লস এঞ্জেলেসে লিটল বাংলাদেশ প্রজেক্টে ‘জাতীয় স্মৃতিসৌধ’র ম্যুরাল উদ্বোধন করা হয়েছে ১৫ নভেম্বর। এতে লস এঞ্জেলেসের কন্সাল জেনারেলকে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানালেও তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন এবং অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এ কারণে কমিউনিটিতে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে নিউইয়র্কে বাংলাদেশ প্রতিদিন উত্তর আমেরিকা সংস্করণ অফিস থেকে ফোন করলে কন্সাল জেনারেল তারেক মোহাম্মদ বলেন, 'তিনি বাইরে আছেন, পরে কথা বলবেন।' অবশ্য পরে আর কল করেননি।
প্রবাসে কমিউনিটির মানুষ যেখানে জাতীয়তাবোধের অনুভূতি থেকে লিটল বাংলাদেশ তথা দেশ ও জাতির ইতিহাস এবং কৃষ্টিকে তুলে ধরার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছেন সেখানে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি হয়েও কমিউনিটির সাথে একাত্ম হয়ে সমর্থন প্রদর্শন না করায় প্রবাসীরা ক্ষুব্ধ এবং মনক্ষুন্ন।
ক্ষুব্ধ প্রবাসীরা জানান, এখানে বাঙালিরা বসবাস করে বলেই এই সিটিতে কন্স্যুলেট অফিস স্থাপিত হয়েছে। প্রবাসীদের সুখ-দুঃখে একাকার হয়ে কাজের জন্যেই সরকার কন্সাল জেনারেল নিয়োগ করেছেন। অথচ জাতীয় স্মৃতিসৌধ’র মতে সর্বজনীন একটি ম্যুরালের উদ্বোধনীতে অংশ নিতে কন্সাল জেনারেলের সীমাহীন উদাসীনতা প্রবাসীদের মনে দাগ কেটেছে। করোনার কারণে তিনি উপস্থিত হতে পারবেন না বললেও প্রবাসীরা তা সহজভাবে নিতেন না। কারণ, ইতিপূর্বে কয়েকটি জনসমাগমে তার উপস্থিতি ঘটেছে।
জাতীয় স্মৃতিসৌধ স্থাপনের এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন লিটল বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি ও লিটল বাংলাদেশ বিউটিফিকেশন প্রজেক্টের আহ্বায়ক কাজী মশহুরুল হুদা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক লস্কর আল মামুন।
শুরুতে দুই দেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন কোরিয়ান অপেরা শিল্পী এস্তেহার জিন। উল্লেখ্য, তিনি বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত রপ্ত করে পরিবেশন করেন এবং ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেন। তাকে প্রশিক্ষণ দেন সঙ্গীত শিল্পী ও প্রশিক্ষক শাহনাজ বুলবুল।
লাল ফিতা কেটে ম্যুরালটি উদ্বোধন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর বাবুল ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদ খান।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কমিউনিটি এ্যাক্টিভিস্ট ও বাংলাদেশি আমেরিকান ডেমোক্রেটিক পার্টির সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক বাচ্চু। তিনি কমিউনিটির সকলকে আহ্বান জানান আগামীতে সকল জাতীয় দিবসগুলো এই স্মৃতিসৌধের সামনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে পালন করার জন্য।
বাচ্চু বলেন, জাতীয় দিবস উদযাপন কমিটি গঠন করে আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে এর যাত্রা শুরু হবে। এ সময় ক্যালিফোর্নিয়া আওয়ামী লীগের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট সোহেল রহমান বাদল বলেন, ‘লিটল বাংলাদেশ অর্জনের ১০ বছর পর লিটল বাংলাদেশ বিউটিফিকেশন প্রজেক্টের সৃষ্টিশীলতা দ্বিতীয় অর্জন।’
ক্যালিফোর্নিয়া আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশি-আমেরিকান ডেমোক্রেটিক পার্টির সভাপতি মোহম্মদ শামিম হুসাইন বলেন, জাতীয় স্মৃতিসৌধের ম্যুরাল নতুন প্রজন্ম ও মূলধারার কাছে বাংলাদেশের ইতিহাস তুলে ধরার একটি ক্ষেত্র। এটি দেশাত্মবোধের অনন্য একটি উদাহরণ।
ক্যালিফোর্নিয়া বিএনপি নেতা ফারুক হাওলাদার বলেন, যাদের পরিকল্পনায় এই সৌন্দর্য বিষয়ক প্রজেক্ট গড়ে উঠেছে আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই।
ক্যালিফোর্নিয়া আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক টি জাহান কাজল বলেন, আজকের দিনটি একটি গর্বের দিন, চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে দিনটি।
সবশেষে সংগঠনের সভাপতি কাজী মশহুরুল হুদা সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
প্রসঙ্গত, ‘লিটল বাংলাদেশ’ এলাকায় জাতীয় স্মৃতিসৌধের পাশাপাশি ইতিমধ্যে শহীদ মিনারও নির্মিত হয়েছে। পথের উপর অঙ্কিত হয়েছে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক আলপনা।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা