সজনী গো ভালবেসে এত জ্বালা কেন বলো না, .....চলে যায় যদি কেউ বাঁধন ছিঁড়ে…, আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো গন্ধ বিলিয়ে যাই…, সন্ধ্যারও ছায়া নামে এলোমেলো হাওয়া.. বাংলা সিনেমার কালজয়ী জনপ্রিয় এই গানগুলো এখনো বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে গাঁথা।
ভালোবাসা, আবেগ আর বাস্তব জীবনের দুঃখে কষ্টে ভরা গানগুলো যেন প্রজন্ম-থেকে প্রজন্মের প্রতিটি মানুষের মুখে মুখে। ভাবাবেগ আর হৃদয়আপ্লুত গানগুলোর স্রষ্টা, কাব্যিক গানের অসম্ভব মেধাবী গীতিকার, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র গীতিকার চলচ্চিত্র প্রযোজক মাসুদ করিম-এর ২৪তম মৃত্যুবার্ষিকী।
করোনাভাইরাসের কারণে এ বছর অনাড়ম্বর কোন অনুষ্ঠান না হলেও কানাডার আলবার্টার স্থানীয় গণমাধ্যম 'প্রবাস বাংলা ভয়েস' এর আয়োজনে ক্যালগেরিতে ভার্চুয়ালি আয়োজন করা হয় মরহুমের স্মৃতিচারণমূলক আলোচনা অনুষ্ঠানের। আহসান রাজীব বুলবুলের সঞ্চালনায় এতে অংশ নেন গীতিকার মাসুদ করিমের সহধর্মিণী এবং তার পরিবারের সদস্যরা।
মাসুদ করিমের স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য দেন তার সহধর্মিণী ও সঙ্গীতশিল্পী দিলারা আলো, মেয়ে ফারজানা আলো কনক, ছেলে মাহবুবুল করিম সোহেল, মেয়ে রওশান জাহান করিম সিনথিয়া, নাতনি ফাতিহা রেজওয়ান প্রেমা।
উল্লেখ্য, ষাটের দশক থেকে ঢাকা শহরে যে শুদ্ধ সংগীতের জগৎ তৈরি হয়েছিল, মাসুদ করিম ছিলেন সে জগতের একজন উল্লেখযোগ্য সদস্য। নিজের সৃজনশীল কর্ম দিয়ে তিনি, নিজেকে নিয়ে গেছেন সংগীতের এক অনন্য উচ্চতায়। জনপ্রিয় এই গীতিকার- রেডিও, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র, আধুনিক, দেশাত্ববোধক, পল্লীগীতি-সহ বাংলা গানের বিভিন্ন শাখায় সহস্রাধিকের মত গান লিখেছেন। তার লেখা ৮০০ গান নিয়ে ‘৮০০ গানের সংকলন : মাসুদ করিম’ নামে একটি গ্রন্থ, প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী দিলারা আলোর সম্পাদনায়, অনন্যা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে।
মাসুদ করিম ১৯৩৬ সালের ২৭ জুন কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার দুর্গাপুর কাজীপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা রেজাউল করিম একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন এবং মা নাহার ছিলেন গৃহিনী।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা এবং সাহিত্যে এমএ পাস করেন। ঢাকা এবং চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রে প্রোগ্রাম অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু হয় তার। কয়েক বছর পর তিনি ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের সেক্রেটারি হিসেবে যোগ দান করেন।
মাসুদ করিম ১৯৬০ সালে, ঢাকা বেতার এবং টেলিভিশনের গীতিকার হিসেবে যোগ দেন। একসময় তিনি চলচ্চিত্রের জন্যও গান রচনা করেন।
বাংলা সিনেমার জন্য তিনি লিখেছেন একের পর এক কালজয়ী গান। প্রায় প্রতিটি গানই জনপ্রিয় হতে থাকে বাংলার মানুষের হৃদয় থেকে হৃদয়ে। তার লেখা গানগুলোর উল্লেখযোগ্য সিনেমা হলো– রূপবান, মধুমিলন, ইয়ে করে বিয়ে, তানসেন, যাদুর বাঁশি, রজনীগন্ধা, মায়া মৃগ, দুই পয়সার আলতা, লালু ভুলু, পুত্রবধূ, ঘরণী, ওয়াদা, অনুরাগ, রাজদুলারী, অগ্নি কন্যা, আওয়ারা, অবদান, টাকার অহংকার, নিয়তি, আকর্ষণ, সাজানো বাগান, সবার উপরে, প্রায়শ্চিত, ভাঙ্গাগড়া, বিসর্জন, মহানায়ক, রামের সুমতি, আগমন, ব্যাথার দান, গরীবের বউ, প্রিয় তুমি, শিল্পী, হৃদয় থেকে হৃদয়, দেনমোহর, এবং সত্যের মৃত্যু নাই' সহ আরো অনেক ছবিতে।
সঙ্গীতে অবদানের জন্য তিনি পেয়েছেন নানা পুরস্কার ও সম্মাননা। এরমধ্যে ‘রজনীগন্ধা’ এবং ‘হৃদয় থেকে হৃদয়’ ছবির জন্য, শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন মাসুদ করিম। এছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন থেকে অনেক সম্মাননা স্মারক পেয়েছেন।
ব্যক্তিজীবনে মাসুদ করিম ১৯৬৫ সালে দিলারা আলোর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। দিলারা আলো একজন স্বনামধন্য কন্ঠশিল্পী। এই দম্পতির এক ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে। মেয়েরা হলো- কনক, কান্তা, সিনথিয়া আর ছেলে- সোহেল।
বিডি প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন