চোখ ভিজে ওঠে ড. হালিমা আলমের! মাথা নিচু করে চোখের পানি আড়ালের ব্যর্থ চেষ্টা। তারপর কাঁপা কণ্ঠে বলতে থাকেন জাতির জনকের সঙ্গে কাটানো স্মৃতিকথা। জিল্লুর হকও মাথা নিচু করে বসে থাকেন কিছুসময় নীরবে! মুক্তিযুদ্ধে রণাঙ্গনে নিজের জীবন বাজি রেখে ঝাপিয়ে পড়ার দিনগুলোতে তিনি কাঁদেননি। কেঁদেছেন বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর। লন্ডনে নির্মিত বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে স্মৃতিচারণ নিয়ে তথ্যচিত্র ‘বিজয়ের মহানায়ক‘ দেখে এভাবেই আপ্লুত হন তারা।
সাংবাদিক সৈয়দ আনাস পাশার গবেষণা, চিত্রনাট্য ও সমন্বয়ে এবং লন্ডন প্রবাসী বিশিষ্ট চিত্রনির্মাতা মঈনুল হোসেন মুকুলের পরিচালনায় এই প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণ করা হয়েছে। সোমবার পূর্ব লন্ডনে ‘বাঙালির ঘরে ঘরে বঙ্গবন্ধু’ শ্লোগান সামনে রেখে ‘জয়বাংলা’ অনলাইন টিভি নিবেদিত ‘বিজয়ের মহানায়ক’ প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়। আনুষ্ঠানিক প্রদর্শনীতে এসে সুধীজনরা বলেন, এই প্রামাণ্যচিত্রটিতে সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়ে ওঠা এক বাঙালির গল্প হিসেবেই গ্রহণ করবেন দর্শকরা।
অনুষ্ঠানে প্রামাণ্যচিত্রটিতে স্মৃতিচারণকারী বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যধন্য ১০ ব্যক্তিকে ‘বিজয়ের মহানায়ক’ এর একটি করে ডিভিডি কপি, ফুল ও থ্যাঙ্কস কার্ড দেওয়া হয়। বাংলাদেশ হাইকমিশনের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন মিনিস্টার (প্রেস), সাংবাদিক ও শহীদ সন্তান নাদিম কাদির। সম্মাননা প্রদান, ফিল্ম প্রদর্শনী ও বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত গান পরিবেশন নিয়ে তিন পর্বে বিভক্ত এই অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিলেন বঙ্গবন্ধুকে দেখেছেন, সংস্পর্শ পেয়েছেন, তার নেতৃত্বে পরিচালিত আন্দোলনের অংশ ছিলেন এমন ৭ জন ব্যক্তি। ডকুমেন্টারির পরিচালক মঈনুল হোসেন মুকুল, সমন্বয়ক সাংবাদিক সৈয়দ আনাস পাশা ও জয়বাংলা অনলাইন টিভি’র কর্ণধার প্রযোজক সালিমা শারমিন হোসেইন একে একে বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যধন্য এই ৭ সৌভাগ্যবানের হাতে প্রামাণ্যচিত্রের ডিভিডি কপি, থ্যাঙ্কস কার্ড ও একটি করে ফুল তুলে দেন। এরা হলেন: মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সুলতান শরীফ, আলহাজ জিল্লুর হক, মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক আবু মুসা হাসান, রাজনীতিক এম এ গণি, বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রী সোহরাব হোসেনের সন্তান বিশিষ্ট শল্য চিকিৎসক ডা. রাকিবুল আনোয়ার অরুণ, প্রবীণ সমাজকর্মী ও চিকিৎসক বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য ডাক্তার হালিমা আলম ও শহীদ কর্নেল আব্দুল কাদিরের সন্তান হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার নাদিম কাদির।
তথ্যচিত্র নির্মাতা মঈনুল হোসেন মুকুল বলেন, ব্রিটেনের প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর যে নিবিড় সম্পর্ক ছিল সেটা তুলে ধরার একটা ছোট চেষ্টা থেকে এই কাজটি করা। প্রামাণ্যচিত্রটি ১৫ আগস্ট ব্রিটেনের প্রথম বাংলা টেলিভিশন বাংলা টিভি, আমেরিকা থেকে সম্প্রচারিত টিবিএন২৪ টেলিভিশনে দেখানো হয়েছে। এছাড়া আগামী সপ্তাহে এটি বাংলাদেশে এটিএন বাংলায় দেখানো হবে।
প্রামাণ্যচিত্রে স্মৃতিচারণকারী প্রবীণ কমিউনিটি নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক নুরুল ইসলাম, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির এবং বিশিষ্ট সাংবাদিক, সাহিত্যিক আবদুল গাফফার চৌধুরীর পক্ষে সম্মাননা গ্রহণ করেন যথাক্রমে রাজনীতিক হরমুজ আলী, নির্মুল কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা আনসার আহমেদ উল্লা ও গাফফার চৌধুরীর স্নেহধন্য যুবনেতা জামাল খান।
হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার নাদিম কাদির বলেন, বঙ্গবন্ধু এমন এক ব্যক্তি, যাকে কোন প্যারামিটার দিয়ে মাপা যায় না। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের স্বার্থেই তাকে নিয়ে আমাদের কাজ করা উচিত, যা আমরা করতে পারিনি। বাংলাদেশ হাইকমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি কবির হোসেন বলেন, ৫৩ মিনিটের এই প্রামাণ্যচিত্র বঙ্গবন্ধুর পুরো রাজনৈতিক জীবনের একটি খণ্ডচিত্র।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পরিবেশিত হয় বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত কয়েকটি গান। ব্রিটেনের জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী গৌরী চৌধুরী ও ফজলুল বারী বাবু, সৈয়দ নিশাত মনসুর এবং শিশুশিল্পী নাহিয়ান পাশা ও রাফা হক এতে অংশ নেন। তবলায় ছিলো আরেক শিশু শিল্পী সৌমেন।
বিডি-প্রতিদিন/ ১৭ আগস্ট, ২০১৫/ রশিদা