সাপ্তাহিক ছুটির দিন রবিবার সাতসকালে লেবাননের রাজধানী বৈরুতের সাবরা বাজারে হঠাৎ দেখা মেলে লেবাননে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোতালেব সরকারের। তার এমন আগমনে বাংলাদেশিরা অবাক। শুরুতে বাংলাদেশিরা ভেবেছিলেন তিনি হয়তো বাজার করতে এসেছেন। কিন্তু পরে ভুল ভাঙে সবার। রাষ্ট্রদূতকে কাছে পেয়ে আবেগ আপ্লুত বাংলাদেশিরা।
সাবরা বাজার। বৈরুতের অন্যতম এই খোলা বাজারটিকে বলা চলে বাংলাদেশি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য। এখানে আছে প্রবাসী বাংলাদেশি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের নানা পণ্যের ৫০টির মতো দোকান।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে লেবাননের নানা প্রান্ত থেকে সবজি, মাছসহ অন্যান্য কাঁচামাল নিয়ে অস্থায়ী দোকান সাজিয়ে এখানে বসেন ব্যবসায়ীরা। তাই এর খ্যাতি ছড়িয়েছে বাংলা বাজার বা বাংলাদেশিদের বাজার হিসেবে। শনিবার আধা বেলা ও রবিবার পুরো দিন সাপ্তাহিক ছুটিতে জমজমাট থাকে সাবরা বাজার। সাপ্তাহিক ছুটির অবসরে দূরদূরান্ত থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ছুটে আসেন তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে। এসময় ৫-৬ হাজার প্রবাসীর পদচারণায় মূখরিত থাকে পুরো বাজার। বেচা-কেনাই শুধু নয় সাপ্তাহিক সদাইকে ঘিরে বাংলাদেশিদের মিলনমেলায় রূপ নেয় সাবরা। মনে হয় প্রবাসে এক খণ্ড বাংলাদেশ।
রবিবার সাবরা বাজারে আকস্মিক পরিদর্শনে আসেন রাষ্ট্রদূত আবদুল মোতালেব সরকার। তিনি জানান, সাবরা বাজারের সাথে কয়েক হাজার প্রবাসী বাংলাদেশির জীবন ও জীবিকা জড়িত। লেবাননের বর্তমান সংকটময় সময়ে তাদের অবস্থা দেখতে এবং তাদের সুবিধা-অসুবিধার কথা শোনার জন্য এখানে এসেছি।
এ সময় রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ছিলেন প্রথম সচিব (শ্রম) আব্দুল্লাহ আল মামুন, তৃতীয় সচিব আব্দুল্লাহ আল সাফিসহ বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তরা।
রাষ্ট্রদূত নিজ দেশের নাগরিকদের খোঁজখবর নিবেন এটাই স্বাভাবিক। তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রমটা হল এই প্রথম লেবাননে বাংলাদেশি কোনো রাষ্ট্রদূত সাবরা বাজার পরিদর্শন করেন এবং প্রবাসীদের খোঁজ-খবর নেন। আর এই কারণেই রাষ্ট্রদূতকে সামনে পেয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিরা হয়ে পড়েন আবেগ আপ্লুত।
রাষ্ট্রদূত আবদুল মোতালেব সরকার পুরো বাজার ঘুরে দেখেন। এসময় তিনি প্রবাসীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন । তিনি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং বাজার করতে আসা প্রবাসী বাংলাদেশিদের সাথে কথা বলেন এবং তাদের অভাব অভিযোগগুলো শুনেন।
ব্যবসায়ীদের কয়েকজন রাষ্ট্রদূতকে জানান, সাবরা বাজারের মাঝে মাঝে চলা পুলিশি অভিযানের সময় বাংলাদেশি দোকানীদের নানা দুর্ভোগে পড়তে হয়। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবসা বাণিজ্য করার সুযোগ করে দেওয়ার অনুরোধ জানান তারা। রাষ্ট্রদূত লেবাননের সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করে ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগ নিরসনের চেষ্টা করবেন বলে আশ্বাস দেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ দূতাবাসের বিশেষ কর্মসূচির আওতায় স্বেচ্ছায় দেশে ফিরতে প্রায় আড়াই হাজার অবৈধ প্রবাসী বাংলাদেশি নিবন্ধন করেছিলেন। যার মধ্যে ৫২৭ জনকে দেশে পাঠানো হয়েছে। লেবাননের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা যদি না থাকতো তাহলে আরও আগেই তাদেরকে দেশে পাঠানো সম্ভব হত। একই কারণে বাকিদের প্রক্রিয়া কিছুটা বিলম্বিত হলেও আশা করছি সহসা সুখবর আসবে। আর প্রথম ধাপ শেষ হলেই পরবর্তী ধাপের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে।’
তিনি লেবাননের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতে সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরা করা এবং দেশটির কোনো ধরনের
রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ না নেওয়ার জন্য প্রবাসীদের প্রতি অনুরোধ জানান। নিজ দেশের রাষ্ট্রদূতকে কাছে পেয়ে অনেক প্রবাসী সেলফি আর ফটোসেশনে স্মৃতি ধারণ করার সুযোগ হাত ছাড়া করেননি। রাষ্ট্রদূত আবদুল মোতালেব সরকারও আন্তরিকভাবে তাদের অনুরোধে সাড়া দেন।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন