বঙ্গবন্ধুর প্রেস সচিব, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও লন্ডনপ্রবাসী প্রয়াত সাংবাদিক মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার আমিনুল হক বাদশার মরদেহ আগামীকাল রবিবার দেশে আসছে। বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে দুপুর ১২টার দিকে তার মরদেহ ঢাকায় পৌঁছবে বলে জানিয়েছেন মরহুমের ছোট ভাই সাবেক সচিব খন্দকার রাশিদুল হক নবা। ঢাকায় ও কুষ্টিয়ায় গ্রামের বাড়িতে জানাজা শেষে পরশু সোমবার তাকে পারিবারিক করবস্থানে দাফন করা হবে।
রাশিদুল হক নবা জানান, আমিনুল হক বাদশাহর মরদেহ নিয়ে আসার কথা রয়েছে প্রবীণ সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর। সঙ্গে তার স্ত্রী, ছেলে-মেয়েও থাকবেন। এছাড়া বাদশাহর বেশ কয়েকজন বন্ধু, স্বজন, সহকর্মী ও শুভাকাঙ্খি মরদেহের সঙ্গে আসবেন। দুপুর ১২টায় মরদেহ ঢাকায় পৌঁছানোর পর সরাসরি তা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে দুপুর ২ টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সর্ব সাধারণের দেখার জন্য মরদেহ রাখা হবে। বাদ আসর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে জানাজা শেষে মরদেহ বারডেমের হিমঘরে রাখা হবে।
তিনি জানান, পরেরদিন ১৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় মরদেহ জাতীয় প্রেসক্লাবে নেওয়া হবে। থাকবে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। সেখানে আরেকটি জানাজা শেষে মরদেহ নিয়ে কুষ্টিয়া গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করা হবে। পথে কোন সমস্যা না হলে ওইদিন বিকাল ৫টায় কুষ্টিয়া ঈদগাহ ময়দানে মরহুমের আরেকটি জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। ৬টায় গ্রামের বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে মরহুমের মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হবে। ১৭ ফেব্রুয়ারি তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
এদিকে পূর্ব লন্ডনের ব্রিকলেন জামে মসজিদে শুক্রবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বাদ জুমা আমিনুল হক বাদশার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানাজায় পরিবারের সদস্য, ব্রিটেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার আব্দুল হান্নান, প্রবীণ সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, মরহুমের সাংবাদিক সহকর্মী, সংস্কৃতিকর্মী, কমিউনিটি এক্টিভিস্টসহ ব্রিটেনের বিভিন্ন শহর থেকে আগত বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ নেন।
নামাজে জানাজার আগে হাইকমিশনার এবং মরহুমের ভাইয়ের ছেলে মাহমুদুল হক সবার প্রতি প্রয়াত সাংবাদিকের আত্মার শান্তির জন্য দোয়া কামনা করেন।
জানাজা শেষে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি গ্রুপ জাতীয় পতাকায় মোড়ানো বাদশার প্রতি আনুষ্ঠানিক স্যালুট প্রদান করেন। এই পর্বে নেতৃত্ব দেন তার ঘনিষ্ট সহকর্মী আরেক বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলার খলিল কাজি।
শনিবার লন্ডন সময় সন্ধ্যা সোয়া ছয়টায় বিমানের একটি ফ্লাইটে সদ্য প্রয়াত এই কৃতি সাংবাদিকের মরদেহ নিয়ে দেশের উদ্দেশে রওয়ানা হবেন তার স্বজনরা।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি সোমবার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১১টায় (বাংলাদেশ সময় ভোর সাড়ে ৫টা) গ্রেটার লন্ডনের অরপিংটন হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আমিনুল হক বাদশা। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত দীর্ঘদিন এই অরপিংটন হাসপাতালই ছিল তার শেষ অবস্থানস্থল। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন।
লন্ডন প্রবাসী এই প্রখ্যাত সাংবাদিক ছিলেন জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠজন। ১৯৭৩ সালে ব্যারিস্টারি পড়ার জন্যে বঙ্গবন্ধু আমিনুল হক বাদশাকে লন্ডনে পাঠিয়েছিলেন। ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জোট নিরপেক্ষ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার লক্ষ্যে আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সে যাওয়ার সময় বঙ্গবন্ধু আমিনুল হক বাদশাকে একই বিমানে সঙ্গে করে নিয়ে যান। বঙ্গবন্ধু আলজিয়ার্স নামার পর বাদশা একই বিমানে এসে পা রাখেন লন্ডনে। এসময় বঙ্গবন্ধুর সফরসঙ্গী হিসেবে আরেক কিংবদন্তি সাংবাদিক আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীও জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে অংশ নেন।
বাঙালির ইতিহাসের স্বর্ণোজ্জ্বল অধ্যায় ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে প্রয়াত বাদশার উপস্থিতি ছিল সরব। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রোসকোর্স ময়দানের সেই ঐতিহাসিক জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধুকে কর্ডন করে যেসব ছাত্রনেতা মঞ্চে ছিলেন তাদেরই একজন ছিলেন আমিনুল হক বাদশা। জাতির জনকের স্নেহভাজন স্বাধীনতাপূর্ব কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এই সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বঙ্গবন্ধুর প্রেস সেক্রেটারিই শুধু নয়, একান্ত আপনজন হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
বিডি-প্রতিদিন/১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫/ এস আহমেদ