মরুভূমির বালির গরমের সাথে অধিক তাপমাত্রার মাঝে যেখানে প্রাণি বেঁচে থাকা দুষ্কর, সেখানে মাছের চাষ তো একেবারেই অকল্পনীয়। আরব সাগরের নোনা পানির সয়লাবে মিষ্টি পানি দুর্লভ। তবুও সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে মাছ চাষ শুরু করেছেন বাংলাদেশি শহীদুল্লাহ। সেই চাষের পুকুরের জায়গার পরিমাণ ৮০ হেক্টর। ৩২০টি কৃত্রিম পুকুর (পানির ট্যাংকির মতো দেখতে) আর ২৫টি পুকুর নিয়ে গড়ে তুলেছেন মাছের রাজ্য।
তিন মাস পোনা উৎপাদন আর বাকি নয় মাস মাছ বড় করে বিক্রি করেন 'আল সাহাব ফিসারিজ'-এর পরিচালক শহীদুল্লাহ। শুধু রিয়াদ নয়, সৌদি আরবের বিভিন্ন শহরে বাজারজাত করা হচ্ছে বাংলাদেশিদের উৎপাদিত এই মাছ।
এই ফিসারিজের এক ফোটা পানিও ফেলা হয় না। দূষিত পানি ড্রেনের মাধ্যমে চলে যাচ্ছে মাঠে যেখানে চাষ করা হয়েছে ঘাস এবং গম। আর ঘাস এবং গম ক্ষেতে দূষিত পানি দেওয়ার কারণে সার দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। এ বছর ১০০ হেক্টর জমিতে গমের চাষ করা হয়েছে।
ইট, বালি আর সিমেন্ট দিয়ে বানানো হয়েছে কৃত্রিম পুকুর। এই পুকুরে অক্সিজেন তৈরির জন্য বসানো হয়েছে ফ্যান। আর এই ফ্যানের ঘূর্ণিতে পানিতে তৈরি হচ্ছে ঢেউ। আর দূষিত পানি বদলের জন্য রাখা হয়েছে ড্রেনেজ ব্যবস্থা। ফ্যানের মাধ্যমে পানিতে ঢেউ হচ্ছে, সেটা ২৪ ঘণ্টা চলে। বন্ধ হয়ে গেলে অক্সিজেনের অভাবে মুহুর্তের মধ্যে সব মাছ মারা যাবে। সেই সঙ্গে কৃত্রিম পুকুরের পানি দ্রুত নষ্ট হয় আর নিয়মিত সেটা পরিবর্তন না করলেও মাছ মারা যাবে। বিদ্যুতের পাশাপাশি সেখানে রাখা হয়েছে জেনারেটর। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতেই চলে ডিম থেকে রেনু উৎপাদনের কাজ। এই কাজটি সম্পূর্ণ করতে লেগে যায় প্রায় ৩ মাস। তিনমাস পর সেই রেনু ছেড়ে দেওয়া হয় নির্ধারিত কিছু পুকুরে।
কয়েকটা পুকুরে কিছুদিন থাকার পর মাছে ঘনত্ব বাড়ানোর জন্য বাড়ানো হয় পুকুরের সংখ্যা। আর এরপর শুরু হয় গ্রোথ বাড়ানোর জন্য মেল-ফিমেল মাছ চিহ্নিতকরণের কাজ। মাছের ওজন ৬০ গ্রাম হওয়ার পর শুরু হয় বিক্রি। পর্যায়ক্রমে ২৬০ গ্রাম ওজন হওয়া পর্যন্ত চলে মাছ বাজারজাতকরণ।
শহীদুল্লাহর বাড়ি কুমিল্লা। তার পরিচালনাধীন আল সাহাব ফিসারিজে কর্মরত আছেন ৭০ জন কর্মচারী। যাদের অধিকাংশই বাংলাদেশি। ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে মালিকের অত্যন্ত আস্থাভাজন হিসেবে ফিসারিজটি পরিচালনা করে আসছেন তিনি।
শহীদুল্লাহর যোগ্যতা আর সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন প্রবাসে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে দিনকে দিন। আল সাবাবে কর্মরত বাংলাদেশিদের কার্যক্রমে খুবই খুশি সৌদি মালিক। আর এই খুশির পুরস্কার হিসেবে মাসিক বেতনের পাশাপাশি শহীদুল্লাহকে দেন লাভের একটি অংশ।
বিডি-প্রতিদিন/ ২১ ডিসেম্বর, ২০১৬/ আফরোজ