বাংলাদেশি সেলসগার্লের সাহসিকতায় রক্ষা পেল আমেরিকার নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসের ৭৪ নম্বর স্ট্রিটে কুনাল জুয়েলারি স্টোর। পুলিশ আসছে টের পেয়েই পালিয়ে যায় সশস্ত্র ডাকাতের দল। যদিও ডাকাত দল কোনো মালামাল লুট করেছিলেন কিনা এখনও স্পষ্ট হওয়া যায়নি। এ ঘটনায় পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করছেন এলাকার ব্যবসায়ী-নেতারা।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় জুয়েলারি স্টোরটি বন্ধের সময় ২ ডাকাত ঢুকে অস্ত্রের মুখে নগদ অর্থসহ স্বর্ণের ক্যাবিনেটের চাবি চায়। বাংলাদেশি সেলসগার্ল ভয় পেয়েছেন ভাব দেখিয়ে দৌড়ে স্টোরের ভেতরে ঢুকেন এবং সাইরেন এলার্ম বাজান। এরপরই পুুলিশ আসছে বুঝতে পেরেই বাইরে থাকা ডাকাতদের সহযোগীরা ইশারা দেয়া মাত্রই দৌড়ে পালিয়ে যায় ডাকাতরা।
মিনিট খানেকের মধ্যেই দলে দলে পুলিশ আসে ঘটনাস্থলে। ঘিরে ফেলে সারা এলাকা। পুলিশের গাড়ি এসে রাস্তাগুলো বন্ধ করার পাশাপাশি যেখানে যিনি যে অবস্থায় ছিলেন, সেভাবেই থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়। এ অবস্থায় নানা গুজব ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ডাকাতের গুলিতে বাংলাদেশি সেলসগার্লসহ ভারতীয় মালিক নিহত হয়েছেন। এরপর পুলিশের অভিযানে ডাকাতেরাও ভূপাতিত হয়েছে ইত্যাদি গুজব সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ায় প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ে।
কারণ, ওই জুয়েলারি স্টোরসহ আশাপাশের সকল স্টোরের কর্মচারির ৯৮ শতাংশ হলেন বাংলাদেশি। এছাড়া, শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকও বাংলাদেশিরা। পুলিশের তৎপরতা চলে দেড় ঘণ্টার মত। অঝোর ধারায় বৃষ্টি ঝরছিল। তার মধ্যেই উদ্বিগ্ন আত্মীয়-স্বজন পরিচিতজনেরা পুলিশ বেষ্টনীর বাইরে অপেক্ষা করেন। রাত সাড়ে ৮টায় পুলিশের বেরিকেড উঠিয়ে নেয়ার পর পরিস্থিতি ক্রমে শান্ত হয়। পুলিশ আসার আগেই ডাকাতেরা পলায়ন করায় কোন ধরনের হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এমনকি ডাকাতেরা আদৌ কিছু নিয়ে গেছে কিনা তা নিশ্চিত করতে পারেনি অভিযান পরিচালনাকারী পুলিশের দল। কারণ, ডাকাতের হানা দেয়ার দৃশ্য দেখে স্টোরের মালিক অসুস্থ হয়ে পড়েন। মোট ৬ বাংলাদেশি নারী ওই স্টোরে কাজ করলেও বন্ধের সময় ছিলেন মাত্র দু’জন। তারা সুস্থ রয়েছেন বলে জানা গেছে।
সাইরেন এলার্ম বাজানোর মিনিট দুয়েকের মধ্যেই টহল পুলিশেরা এলাকা ঘিরে ফেলায় ডাকাতিসহ হতাহত এড়ানো সম্ভব হয় বলে মনে করছেন এলাকার ব্যবসায়ীরা। জ্যাকসন হাইটসের সবচেয়ে পুরনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মান্নান সুপার মার্কেটের মালিক সাঈদ রহমান মান্নান এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘পুলিশি তৎপরতা আরোও বাড়াতে হবে। জ্যাকসন হাইটসকে এখন অনেকেই ডায়মন্ড ডিস্ট্রিক্ট হিসেবে মনে করছেন। তাই নিরাপত্তায়ও মনোযোগী হতে হবে সিটি প্রশাসনকে।’
জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশি বিজনেস এসোসিয়েশনের সভাপতি জাকারিয়া মাসুযদ জিকো বলেন, এমন শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি সকলকেই ভীত সন্ত্রস্ত করে তোলে। তবে পুলিশের ভূমিকা অবশ্যই প্রশংসাযোগ্য। আশা করছি, এ এলাকার ব্যবসায়ী ও ক্রেতা সাধারণের নিরাপত্তায় পুলিশসহ সকল বাহিনী আরও সজাগ থাকবে।
বিডি-প্রতিদিন/৩০ নভেম্বর, ২০১৬/মাহবুব