গেল বছরের ১৭ নভেম্বর জ্বালানি তেলের কর প্রত্যাহারের দাবিতে শুরু হওয়া 'ইয়েলো ভেস্ট' আন্দোলন কোনোভাবেই থামছে না। এ আন্দোলন এখন পরিণত হয়েছে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ বিরোধী বিক্ষোভে। যত দিন গড়াচ্ছে আরো সহিংস পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে এ বিক্ষোভ।
একাদশ সপ্তাহের মতো সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবারে প্যারিস ও অন্যান্য শহরে ফের বিক্ষোভে নেমেছে 'ইয়েলো ভেস্ট' আন্দোলনকারীরা ।
ফ্রান্সের রাজপথে এ বিক্ষোভ চলাকালে অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে নিরাপত্তা বাহিনী। এতে বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার পাশাপাশি গ্রেফতার হন অন্তত ২২৩ জন আন্দোলনকারী। পরে গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভকারীরা। একই সময় কিছু সংখ্যক বিক্ষোভকারী ঘর-বাড়িসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় ভাংচুর চালায়।
শনিবারের বিক্ষোভ দমনে ফ্রান্স জুড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রায় ৮০ হাজার সদস্যকে মোতায়েন দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে শুধু রাজধানী প্যারিসেই রয়েছে পাঁচ হাজার দাঙ্গা পুলিশ।
ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, পুরো ফ্রান্সে প্রায় ৬৯০০ হাজার মানুষ রাস্তায় নামে। এর আগে দশম সপ্তাহে আন্দোলনে নামে ৮৪০০ বিক্ষোভকারী। শুধুমাত্র রাজধানী প্যারিসেই দাবী আদায়ে বিক্ষোভে নেমে আসে ৪০০০ আন্দোলনকারী। যা গত সপ্তাহে ৭০০০ এর অধিক ছিল।
আন্দোলনের এক পর্যায়ে পুলিশের দিকে পাথর নিক্ষেপ করে আন্দোলনকারীরা। প্লেস দে লা ব্যস্তিলে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরাতে টিয়ার গ্যাস এবং জল কামান ব্যবহার করে। আগের বিক্ষোভের দিনগুলোতে প্যারিসের রাস্তায় সংঘর্ষ, লুটপাট ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটায় এ দিন কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।
ফ্রান্সের মোটরযান আইন অনুযায়ী, বেশি আলো প্রতিফলিত করে এমন এক ধরনের বিশেষ নিরাপত্তামূলক জ্যাকেট গাড়িতে রাখতে হয় চালকদের। এর রঙ সবুজাভ হলুদ (ইয়োলো)। আন্দোলনকারীরা এই জ্যাকেট (ভেস্ট) পরে বিক্ষোভের সূচনা করেছিল বলে আন্দোলনটি পরিচিতি পায় ‘ইয়েলো ভেস্ট’ নামে।
সারাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সব শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ায় পর গত বছরের ১০ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ জ্বালানি তেলের কর বৃদ্ধি বাতিলসহ অবসর ভাতা এবং ওভার টাইমের আয়ের ওপর থেকে কর প্রত্যাহার করে নেন। একইসঙ্গে শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরিও সাত শতাংশ বৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়া হয়।
দীর্ঘদিন ধরে অর্থনৈতিকভাবে উপেক্ষিত ফ্রান্সের মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত জনগণ তাতেও আশ্বস্ত হয়নি। তারা সরাসরি রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারনী প্রক্রিয়ায় কাঠামোগত পরিবর্তন চান। জীবনযাত্রার খরচ বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয়ের প্রতিবাদে এ আন্দোলন চলতে থাকে।
অপরদিকে ফ্রান্সের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আন্দোলনকারীদের প্রতিহত করতে সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে।
বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন