১৯৯৫ সালে বসনিয়ায় নিরস্ত্র ৮ সহস্রাধিক মুসলমানসহ কয়েক লাখ নিরীহ মানুষ হত্যার সঙ্গে জড়িত দেড় শতাধিক বসনিয়ানকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করা হচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগ থাকায় যুক্তরাষ্ট্র বিচার বিভাগের নির্দেশে ইমিগ্রেশন দফতর এ পন্থা অবলম্বন করছে বলে ২৮ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্ক টাইমসের সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে। এরপরই যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশি যুদ্ধাপরাধীদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবিটি আরও জোরালো হয়েছে।
সংবাদে বলা হয়েছে, প্রায় ৩০০ বসনিয়ানকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যারা নির্বিচারে মুসলমানদের হত্যা ও বর্বরোচিত আচরণের সাথে জড়িত ছিল এবং ঐ তথ্য গোপন করে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন এন্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের কর্মকর্তা মাইকেল ম্যাককুইন বলেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সাবেক যুগোস্লাভিয়ায় মুক্তিকামী মুসলিম সম্প্রদায়সহ ছোট ছোট জাতি-গোষ্ঠির লোকজনের ওপর বসনিয়ানদের আক্রমণ ও নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞের ঘটনাগুলো আজও মানব-সভ্যতাকে বিমর্ষ করে। ওই হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে জড়িতদের যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিহিত করে বসনিয়ায় বিচার শুরু হয়েছে। বসনিয়ার সরকার সমগ্র বিশ্ব মানবতার কাছে আকুল আবেদন জানানোর পরই যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ অপরাধী বসনিয়ানদের হদিস উদঘাটনের উদ্যোগ নেয়।
যুক্তরাষ্ট্র ইমিগ্রেশন বিভাগের ধারণা, লাখখানেক বসনিয়ান ১৯৯৫ সাল এবং তার পরের বছর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছেন।
বসনিয়ান অপরাধীদের গ্রেফতার করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিস্কার করা গেলে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধী হিসেবে দণ্ডপ্রাপ্ত আশরাফুজ্জামান খান এবং সাবেক এমপি আব্দুল জব্বারকে বহিষ্কারে এত গড়িমসি কেন-এ প্রশ্ন প্রবাসীদের।
যুক্তরাষ্ট্র মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহবায়ক ড. বাতেন, যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ড. নূরন্নবী এবং সেক্রেটারী শিতাংশু গুহ, যুক্তরাষ্ট্র মুক্তিযোদ্ধা যুবকমান্ডের সভাপতি জাকারিয়া চৌধুরী এবং সেক্রেটারী শাহীন ইবনে দিলওয়ার এনআরবি নিউজকে বলেছেন, যেভাবে বসনিয়ার যুদ্ধাপরাধীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করে বসনিয়ার আদালতে সোপর্দ করা হচ্ছে, ঠিক একইভাবে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ আদালতে দোষী সাব্যস্ত আলবদর আশরাফুজ্জামান খান এবং আব্দুল জব্বারসহ পলাতক যুদ্ধাপরাধীদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া উচিত।
এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন নেতৃবৃন্দ।
প্রসঙ্গত, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতা শাহরিয়ার কবীর ইতোপূর্বে ওয়াশিংটন ডিসিতে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে মিলিত হয়েছেন এ দাবি নিয়ে। ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস এ নিয়ে আরও সক্রিয় হলে দন্ডপ্রাপ্ত এসব ঘাতকদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে নেওয়া সহজ হবে বলে কম্যুনিটির সুধীজনরা মনে করছেন।
বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, নিউইয়র্ক, লসএঞ্জেলেস, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, টেক্সাস, নিউজার্সী, ম্যাসেচুসেটস, পেনসিলভেনিয়া, মিশিগান এবং ওয়াশিংটন মেট্রো এলাকায় শতাধিক বাংলাদেশি রয়েছে যারা একাত্তরে আলবদর বাহিনীর সদস্য ছিল। এদের প্রায় সকলেই সাম্প্রতিক সময়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন তৎপরতায় জড়িয়ে পড়েছে। তারা বিভিন্ন নামে গজিয়ে উঠা সংগঠনের ব্যানারে মানববন্ধন এবং সেমিনার করছে। হোয়াইট হাউজ, জাতিসংঘ, স্টেট ডিপার্টমেন্টের সামনের কর্মসূচিতেও এদের দেখা গেছে। এছাড়া, একাত্তরের আল বদর বাহিনীর কয়েকজন বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ার মত সংবাদ রচনা এবং তা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশের একটি সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দিচ্ছে বলে গুঞ্জন রয়েছে কম্যুনিটিতে।
বিডি-প্রতিদিন/০১ মার্চ ২০১৫/ এস আহমেদ