ইলিশের পর মরিচ। এবার পেঁয়াজের দাম বাড়লো। মূল্য বৃদ্ধির এমন যাঁতাকলে দিশেহারা সাধারণ ক্রেতা তথা প্রবাসীরা। একবার বাড়লে তা আর কমে না। মূল্যবৃদ্ধির জন্য সরকারকে দায়ি করে কোনো শ্লোগান উঠে না। এমনকি ব্যবসায়ীদের সাথে এ নিয়ে দেন-দরবার করার সংবাদও পাওয়া যায় না। মূল্যবৃদ্ধির সপক্ষে বিক্রেতারা যে যুক্তি প্রদর্শন করেন সেটি নিয়েই সন্তুষ্ট ক্রেতারা। তারা খতিয়ে দেখারও প্রয়োজনবোধ করেন না।
ঈদের আগে হঠাৎ করেই পেঁয়াজের দাম বাড়লো বাংলাদেশী গ্রোসারীসমূহে। এক লাফে ৩ গুণ। বাংলাদেশে ঈদ উপলক্ষে যে পরিস্থিতি, ঠিক একই অবস্থা। দোকানীরা বললেন, সরবরাহ কম। আমদানীকারকরা গ্রোসারীর চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ দিতে পারছেন না বলেই মূল্য বৃদ্ধি। ঈদের পর ১৫ দিন অতিবাহিত হলো। পেঁয়াজের মূল্য সামান্য কমেছে। তবে এখনও দ্বিগুণ। ব্যবসায়ীরা একই জবাব দিচ্ছেন-সরবরাহ কম। যদিও সবগুলো গ্রোসারীতেই পেঁয়াজের অস্তিত্ব রয়েছে যথাযথভাবেই।
মাস কয়েক আগে হঠাৎ করেই বাজার থেকে কাঁচা মরিচ উধাও হয়ে গেল। প্রবাসীরা হতাশ। কাঁচা মরিচ ছাড়া স্বাদের রান্না-বান্না হবে কী করে? বিশেষ করে ভর্তা, ভাজি। কাঁচা মরিচ ছাড়া এগুলো অসম্ভব? সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই বাজারে মরিচের অস্তিত্ব আবিষ্কৃত হলো। তবে তা ভিন্ন চেহারায় এবং ঝাল কম। দাম ৫ গুণ। এমন মরিচে আসল মরিচের স্বাদ ভুলে থাকতে চান গৃহিণীরা। ২/৩ সপ্তাহ পর আসল মরিচের মতোই মরিচ এলো বাজারে। দাম কমলো না। এখনও তা গড়ে প্রতি পাউন্ড ১০ ডলার। ক্রমে সব দোকানেই একই কাঁচা মরিচের আমদানি হচ্ছে। দাম কমার কোন লক্ষণ নেই। ব্যবসায়ীরা যুক্তি দেখাচ্ছেন যে, ঝাল বেশি এমন কাঁচা মরিচ আসতো ডমিনিকান রিপাবলিক থেকে। সেই মরিচের প্যাকেটে বেআইনী দ্রব্যের হদিস উদঘাটিত হওয়ায় এফডিএ(ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন) প্রথম দিকে কাঁচা মরিচের আমদানীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। মাস খানেক পর কাঁচা মরিচের প্রতিটি প্যাকেট যাচাই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ কারণে আমদানী কমেছে। কারণ, সীমান্তে যাচাইয়ের প্রক্রিয়ায় অনেক সময় লাগে। এ অবস্থায় মরিচ নষ্ট হয়ে যায়। ব্যবসায়ীরা আরও বলেন, এখন মেক্সিকো থেকেও কাঁচা মরিচের চালান আসছে। তবে তাদেরকেও একই প্রক্রিয়ায় ছাড়পত্র নিতে হচ্ছে। এজন্য যে ক্ষতি হচ্ছে তা পুষিয়ে নিতে সরবরাহকারিরা মরিচের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
বছর দশেক আগে বাংলাদেশের ইলিশ মাছের দাম ছিল প্রতি পাউন্ড সর্বোচ্চ ৪ ডলার। এখন ছোট-বড় সাইজ অনুযায়ী মূল্য নেয়া হচ্ছে। একটু বড় হলেই প্রতি পাউন্ডের দাম ১১ ডলার করে। মাঝারি আকারের প্রতি পাউন্ডের দাম ৯ ডলার। অন্যান্য মাছের মূল্য অবশ্য একই রকম রয়েছে। ইলিশ মাছের প্রতি বাঙালির বিশেষ দুর্বলতা রয়েছে বলে এখন পর্যন্ত কেউ কোন উচ্চবাচ্য করেন নি। তবে ভেতরে ভেতরে ক্রেতারা ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীগণের ওপর। কারণ, দশ বছরের ব্যবধানে সবকিছুর মূল্য বাড়লেও বেতন-ভাতা বাড়েনি। এমনকি, কম্যুনিটিভিত্তিক কর্মস্থলে যে বেতন দেয়া হচ্ছে তা দিয়ে বাড়ি ভাড়া, টেলিফোন-ক্যাবল, ইন্টারনেট, গ্যাস, পানির বিল পরিশোধেই অনেকে হিমশিম খাচ্ছেন। এ কারণে, খাদ্য-সামগ্রী ক্রয়ে অনেককে হিসাব করতে হচ্ছে অর্থাৎ প্রচন্ড ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পছন্দের আইটেম ক্রয় করতে সক্ষম হচ্ছেন না। এর ফলে গ্রোসারীওয়ালারাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অনেক কম বিক্রি হচ্ছে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী জিনিসপত্র।
পেঁয়াজের আকস্মিক মুল্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে নিউইয়র্ক সিটির ব্রুকলীনের চার্চ-ম্যাকডোনাল্ডে সূচনা গ্রোসারীর মালিক মোহাম্মদ আলমগীর এবং গ্রীণহাউজ দেশী সুপার মার্কেটের ম্যানেজার মাইনুদ্দিন পৃথক পৃথকভাবে এ সংবাদদাতাকে বলেন, পেঁয়াজের আমদানীকারকরা বলেছেন যে, আমদানী মূল্য বেড়েছে। চাহিদা অনুযায়ী পেঁয়াজ আসছে না।’ এই দুই ব্যবসায়ী-ব্যবস্থাপক আরও বলেন, ‘একইভাবে, আমরাও পাচ্ছি না ঠিকমত। সরবরাহকারির ইচ্ছার ওপর আমাদের নির্ভর করতে হচ্ছে। এভাবে আমরা পেঁয়াজের চায়নিজ ব্যবসায়ীর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছি।’
ব্রুকলীনের ব্যবসায়ী এবং বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির সেক্রেটারি জাহিদ মিন্টু বলেন, ‘আমি মনে করছি যে, পেঁয়াজের মূল্য শীঘ্রই কমবে। মরিচের মত অবস্থা হবে না। ইলিশের মূল্য বাড়িয়েছেন আমদানীকারকরা, আমাদের কিছুই করার নেই।’
বিডি-প্রতিদিন/০২ আগস্ট, ২০১৫/মাহবুব