লন্ডনের আকাশে সকাল থেকে সুন্দর রোদ থাকলেও জুম্মার নামাজের আগে ঝমঝমিয়ে নামলো বৃষ্টি। এযেনো প্রকৃতি একান্ত হলো আমিনুল হক বাদশা এর শেষ যাত্রার সাথে।
লন্ডনে শত শত মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে শেষ বিদায় নিলেন প্রখ্যাত সাংবাদিক, বঙ্গবন্ধুর সহকারী প্রেস সচিব আমিনুল হক বাদশা। প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, সংস্কৃতিকর্মী সবাই বলেছেন, ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন আমিনুল হক বাদশা। তার প্রয়ানের সাথে সাথে মৃত্যু ঘটলো ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ন অংশের।
রবিবার তার মরদেহ বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হবে যুক্তরাজ্যস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে। শুক্রবার জুম্মাহ নামাজের পর ব্রিকলেন জামে মসজিদে আমিনুল হক বাদশা এর জানাযা অনুষ্ঠিত হয়।
আমিনুল হক বাদশা ১৯৪৪ সালের ২৪ অক্টোবর কুষ্টিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা খন্দকার লুতফুল ও মা সকিনা বেগমের ১০ সন্তানের মধ্যে বাদশা ছিলেন দ্বিতীয়। তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ইকবাল হলের সাধারণ সম্পাদক বাদশা সামরিক শাসক আইয়ুববিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বিভিন্ন সময় কারাভোগ করেন।
প্রাক-মুক্তিযুদ্ধকালে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের সদস্য আমিনুল হক বাদশা ছাত্রবন্দী হিসেবে কারাগারে থেকে স্নাতক পাস করেন। ১৯৭১ সালে তিনি মুজিবনগরে বাংলাদেশ মিশনের বহিঃপ্রচার বিভাগের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সংবাদ পাঠক আমিনুল হক বাদশা বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স-বিএলএফের সদস্য ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৯ সালে আগরতলা মামলা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর আমিনুল হক বাদশা বঙ্গবন্ধুর প্রেস সচিব নিযুক্ত হন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ১৯৭৫ সালের শেষ দিকে সামরিক শাসনের কারণে তিনি লন্ডনে চলে যেতে বাধ্য হন। আমিনুল হক বাদশা ঢাকার ডেইলি ইন্ডিপেনডেন্ট, এটিএন বাংলা (ইউকে), লন্ডনের দৈনিক নতুন দিন, কলকাতার দৈনিক আজকাল পত্রিকায় দীর্ঘদিন কাজ করেছেন।
প্রবাসের প্রগতিশীল মানুষের এক ভড়সাস্থল ছিলেন তিনি। বন্ধুপ্রতীম, সদা হাস্বোজ্জ্বল এই মানুষটির সাথে যাদো স্মৃতি জড়িয়ে আছে তাদের কন্ঠে তাই ঝরে পড়লো বেদনার কথা।
বর্ষীয়ান সাংবাদিক সৈয়দ নাহাস পাশা বলেন, আমিনুল হক বাদশা একটি ইতিহাসের নাম। আজকে ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ন অংশের শেষ যাত্রা হলো।
কবি শাহ শামীম এবং গল্পকার সাঈম চৌধুরী বলেন, প্রগতিশীল মানুষের ছায়াস্থল ছিলেন আমাদের বাদশা ভাই।
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মৃদুল কান্তি দাশ বলেন, বাদশা ভাইয়ের মতো হাস্বোজ্জ্বল একজন মানুষ চলে যাওয়া মানে প্রগতিশীল মানুষের অভিভাবক চলে যাওয়া।
লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি নবাব উদ্দিন বলেন, আমিনুল হক বাদশা বিলেতের সাংবাদিকদের বড়ভাই ছিলেন। তার মৃত্যু আমাদের ব্যথিত করেছে।
লন্ডনের সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মী, কবি, সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ সবার স্মৃতিতে জ্বলজ্বল হয়ে থাকবে আমিনুল হক বাদশার নাম।