশেষ পরিস্থিতির আলোকে শীঘ্রই তিনি কমিটির পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি প্রদান করবেন বলে প্রতিনিধি দলকে জানান।
দীর্ঘ প্রায় এক ঘণ্টার এ বৈঠকে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে জামায়াতে ইসলামীর হত্যাযজ্ঞ, ৩০ লাখ বাঙালি নিধন এবং দু’লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম হরণসহ বহু বাড়িঘরে আগুন দেয়ার ঘটনাবলী স্থান পায়। একই কায়দায় জামায়াত-শিবির বিএনপির ঘাড়ে পা রেখে আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও শুরু করেছে বলে কংগ্রেসম্যানকে অবহিত করা হয়। গত মাসাধিককালে যাত্রিবাহী ৮০ বাসে আগুন দেয়া হয়। এর ফলে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ৩৫ মহিলার মৃত্যু এবং আরো ৩৭ জন হাসপাতালে মৃত্যুযন্ত্রনায় ছটফট করছেন।
হরতাল-অবরোধের নামে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্যে দৈনিক কমপক্ষে দু’লাখ মানুষ বেকার জীবন-যাপনে বাধ্য হচ্ছেন। ৩৩ দিনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রায় ৭৮ হাজার কোটি টাকা তথা ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষতি হয়েছে এবং তা বাড়ছে প্রতিদিনই। এসব তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে স্মারকলিপিতে।
জামায়াত-শিবিরের সম্পর্ক রয়েছে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের সাথে এবং সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি নেত্রীও একই ভাষায় কথা বলছেন বলে কংগ্রেসম্যানের কাছে অভিযোগ করে প্রতিনিধি দলটি। ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এহেন অপতৎপরতা চালানো হচ্ছে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের মদদে’-এ অভিযোগ করা হয় কংগ্রেসম্যানের কাছে। ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নারী ক্ষমতায়নসহ নারী শিক্ষার অভূতপূর্ব অগ্রগতিসাধিত হয়েছে এবং এখনও তা অব্যাহত রয়েছে। এটি সহ্য হচ্ছে না সন্ত্রাসী সংগঠন জামাত-শিবির এবং সাম্প্রতিক কালে খালেদার নেতৃত্বাধীন বিএনপির’-এ কথাও জানানো হয় কংগ্রেসের ফরেন এফেয়ার্স কমিটির চেয়ারম্যানকে।
জামাত-শিবির নিষিদ্ধ করার দাবিটি এখন বাংলাদেশের গণদাবিতে পরিণত হয়েছে বলে কংগ্রেসম্যানের কাছে দেয়া স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
স্মারকলিপিতে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতা অবলম্বন করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার স্বার্থে ঐ বিচার জরুরী বলে বাংলাদেশের মানুষ মনে করছেন।
বিডি-প্রতিদিন/ ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫/ রশিদা