ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির কঠোর সমালোচনা এবং অবিলম্বে প্রকাশ্য বিবৃতির মাধ্যমে অভিবাসীদের সুরক্ষায় সম্ভাব্য সবকিছু করার ঘোষণা দাবিতে গতকাল রবিবার নিউইয়র্ক, লসএঞ্জেলেস, সানফ্রান্সিসকো, ফিলাডেলফিয়া, শিকাগো, নিউ হ্যাভেন, পোর্টল্যান্ডসহ বিভিন্ন সিটিতে তুমুল বিক্ষোভ হয়। সবচেয়ে বেশি সমাবেশ-র্যালি হয়েছে নিউইয়র্ক সিটিতে।
অভিবাসীদের অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে লড়াইরত বিভিন্ন সংগঠনের এ কর্মসূচি ছিল ট্রাম্পের ‘অ-আমেরিকান নীতি’র বিরুদ্ধে লাগাতার বিক্ষোভের পঞ্চম দিবস। হাজার হাজার নারী-পুরুষের কণ্ঠে স্লোগান ছিল ‘ঘৃণা কখনোই আমাদের মহান করবে না’, ‘আমরা এখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্যেই এসেছি’, ‘অবৈধ অভিবাসীরা কখনোই অপরাধী নন’, ‘আমেরিকা গড়ে উঠেছে অভিবাসীদেরই রক্ত-ঘামে’, ‘অবৈধ অভিবাসীদের স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ চাই’, ‘নো হেইট, নো র্যাসিজম, নো ফ্যাসিজম’, ‘ট্রাম্প ইজ নট মাই প্রেসিডেন্ট’, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সরে যেতেই হবে’, ‘এটাই হচ্ছে গণতন্ত্রের সৌন্দর্য’, ‘ট্রাম্পের ঘৃণাকেই ভালোবাসি’ ইত্যাদি।
কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা তীব্র ক্ষোভের সাথে ট্রাম্পের অভিবাসন বিরোধী মন্তব্য/মতামতের সমালোচনা করে বলেন, ‘এমন মানুষ আমাদের প্রেসিডেন্ট হতে পারেন না। এমন কথাবার্তা যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যবোধের সাথে মানায় না।’
মেক্সিকো থেকে মা-বাবার সাথে শিশু অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর বর্তমানে কলেজে অধ্যয়নরত ক্লাউডিয়া জামোরা বলেন, ‘আমার মা-বাবার বৈধ কাগজ না থাকা সত্ত্বেও নিয়মিত ট্যাক্স প্রদান করছেন। অপরদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্প বিলিয়নিয়ার হয়েও ১৬ বছর কোন ট্যাক্স দেননি। এমন মানুষের মুখে অভিবাসন বিরোধী মন্তব্য মানায় না। ট্যাক্স ফাঁকির জন্যে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা হওয়া উচিত।’
মিড টাউন মানহাটানে ট্রাম্পের বাসা এবং ট্রাম্প হোটেলে হামলার আশংকায় আগে থেকেই পুলিশসহ নিরাপত্তা বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের শতশত অফিসার জড়ো হন। বালির বস্তা দিয়ে বেরিকেড রচনা করা হয় ট্রাম্প টাওয়ারের সামনে। যদিও কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। শান্তিপূর্ণভাবেই বিক্ষোভকারীরা তাদের কর্মসূচি পালন করেছেন।
বিক্ষোভকারীদের অনেকেই বলেছেন, ট্রাম্পের অপ্রত্যাশিত বিজয়ের পর অনেক স্থানে মুসলমানের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। হিসপ্যানিক, কৃষ্ণাঙ্গ এবং সমকামীরাও আক্রান্ত হয়েছেন। এভাবেই রিপাবলিকানরা সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে, যার পরিণতি ভয়ংকর হতে পারে। সমাবেশ থেকে সকল নাগরিকের নিরাপত্তায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
পপুলার ভোট বেশি পেয়েছেন হিলারি ক্লিনটন। এরপরও ইলেক্টরাল ভোটে ট্রাম্প বিজয়ী হওয়ার পর থেকেই লাগাতার বিক্ষোভ চলছে সারা আমেরিকায়। বিক্ষোভকারীরা ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে মানতে চাচ্ছেন না-এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সিবিএস টিভির ‘সিক্সটি মিনিটস’ শো-তে প্রদত্ত সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি খুবই আশ্চর্য এসব শুনে। কারণ আমি চেষ্টা করছি এদেশকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্যে।’ রবিবার রাতে প্রচারিত ওই সাক্ষাৎকারেও ট্রাম্প এহেন বর্ণ ও ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক হামলার সাথে জড়িত সকলের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘এবং আমি বলছি, বন্ধ করুন এসব। ক্যামেরার সামনেই সকলকে বলছি, এক্ষুণি বন্ধ করুন।’
অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেফতার এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের ব্যাপারে আাগের অবস্থান থেকে বেশ কিছুটা সরে এসে ট্রাম্প এ সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘অবৈধভাবে বসবাসরতদের মধ্যে যারা গুরুতর অপরাধে লিপ্ত রয়েছেন, তাদেরকেই বহিষ্কার করা হবে। এ সংখ্যা সর্বোচ্চ ৩০ লাখ হতে পারে।’
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসরত বিদেশিদের সংখ্যা এক কোটি ২৫ লাখের মত। অর্থাৎ যারা শুধুমাত্র অভিবাসনের আইন লঙ্ঘন করে বসবাস করছেন, তাদের আতঙ্কিত হবার কিছু নেই। যদিও অনেক মিডিয়া প্রচার করে চলেছে যে, অবৈধভাবে বসবাসরতদের ঢালাওভাবে গ্রেফতার ও বহিষ্কার করবে ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের পরই। এ ধরনের প্রচারণায় কান না দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন রিপাবলিকান পার্টির নীতি-নির্ধারকরা।
বিডি-প্রতিদিন/ ১৪ নভেম্বর, ২০১৬/ আফরোজ